কাতারের ধর্ম মন্ত্রনালয় থেকে ইমাম ও মুয়াজ্জিন পদে লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গত মাথাপিছু আয়ে কাতার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ। অন্যদিকে ধনী দেশগুলোর মধ্যে কাতারের অবস্থান চতুর্থ।
আর মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ ধনীদেশ হিসেবে সবার শীর্ষে। কাতার বাংলাদেশের দ্বিতীয় শীর্ষ শ্রমবাজার। সরকারি হিসাব মতে, বাংলাদেশ থেকে মোট জনশক্তি রপ্তানির ২২ শতাংশের গন্তব্যস্থল কাতার। প্রতি মাসে কাতার থেকে বাংলাদেশে প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) যোগ হচ্ছে ২৫০ কোটি টাকাও বেশি।
কাতারের নির্মাণ খাতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা বেশ। পাশাপাশি বাংলাদেশি ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খতিবেরও রয়েছে বিপুল চাহিদা।
প্রায় দুই দশক ধরে রাজধানী দোহাসহ কাতারের বিভিন্ন শহরের মসজিদে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশিরা। বলা চলে, কাতারের মুয়াজ্জিন ও ইমামদের অধিকাংশই বাংলাদেশি।
বাংলাদেশ থেকে সর্বপ্রথম ১৯৯০ সালে সরকারিভাবে ইমাম-মুয়াজ্জিন নেওয়া শুরু করে কাতার। ২০১৭ সালে নিয়োগের পর ২০১৯ সালেও বাংলাদেশি ইমাম-মুয়াজ্জিন নিয়োগ দিয়েছে দেশটি। এবারও শতাধিক ইমাম-মুয়াজ্জিন নেবে বিশ্বের অন্যতম সুশৃঙ্খল এই দেশ।
আগ্রহী প্রার্থীদের নিম্নের শর্তাবলি পূরণ করে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদন করার নিয়মাবলি ও যেসকল ডকুমেন্ট লাগবে—
আবেদন করতে যা কিছু লাগবে
১.পাসপোর্ট এর কপি ( মেয়াদ নূন্যতম ৬ মাস থাকতে হবে)
২. সম্পূর্ণ কোরআনে হাফেজ হওয়ার সার্টিফিকেট প্রদর্শন করতে হবে ।
৩. সর্বশেষ পড়াশোনার যোগ্যতা, সকল বিষয়ের সার্টিফিকেট।
৪. এক কপি কালার ছবি ও আরবিতে জীবন বৃত্তান্ত ই-মেইল অ্যাড্রেসও দিতে হবে।
৫. MP3 ফরম্যাটে ২/৩ মিনিটের তিলাওয়াত রেকর্ড করে সাবমিট করতে হবে।
৬. কাতারি মোবাইল নম্বর। (কাতারে অবস্থানরত পরিচিত কারও নম্বর দিলেই হবে।)
৭. আবেদন করার সময় বয়স ২০ থেকে ৪৫ এর মধ্যে হতে হবে।
৮.সব ধরনের ডকুমেন্ট— বিশেষ করে পাসপোর্ট কপি, স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করে সাবমিট করতে হবে।
৯. অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর, আবেদনকৃত লিংকের (حالة الطلب) মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষার সময় সূচি জানানো হবে।
১০. পরীক্ষা দিতে কাতারে আসা-যাওয়ার যাবতীয় ব্যায়ভার প্রার্থীকেই বহন করতে হবে।
১১. পরীক্ষা সাধারণত মুহাররম ও শাবান মাসের মধ্যে হয় (তবে পরিক্ষা এখনো চলমান।)
পরিক্ষার জন্য নির্ধারিত কিতাব
১. ইমাম ও মুয়াজ্জিনের জন্য সম্পূর্ণ কোরআন৷
২. ফিকহ (منار السبيل في شرح الدليل للضويان) من باب الطهارة الى نهاية باب الحج للإمام ) পবিত্রতার অধ্যায় থেকে হজ্ব অধ্যায়ের শেষ পর্যন্ত ইমামের জন্য এবং মুয়াজ্জিনের জন্য কিতাবুত তাহারাত থেকে জানাজা অধ্যায়ের শেষ পর্যন্ত।
৩. আকাইদ- أعلام السنةالمنشورة কিতাব সম্পূর্ণ।
পরীক্ষা ও নিয়োগ আবেদন
পরীক্ষা দুই পর্বে হবে, লিখিত ও মৌখিক।
১. লিখিত পরিক্ষার এক সপ্তাহ পরে মৌখিক পরীক্ষা হবে।
২. মৌখিক পরিক্ষায় পবিত্র কোরআন থেকে মোট ৫ টি প্রশ্ন থাকবে, প্রতিটি প্রশ্নের উওর এক পৃষ্ঠা করে শোনা হবে পাশাপাশি ফিক্বাহ ও আক্বাইদুল ইসলামিয়া থেকে ও কিছু প্রশ্ন থাকবে।
৩. পরিক্ষায় অকৃতকার্য হলে ৬ মাস পর আরও একবার সুযোগ দেওয়া হবে। (তবে এখন একাধিকবার সুযোগ দিচ্ছে)
ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সুযোগ-সুবিধা
১. বেতন: মুয়াজ্জিনদের জন্য 1043$ = ৩ হাজার ৮০০ কাতারি রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮৯ হাজার ৩০০ টাকা)।
২. আবাসন (তিনটি কক্ষ : হল, তিনটি বাথরুম, রান্নাঘর)।
৩. পানি ও বিদ্যুৎ বিলের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে দেওয়া হবে।
৪.ফ্যামিলি ভিসার ক্ষেত্রে স্ত্রী ও ২ সন্তানের (১৮’র নিচে বয়স হলে) ইক্বামার খরচ সরকার বহন করবে। দুই সন্তানের বেশি-১৮ এর উপরে বয়স হলে মাথাপিছু ৫০০ রিয়াল করে ইক্বামা বাবত পরিশোধ করতে হবে।
৫. কাজে যোগদান করার তিন মাস পর ঋণের জন্য আবেদন করার সুযোগ থাকবে, যার পরিমাণ হবে— মূল বেতনের ৫ গুণ। এটা পরিশোধ করা যাবে চার বছরে। প্রতি মাসে ৫০০ বা ১০০০ রিয়াল করে বেতন থেকে কেটে নেওয়া হবে। কোন লাভ নেওয়া হবে না (তবে আপাতত বন্ধ আছে)।
৫. খুতবা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে বেতন ১০০০ এবং তাহফিজ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ১৫০০ রিয়াল করে বেতন বৃদ্ধি করা হবে।
৬. বেতন সহ বার্ষিক ৪০ দিনের ছুটির টাকা ও দেওয়া হবে।
৭. এককালীন ১০ বছরের পেনশন থাকবে।
৮. সরকারি স্কুলে বাচ্চাদের পড়ানো ফ্রি
উল্লেখ্য যে, ধীরে ধীরে বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।