নারীদের সুস্থ থাকতে খেতেই হবে যে ১২ ধরনের ভিটামিন

নারীদের সুস্থ থাকতে বিশেষ কিছু ভিটামিন খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এর মধ্যে ১২টি ভিটামিন অবশ্যই তাদের খেতে হবে। জেনে নিন এই ১২টি ভিটামিন সম্পর্কে।

ভিটামিন এ

‘বিটা ক্যারোটিন’ শরীরে পরিবর্তিত হয়ে তৈরি হয় ভিটামিন-এ৷ চোখের দৃষ্টি ঠিক রাখতে, ত্বক ভাল রাখতে ও নরম টিস্যুর উৎপাদনে ভিটামিন এ গুরুত্বপূর্ণ৷ অ্যাপ্রিকট, গাজর, পেয়ারা, কলা, পেঁপে, পিচ, কুমড়ো, লাল লঙ্কা, পালংশাক, টম্যাটোতে থাকে ভিটামিন-এ৷

ভিটামিন সি

ভিটামিন সি-তে থাকে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, যা শরীরের বিভিন্ন ক্ষত, সংক্রমণ সারাতে কাজ করে৷ শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে, স্মৃতিশক্তি ঠিক রাখতে সাহায্য করে, মনঃসংযোগ বৃ‌দ্ধি করে৷ অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিলে বা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিটামিন সি অথবা অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের মাত্রা শরীরে কমে যেতে থাকে৷ ব্রকোলি, আঙুর, কিউই, কমলালেবু, আলু, স্ট্রবেরি ও টম্যাটো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ৷

ভিটামিন ই

ভিটামিন ই নারীদের ক্ষেত্রে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না ৷ সানফ্লাওয়ার অয়েল, মার্জারিন, কর্ন অয়েল, কড লিভার অয়েল, পিনাট বাটার, হ্যাজেলনাট ও গমে ভিটামিন ই থাকে ৷

ভিটামিন কে

বয়স্ক নারীদের হাড় শক্ত রাখতে ও রক্ত জমাট হওয়া আটকাতে ভিটামিন কে ভাল৷ সয়াবিন অয়েল, ব্রকোলি, সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, ফিশ অয়েল ভিটামিন কে সমৃদ্ধ৷

ভিটামিন বি ৬

ভিটামিন বি ৬ কে বলা হয় পেরিডক্সিন৷ নার্ভের কাজ ঠিক রাখতে, শরীরে খাবারকে এনার্জিতে পরিবর্তিত করতে অর্থাৎ মেটাবলিজমের ক্ষেত্রে এই ভিটামিন প্রয়োজনীয়৷ মহিলাদের সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা ঠিক রাখতে, ডিম্বাণু উৎপাদনে কাজ করে এই ভিটামিন৷ তবে বেশি মাত্রায় এই ভিটামিন শরীরে গেলে ক্ষতিও হয়৷ মাছ, আলু, অ্যাভোগাডো, কলা, বিনস, মাংস, ওটমিল, দানাশস্য ভিটামিন বি ৬ সমৃদ্ধ৷

ভিটামিন বি ১২

শরীরের মেটাবলিজম ঠিক রাখার পাশাপাশি, লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে এই ভিটামিন জরুরি৷ চিজ, ডিম, মাছ, মাংস, দুধ ও দই থেকে ভিটামিন B12 পাওয়া যায়৷ অ্যানিমিয়া থাকলে এবং নিরামিষ ডায়েটে অভ্যস্ত হলে শরীরে এই ভিটামিনের অভাব দেখা যায়৷

ভিটামিন বি ১

কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের মেটাবলিজমের ক্ষেত্রে কাজ করে৷ যত বেশি ক্যালোরি শরীরে ঢুকবে এটি বেশি দরকার হয়৷ যারা বেশি অ্যালকোহল পান করেন তাদের বি ১-এর অভাব হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে৷ ভিটামিন বি ১ পাওয়া যায় বিনস, দানাশস্য, যব থেকে ৷

ভিটামিন বি ২

হেলদি ব্লাড সেল তৈরি করতে, এনার্জি বাড়াতে, হজম শক্তি ঠিক রাখতে, চোখ ও ত্বক ভালো রাখতে দরকার ভিটামিন বি ২। দুগ্ধ জাতীয় খাবার, মাংস, ডিম, সবুজ সবজি, বাদাম এই ভিটামিন সমৃদ্ধ ৷

নিয়াসিন

নিয়াসিন হল ভিটামিন বি ৩৷ হার্টের সমস্যা এড়াতে, রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক রাখতে, ধমনীতে রক্ত চলাচল, হজমশক্তি ও নার্ভ ফাংশন ঠিক রাখতে দরকার৷ গাজর, বিনস, সবুজ সবজিতে এই ভিটামিন পাওয়া যায়৷

ভিটামিন ডি

যদিও এটাকে বলা হয় ভিটামিন, কিন্তু এটি কাজ করে হরমোনের মতোই৷ শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের জোগান দিয়ে হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে৷ যখন শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব দেখা যায়, তখন হাড় থেকে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস শরীর নেয়৷ ফলে দেখা যায় হাড় ক্রমশই নরম হতে থাকে৷ যা থেকে হয় অস্টিওপোরোসিস৷ ভিটামিন ডি-এর অভাব মেটাতে খান ডিম, মাছ৷ ভিটামিন ডি-র সবচেয়ে ভালো উৎস রোদ৷ তবে একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর বিশেষ করে মহিলাদের ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খাওয়া অত্যন্ত জরুরি৷

ফোলেট (ফলিক অ্যাসিড)

গর্ভস্থ সন্তানের সুস্থ মস্তিষ্ক ও শিরদাঁড়া তৈরি করতে প্রয়োজন ফলিক অ্যাসিড৷ কোষে ডিএনএ ও আরএএএ তৈরি করতেও সাহায্য করে এবং ডিএনএ-র পরিবর্তন আটকে ক্যানসার প্রতিরোধ করে৷ প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে অ্যানিমিয়া রোধ করে এই ভিটামিন৷ প্রেগন্যান্ট মহিলাদের জন্য ফলিক অ্যাসিড অত্যন্ত জরুরি৷ পালংশাক, সবুজ সবজি, স্ট্রবেরি, রাজমা, কালো বিনস, দানাশস্য, ডিম ও মেটে ফলিক অ্যাসিডযুক্ত৷

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হল সেই সকল উপাদান, যেগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সাহায্য করে৷ অ্যান্টি অক্সিডেন্টের মধ্যে পরে ‘ভিটামিন এ’, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই৷ শরীরের রোগ প্রতিরোধের সঙ্গে বয়স ধরে রাখতে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের ভূমিকা অনবদ্য৷ এ ছাড়া যে কোনও ধরনের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া থেকে শরীরকে বাঁচায় ৷