নিত্যপণ্যে লাভের হার বেঁধে দিল সরকার

দেশের বাজারে নিত্যপণ্যে লাভের হার বেঁধে দিয়েছে সরকার। ধান, চাল, ডাল, ডিম, আটা, ময়দা, পেঁয়াজ, রসুন, সবজিসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে লাভের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারণ করে দেওয়া হারের চেয়ে বেশি মুনাফায় এসব কৃষিপণ্য বিক্রি করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানার বিধান রেখে কৃষি বিপণন বিধিমালা জারি করা হয়েছে। বিধিমালায় বলা হয়েছে, কৃষি উপকরণ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে বা সরকার নির্ধারিত হারের বেশি মুনাফা করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে কৃষি বিপণন আইনে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে সাজা হবে দ্বিগুণ।

কৃষি বিপণন আইন, ২০১৮-এর ক্ষমতাবলে ‘কৃষি বিপণন বিধিমালা, ২০২১’ নামে এই বিধিমালাটি গত ৩ নভেম্বর জারি করে কৃষি মন্ত্রণালয়। বিপণন অধিদপ্তর এতদিন কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিত। আর এখন আইনি কাঠামোর মধ্যে কৃষিপণ্যে মুনাফার সর্বোচ্চ হার বেঁধে দিল তারা। আইনি কাঠামোর মধ্যে ফেলে মুনাফার সর্বোচ্চ হার বেঁধে দেওয়ার ফলে কেউ চাইলেই কোনো কৃষিপণ্যের দাম অতিরিক্ত হারে বাড়াতে পারবেন না বলে মনে করছেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এই বিধিমালা কার্যকর হওয়ায় পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সুপারশপগুলোতেও সরকার নির্ধারিত হারের বেশি মুনাফায় কৃষিপণ্য বিক্রি করা যাবে না বলে বিধিমালায় বলা হয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (নীতি ও পরিকল্পনা) শাহানাজ বেগম নীনা বিধিমালাটির বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, ‘গত ২৬ অক্টোবর এই বিধিমালাটি চূড়ান্ত হয়। আর ৩ নভেম্বর গেজেট হয়।’

বিধিমালা অনুযায়ী, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ ও কাঁচামরিচ উৎপাদক পর্যায়ে ৪০ শতাংশ, পাইকারিতে ২০ শতাংশ ও খুচরায় সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লাভ করা যাবে। আর ধান, চাল, গম, ভুট্টা, ডাল, কালাই, সব ধরনের মাছ, শুকনা মরিচ, ধনিয়া, কালোজিরা, ডিম, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, পান, সুপারিতে উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারিতে ১৫ শতাংশ ও খুচরায় সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ হারে মুনাফা করা যাবে।

একই মুনাফা হার প্রযোজ্য হবে সব ধরনের ভুসি, ডাব, নারিকেল, চিড়া, মুড়ি, সুজি, সেমাই, আটা, ময়দা, কৃষিপণ্যের রস ও জুস, আচার, বেসন, চিপস, পাট, চা, তুলা, তামাক, এবং প্রক্রিয়াজাত পণ্যে। এছাড়া রাই, সরিষা, তিল, তিসি, বাদাম, নারকেল, রেঢ়ি, সূর্যমুখী, সয়াবিনসহ তেলবীজে উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারিতে ১৫ শতাংশ ও খুচরায় সর্বোচ্চ ৩০ এবং আখ ও গুড় বিক্রিতে উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারিতে ১৫ শতাংশ ও খুচরায় ৩০ শতাংশ লাভ করা যাবে।

এছাড়া বিধিমালায় সব ধরনের তাজা ও শুকনা ফল উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারিতে ২০ শতাংশ ও খুচরায় ৩০ শতাংশ আর ক্যাকটাস, অর্কিড, পাতাবাহার এবং আলুসহ সব ধরনের শাকসবজি উৎপাদক পর্যায়ে ৪০ শতাংশ, পাইকারিতে ২৫ শতাংশ ও খুচরায় ৩০ শতাংশ লাভ করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।