রেড মিট বা লাল মাংস সাধারণত লাল বর্ণের হয়। রান্নার পরে সাদা বর্ণের পরিবর্তে ফ্যাকাশে লাল হয়। গরু, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মাংসকে রেড মিট বা লাল মাংস বলা হয়। রেড মিট বা লাল মাংসে প্রচুর ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে যা স্বাস্থ্যকর, সুষম খাদ্যের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, লাল মাংস গ্রহণের ফলে ক্যানসার এবং অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি জানান, রেড মিট খেলে কেন কোলোরেক্টাল ক্যানসার বা কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ও মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ে। যা আগামী দিনে কোলোরেক্টাল ক্যানসার চিকিৎসার কার্যকরী ওষুধ আবিষ্কারের পথ খুলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের একাংশ।
গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্যানসার বিষয়ক গবেষণা পত্রিকা ‘ক্যানসার ডিসকভারি’-তে। ক্যানসার বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের এত দিন শুধুই সন্দেহ ছিল, খুব বেশি পরিমাণে রেড মিট খাওয়ার অভ্যাসের সঙ্গে কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ও মৃত্যুর কোনও যোগসাজশ থাকতে পারে। কিন্তু কীভাবে রেড মিট মানবশরীরে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার বিপদ বাড়িয়ে দেয়, কোষগুলোর ক্ষতি করে কীভাবে, তার কোনও সদুত্তর মিলছিল না।
ফলে, সেই সন্দেহকে মূলধন করেই কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্তদের রেড মিট কম পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এর পরেও অনেক বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক এখনও মানতে রাজি হননি, রেড মিট খাওয়ার অভ্যাসের সঙ্গে কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ও মৃত্যুর কোনও যোগসাজশ রয়েছে। এই গবেষণা সেই বিভ্রান্তি, সন্দেহ, সংশয় দূর করল।
গবেষণা রিপোর্টে জানা যায়, বেশি পরিমাণে রেড মিট খাওয়া মানব দেহকোষের ডিএনএ-র বিপুল ক্ষতি করে। তার ফলে, কোষগুলোর স্বাভাবিক কাজকর্ম তো ব্যাহত হয়ই, তাদের আশপাশে ক্যানসার কোষ গড়ে ওঠে আর দ্রুত সেগুলির বাড়-বৃদ্ধি ঘটতে থাকে।
আমেরিকার বস্টনে্র ডানা-ফার্বার ক্যানসার ইনস্টিটিউটের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ মারিয়োস গিয়ান্নাকিস সম্প্রতি কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত ৯০০ রোগীকে সম্প্রতি পরীক্ষা চালান। তার আগে ২ লক্ষ ৮০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকেও পরীক্ষা করা হয়েছিল।
গবেষণা দেখা যায়, রেড মিটে এক ধরনের ‘অ্যালকাইলেশন’ নামে উপাদান থাকে। যারা খুব বেশি পরিমাণে রেড মিট খান তাদের দেহকোষের ডিএনএ’র ক্ষতি করে। সাধারণত প্রসেসড বা প্রসেসড নয় এমন রেড মিট বেশি পরিমাণে খেলেই ডিএনএ-র অ্যালকাইলেশন বেশি হচ্ছে। যারা পোল্ট্রির ডিম, মাছ বা অন্য ধরনের খাবার খেতে বেশি অভ্যস্ত তাদের ক্ষেত্রে এই অ্যালকাইলেশন হয় না বলে দাবি করেন।
অতিরিক্ত লাল মাংস গ্রহণ করলে খাদ্যনালি, ফুসফুসে অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে সম্পৃক্ত চর্বি থাকায় লাল মাংস হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে লাল মাংস বাদ দিয়ে প্রোটিনের জন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাছ কিংবা মুরগির মাংস খেতে পারেন। আর এতে ২০ শতাংশ ঝুঁকি কমবে।