নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে এক মুঠো কিশমিশ। আদিকাল থেকে শক্তির চমৎকার উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে কিশমিশ। কিশমিশ এক ধরনের শুকনা আঙুর। ইংরেজিতে এর নাম রেইজিন কিন্তু সব কিশমিশ নয়। বিভিন্ন দেশে দেশে এর বিভ্রান্তির কোনো শেষ নেই।
শুষ্ক ফল কিশমিশের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়েছিল হজম সহায়ক, ওজন বৃদ্ধিকারক ও বলকারক খাবার হিসেবে। কিশমিশ এমনই একটি খাবার যা পানি বা তরল পদার্থের সংস্পর্শে এসে ফুলে যায় এবং এতে পানি প্রবেশ করে। এই বিশেষত্বই একে বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় ব্যবহারে সাহায্য করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম কিশমিশে ৩ দশমিক ৭ গ্রাম গলন-অযোগ্য আঁশ বা ইনসলিউবল ফাইবার আছে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর ও হজম করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রচুর গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ আছে কিশমিশে। প্রতি ১০০ গ্রাম কিশমিশ প্রায় আড়াই শ ক্যালরি ধারণ করে। তবে একই কারণে ওজনাধিক্য ও ডায়াবেটিক রোগীদের আবার বেশি কিশমিশ খাওয়া বারণ।
১০০ গ্রাম কিশমিশে যে পরিমাণ লৌহ আছে, তাতে একজন মানুষের দৈনিক চাহিদার ২৩ শতাংশ পূরণ করে। রক্তশূন্যতা দূর করতে এবং গর্ভাবস্থায় তাই কিশমিশ খাওয়া উচিত। এ ছাড়া এতে আছে কেটেচিন ও রেসভেরাট্রল নামের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক। কিশমিশের ২৬ শতাংশ হলো শর্করা, ১৫ শতাংশ আঁশ, আমিষ আছে ৬ শতাংশ ও চর্বি মাত্র ১ শতাংশ। আছে পটাশিয়াম ২১ শতাংশ এবং লৌহ ১০ শতাংশ। এ ছাড়া আছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও কপার। দীর্ঘ রোগভোগের পর শক্তি ও দ্রুত ওজন বাড়াতে কিশমিশের ব্যবহার প্রচলিত। নিউট্রিশন ফ্যাক্ট।
দ্রুত এনার্জি বৃদ্ধি
একটি ছোট বাক্স কিশমিশে ৩৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট রয়েছে, এটি দ্রুত কাজে এনার্জি দিয়ে থাকে। ক্লান্তি বোধ হলে এক মুঠো কিশমিশ খেয়ে ফেলুন আর দেখুন ম্যাজিক।
রক্তস্বল্পতা দূর করে
আমরা সকলেই জানি দেহে আয়রনের অভাবের কারণে রক্তস্বল্পতার সমস্যা শুরু হয়। কিশমিশে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। ১ কাপ কিশমিশে রয়েছে প্রায় ৬ মিলিগ্রাম আয়রন যা আমাদের দেহের প্রায় ১৭% আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে
কিশমিশের পলিফেনিল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। এ ছাড়া এতে আছে ভিটামিন এ, বিটাক্যারটিন ও ক্যারোটিনয়েড। এরা যে চোখের বিশেষ বন্ধু, তা কে না জানে!
দাঁতের সুরক্ষার জন্য
মিষ্টি হলেও দাঁতের সুরক্ষার জন্য অনায়াসে খেতে পারেন। কিশমিশে রয়েছে বিশেষ ধরনের ফাইটোকেমিক্যাল, যা দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এই ফাইটোকেমিক্যাল, যেমন অলিনলিক অ্যাসিড, লিনোলেয়িক অ্যাসিড ও লিনোনেয়িক অ্যাসিড মুখের ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করে দাঁতকে ক্যাভিটি থেকে রক্ষা করে।
কিশমিশ ওজন বৃদ্ধির ক্ষমতা রাখে
ওজন বাড়ানোর জন্য, বেশি করে ক্যালোরি গ্রহণ করতে হবে, কিশমিশে ক্যালরির পরিমাণ বেশি। ১০০ গ্রাম কিশমিশে ২৯৯ ক্যালোরি রয়েছে যা আপনার দৈনিক ক্যালোরি গ্রহণের ১৫%। জার্নাল ফর ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন রিসার্চ -এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, কিসমিসের ব্যবহারও ওজন বাড়ানোর ভালো প্যারামিটার এবং পুষ্টি গ্রহণের সঙ্গে যুক্ত।
ওজন বাড়ানোর জন্য কিশমিশ যেভাবে খাবেন
– প্রাকৃতিকভাবে প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ খাবারে কিশমিশ খাওয়া আপনার ওজন বাড়ানোর কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। ওজন বাড়ানোর জন্য কিশমিশ সেবন করার টিপস এখানে দেওয়া হল।
– আপনি যদি কিশমিশের সমস্ত পুষ্টির সুবিধা নিতে চান তবে সেগুলি এক কাপ পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুধে ভিজিয়ে রাখুন এবং পরের দিন সেবন করুন।
– আপনি চিনিমুক্ত বাদাম মাখন মিশিয়ে কিশমিশ খেতে পারেন।
– বাড়িতে গ্রানোলা তৈরি করুন এবং একটি ভাল পরিমাণ কিশমিশ যোগ করুন। তারপর এই মিশ্রণটি উপভোগ করুন এবং ওজন বাড়ান।
– আপনি কিশমিশকে স্মুদি বা প্রোটিন শেকের সাথে মিশিয়ে সেবন করতে পারেন।
কিশমিশ ঘরে বানানো বেশ সহজ! শুধু বাজার থেকে আঙুর কিনে আনবেন, বোঁটা ছাড়াবেন আর ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকাতে দেবেন। ব্যস! হয়ে গেল। এভাবে টানা এক মাস রোদে শুকালেই তৈরি আপনার সুস্বাদু ও পুষ্টিতে ভরপুর কিশমিশ।