নববধূকে কাঁধে তুলে নদী পার হলেন স্বামী

হাতে হাত রেখে একসঙ্গে চলার অঙ্গীকার নিয়েছিলেন বিয়ের পিঁড়িতে বসে। বিপদে আপদে একসঙ্গে থাকবেন, বলেছিলেন সে কথাও। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যেন তেমন পরীক্ষা এসে গেল নব দম্পতির সামনে। সামনে খরস্রোতা নদী। না আছে সেতু, না নৌকা। কীভাবে পার হয়ে পৌঁছবেন বাড়িতে?

বিন্দুমাত্র ভাবলেন না ভারতের বিহারের কিসানগঞ্জের লোহাগড়ের শিবকুমার সিংহ। নতুন বৌকে তুলে নিলেন কাঁধে। তার পরে স্রোত ভেঙে এগোতে লাগলেন। লক্ষ্য, পার হওয়ার মতো জায়গা খুঁজে বার করা। তখনও তাঁর পরনে বিয়ের শেরোয়ানি। পায়ে নতুন জুতো। নতুন বৌ সুনীতার পরনে বিয়ের জোড়। হাত বোঝাই চুড়ি ঝুনঝুন করছে চলার তালে তালে। তিনি আর বাধা দেবেন কী!

এভাবে চলতে চলতে চলতে শেষে মিলল নদীর সোঁতা। সেখানে চওড়া মোটে কিলোমিটার খানেক। স্রোতও তুলনায় কম। সেই জল ঠেলে এক সময়ে তাঁরা গিয়ে উঠলেন ওপারে, বাড়ির কাছে। হইহই করে উঠলেন দাঁড়িয়ে থাকা

লোকজন। পারলেন কী করে এতটা পথ নতুন বৌকে কাঁধে করে নিয়ে আসতে? জলের স্রোত ভেঙে হাঁটতে অসুবিধা হল না? মুখে হাল্কা হাসি। বছর ছাব্বিশের শিবকুমার বলেন, ‘‘লজ্জা লাগছিল। কিন্তু উপায় তো ছিল না। জলের স্রোত বাড়ছে দেখে মাঝি না করে দিল। আমরা কি তা হলে নদী পেরিয়ে বাড়ি যাব না?’’

বিহারের কিসানগঞ্জের বাসিন্দা শিবকুমার বিয়ে করতে গিয়েছিলেন নেপাল সীমান্তের সিংহীমারি গ্রামে। বিয়ের পরে এ দিন সকালে একুশ বছরের সুনীতাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হন। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গ জুড়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, মেচি নদীর সঙ্গে যুক্ত কনকই নদী। মেচি এসেছে নেপাল থেকে, বয়ে গিয়েছে দুই

দেশের মধ্যে সীমান্ত রেখা হয়ে। পাহাড়ের এই নদীতে হঠাৎই এ দিন জলস্রোত বেড়ে যায়। শিবকুমারেরার যখন বাড়ির উল্টো দিকের ঘাটে পৌঁছন, মাঝি জানিয়ে দেয়, এই জলে নৌকা টেনে নিয়ে যেতে পারবে না। তার পরেই ঝপ করে ঠিক করে ফেলেন সদ্য বিবাহিত যুবক, স্ত্রীকে কাঁধে নিয়েই নদী পার হবেন।

নদীর বিপদের কথা কিন্তু জানতেন শিবকুমার। তিনি বলেন, ‘‘কনকই নদীর গতিপ্রকৃতি ভাল না। কখন কী হবে, কেউ জানে না।’’ তা হলে স্ত্রীকে কাঁধে নিলেন কেন? হাসছিলেন শিবকুমার। তাঁর সঙ্গীরা তখন বলছেন, ‘‘ছেলে তো বিয়ের পরে প্রথম দিনই বাজিমাত করে দিল!’’ সলজ্জ হাসি তখন সুনীতার মুখেও।

সুত্র: আনন্দবাজার