ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে দারুচিনি

দারুচিনি লরেল পরিবারের একটি চিরসবুজ উদ্ভিদ। কাঠের ছাল শুকানোর প্রক্রিয়াতে প্রাপ্ত মশালাকে বোঝাতে একই শব্দ ব্যবহৃত হয়। দারুচিনি গরম মশলার অপরিহার্য পদ। খাবারের সুগন্ধ বাড়াতেও এর জুড়ি মেলা ভার। প্রাচীনকালে বহু ভাইরাস ধ্বংস করে দেওয়ার নজির দেখিয়েছে দারুচিনি। তাই সুগন্ধি এই পদকে শুধু খাবারে ব্যবহার করলেই চলবে না। গবেষকরা বলছেন, করোনার কালবেলাতেও প্রতিষেধক হিসেবে কাজে আসতে পারে দারুচিনি।

সাধারণত দুই ধরনের দারুচিনি পাওয়া যায়। সেইলন দারুচিনি ও চাইনিজ বা ক্যাশিয়া দারুচিনি। সেইলন দারুচিনি চাইনিজ দারুচিনির থেকে অনেক বেশি কার্যকরী। নাম শুনেই বোঝা যায়, সেইলন দারুচিনি শ্রীলঙ্কায় উদ্ভব, আর মূলত দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া অঞ্চলেই পাওয়া যায়।

১ চামচ দারুচিনিতে সাধারণত যা যা পুষ্টিকর উপাদান থাকে সে গুলো হলো- ক্যালরি – ৬.৪২, কার্বোহাইড্রেট – ২.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম – ২৬.১ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম – ১.৫৬ মিলিগ্রাম, ফসফরাস – ১১.২ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম – ১১.২ মিলিগ্রাম।

বিভিন্ন ওষুধসম্বন্ধীয় বৈশিষ্ট্যের জন্যেও দারচিনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ‘সিনামালডিহাইড’ খাবারের গন্ধ ছাড়াও বিভিন্ন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ক্ষেত্রে কার্যকরী হয়ে ওঠে। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে দারুচিনি। এছাড়াও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবেও দারুচিনি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। রক্তের গ্লুকোজ হ্রাস করতে পারে দারুচিনি। এ কারণেই এটি ডায়াবেটিসের চিকিত্সায় ব্যবহৃত হয়।

ডায়াবেটিস হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এজন্য ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

শুধুমাত্র ডায়াবেটিস রোগ নয়, বিভিন্ন পেটের সমস্যার ক্ষেত্রেও দারুচিনি গুরুত্বপূর্ণ। ডায়রিয়ার মোকাবিলা করার জন্যেও দারুচিনি নিয়মিত ব্যবহার করা হয়। আয়ুর্বেদে, দারুচিনির ছাল অনেক সময়ে দাঁতের যন্ত্রণায় বা জয়েন্টের ব্যথার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

দারুচিনি শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আমাদের শারীরিক প্রতিরক্ষার জন্য প্রদাহ গুরুত্বপূর্ণ হলেও প্রয়োজনাতিরিক্ত প্রদাহে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। আর সেটার পরিমাণই মূলত কমিয়ে দিতে পারে দারুচিনি। এই দারুচিনির মধ্যেই রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট পলিফেনল ও প্রোঅ্যান্থোসায়ানাইডিন, যা কোনও ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এছাড়াও দারুচিনি মেদ ঝরাতেও কাজে আসে। শ্বাসতন্ত্রের রোগ এবং হার্টের রোগ নির্মূল করতেও খুবই সহায়ক দারুচিনি। দারুচিনির অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল প্রপার্টি বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।

আয়ুর্বেদিক ওষুধপত্র বা চিকিৎসার ক্ষেত্রে দারুচিনি বহুকাল ধরেই রক্তে বাড়তি শর্করার মাত্রা কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। সম্প্রতিকালে দেখা গিয়েছে যে ৪০ দিন ধরে প্রতিদিন ৬ গ্রাম দারুচিনি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকতে পারে। এর সঙ্গে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর ক্ষেত্রেও দারুচিনি অত্যন্ত কার্যকর।

বেশি মাত্রায় দারুচিনি সেবন লিভারের ক্ষতি করতে পারে। কেউ যদি রক্ত তরল করার ওষুধ নিয়মিত খায়, বা কাউকে যদি ডায়াবেটিস মোকাবিলা করার জন্য নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, তাহলে তাদের জন্য বেশি মাত্রায় দারুচিনি না খাওয়াই শ্রেয়। বাজারে দারুচিনির নামে অনেক ধরনের গাছের ছাল দারুচিনি বলে বিক্রি হয়ে থাকে। কেনার আগে গন্ধ এবং একটু ভেঙে মুখে দিয়ে দেখুন ঝাঁজালো স্বাদ কি না।