কলেজে পড়তে গিয়ে দুজনের দেখা। এরপর প্রেম। দীর্ঘ আড়াই বছর পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন দুজনে। কিন্তু অন্য সবার মতো শুধুমাত্র প্রচলিত আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বিয়ে সারতে চাননি তারা। তারা চেয়েছিলেন, নিজেদের বিয়েটা স্মরণীয় করে রাখতে। এ কারণেই তারা হাতির পিঠে চড়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। তাদের এ কাণ্ডে এলাকায় হৈ চৈ পড়ে যায়। এলাকার উৎসুক জনতা বর-কনেকে একনজর দেখতে বিয়েবাড়িতে ভিড় জমান। কারণ বাদশাহী আমলে এমন ঘটনার কথা অহরহ শোনা গেলেও ওই এলাকায় এমন কাণ্ড কখনও দেখা যায়নি।
ঘটনাটি সিরাজগঞ্জের তাড়াশের মাকড়শোন গ্রামের। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা বাহাদুর পাড়া গ্রামের আব্দুল জব্বার মন্ডলের ছেলে মো. সাগর মন্ডল (২৩) এবং সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার মাকড়শোন গ্রামের তোজাম্মেল হকের মেয়ে তানজিলা আক্তার বিথি (২৩) পার্শ্ববর্তী নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার শহীদ শামসুজ্জোহা অনার্স কলেজের ইসলামের ইতিহাসের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। কলেজে পড়া অবস্থায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর প্রেমকে স্মরণীয় করতে রাখতে তারা হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন।
করোনাকালীন কলেজ বন্ধ থাকায় তানজিলা ও সাগর সিদ্ধান্ত নেন আর মোবাইল, ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে ভালবাসা নয়। বরং তাদের প্রেমের বিষয়টি দুই পরিবারকেই জানাবেন। পরবর্তীতে দুই পরিবারের সিদ্ধান্তে রোববার তাদের বিয়ের দিন ধার্য করা হয়।
বর সাগর মন্ডল জানান, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর সেজে হাতির পিঠে চড়ে প্রেমিকা তানজিলাকে বিয়ে করে আনার সেই ইচ্ছের কথা তিনি তার বাবাকে জানান। পরে ছেলের ইচ্ছে পূরণে বাবা আব্দুল জব্বার ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে একদিনের জন্য একটি হাতি ভাড়া করে নিয়ে আসেন।
এরই প্রেক্ষিতে রোববার দুপুরে হাতির পিঠে চড়ে সাগর মন্ডল বর যাত্রীদের গাড়ি বহরের সাথে নিয়ে বিকেলে মাকড়শোন গ্রামে কনে তানজিলার বাড়িতে পৌঁছান। মুহূর্তেই সেই খবর ছড়িয়ে পড়লে মাকড়শোন ও পাশ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের উৎসুক শিশু-নারী ও লোকজন ভিড় জমান করেন বাড়িতে। সেখানে দুই লাখ এক টাকা কাবিনে সাগর আর তানজিলার বিয়ের আনুষ্ঠিকতা শেষ হয়।
বিয়ের আসরে কথা হয় বর সাগর মন্ডলের সঙ্গে । রুমালে মুখ ঢেকে লাজুক কণ্ঠে সাগর জানান, , প্রেমকে অমর করতে কতজনই তো কতো কি করেন। সম্রাট শাহজাহান প্রিয়তমা মমতাজের জন্য তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন। সেখানে আমার ও তানজিলার বিয়ে মনে রাখা এটি একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র।
বর যাত্রী আবুল হোসেন, সোহরাব মন্ডল এবং কনে বাড়ির ছারোয়ার হোসেন, ইলিয়াস হোসেন জনান, এ অঞ্চলে হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে করার ঘটনা ইতিপূর্বে ঘটেনি। তাই বিষয়টি তাদের জন্য ছিল বেশ আনন্দের।