করোনা ভাইরাস হানা কারণ গত বছরের মার্চ থেকে বন্ধ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাড়িতে বসেই মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন শিক্ষকরা। আর সেটাই নাপসন্দ পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির কুলাই পদিমা নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্যামল জানার। কোভিড পরবর্তী শারীরিক অসুস্থতাকে তুচ্ছ প্রমাণ করে করোনা আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে নিজের টাকায় ওষুধ এবং খাবার কিনে পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি।
এই কাজে শিক্ষককে সারাক্ষণ সাহায্য করে চলেছেন তাঁর স্ত্রী মণিকা। ইতিমধ্যেই কাঁথি শহর ও শহর লাগোয়া বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসা শুরু হয়েছে। ঠিকানা জেনে নিচ্ছেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যে শ্যামলবাবু পৌঁছে যাচ্ছেন সেখানে। কারও প্রয়োজনে যাতে যোগাযোগ করতে পারেন, তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ফোন নম্বরও দিয়েছেন। তবে করোনা কালের আগেও সমাজসেবা করেছেন। শুধু কাঁথিই নয় কখনও কলকাতায় ডাক্তার দেখাতে আসার সময় নিজের ব্যাগে স্লেট,
খাতা, পেন, পেনসিল নিয়ে আসেন। পথশিশুদের দেন সেগুলি। ভিন রাজ্যে বেড়াতে গেলেও একই কাজ করেন। আলাদা ট্রলি ব্যাগে দুস্থ মানুষদের জন্য পোশাক, খাবার নিয়ে যান। বাজার খুলে কয়েক হাজার মানুষকে পোশাকও উপহার দিয়েছেন। দুস্থ ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বছর খাদ্য সামগ্রী উপহার হিসাবে তুলে দেন। প্রতি মাসে অসহায় নিঃসন্তান বৃদ্ধ মানুষদের খাদ্যসামগ্রী কিনে দেন।
গরিব পরিবারের কন্যাসন্তানের বিয়েতেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। শুধু তাই নয়, নিজের জন্মদিনে কৃষকদের হাতে তুলে দেন বীজ। আমফানের পর অসহায় মানুষের পাশে ত্রিপল, খাদ্য সামগ্রী নিয়ে দাঁড়ান। গ্রামীণ স্ব-রোজগার প্রকল্পের জন্য ছাগল ছানা ও মুরগি ছানা উপহার দিয়ে অসহায় মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করেছেন।
কখনও মুমূর্ষু রোগীকে রক্তের সংকটকালে নিজের রক্ত দান করে জীবন বাঁচিয়েছেন। করোনা আবহে দীর্ঘদিন বন্ধ স্কুল। স্নেহের পড়ুয়াদের ছেড়ে বাড়িতে বসে প্রায় ওষ্ঠাগত প্রাণ। তিনি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিজের সন্তান বলে মনে করেন। ছাত্রছাত্রীদের তিনি আদর করে ‘সন্তানদল’ বলে ডাকেন। শুধু শিক্ষকই (Teacher) নন, শ্যামলবাবু এলাকায় পরিবেশপ্রেমী হিসাবেও পরিচিত। তিনি সময় পেলেই কাঁথির সন্নিকটে বঙ্গোপসাগর তীরে পৌঁছে যান। সমুদ্রতটে পড়ে থাকা প্লাস্টিক কুড়িয়ে বর্জ্যমুক্ত করার চেষ্টা করেন।
এমন শিক্ষককে সাধারণতন্ত্র দিবসে সরকারি মঞ্চে কাঁথি প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাঁথি মহকুমা শাসক ও মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কোভিড যোদ্ধা সম্মানে ভূষিত করেন। করোনা কালে ভাইরাস যখন প্রিয়জনদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করেছে তখন গ্রামের শ্যামল স্যারই যেন সকলের ‘মসিহা’ হয়ে উঠেছেন।