নিজের বিয়ের আমন্ত্রণপত্র নিজেই লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ! রহস্যে ঘেরা এক অজানা কাহিনী

আজকের দিনে হলে নির্ঘাত বলা হত ডেঁপো ছোকরা। না হলে, বড়লোক বাপের বখাটে ছেলে। নিজের বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র কি না লিজেই লিখছে! চিঠির শেষে আবার নিজের নাম লেখা।

শিষ্টাচারের ষষ্ঠীপুজো একেবারে। কিন্তু তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিরাশি খুব মাফ। পরিবারের তরফে কোনও নিমন্ত্রণপত্র ছাপানো হয়নি। নিজের বিয়ের নিমন্ত্রণপতত্রের বয়ান করেছিলেন কবিগুরু নিজেই।

সাধারণত পরিবারের বয়ঃজৈষ্ঠ সদস্যই বিয়ের আমন্ত্রণপত্র লেখেন। বা পাত্র অথবা পাত্রীর অভিভাবক স্থানীয় কেউ চিঠির খসড়া করেন। তিনিই বন্ধুবান্ধব-আত্মীয়বর্গকে শুভ অনুষ্ঠানের খবর জানান। এই আমন্ত্রণপত্র লেখারও একটা নির্দিষ্ট রীতি আছে।

কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বেলায় এসব মানা হয়নি কিছুই। বলা যায়, মানেন নি রবীন্দ্রনাথ। নানা জটিল সম্পর্কের মতো তাঁর বিয়ের চিঠিটিও রকমারি রহস্যে ঘেরা। হাতে লেখা এই আমন্ত্রণপত্রে রবিঠাকুর লিখেছিলেন –

‘আগামী রবিবার ২৪শে অগ্রহায়ণ তারিখে শুভদিনে শুভলগ্নে আমার পরমাত্মীয় শ্রীমান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শুভ বিবাহ হইবেক। আপনি তদুপলক্ষে বৈকালে উক্ত দিবসে ৬নং জোড়াসাঁকোস্থ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভবনে উপস্থিত থাকিয়া বিবাহাদি সন্দর্শন করিয়া আমাকে এবং আত্মীয়বর্গকে বাধিত করিবেন। ইতি

– অনুগত শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর”

ব্রাক্ষ-বাঙালি প্রথায় রবীন্দ্রনাথ শ্বশুরবাড়ি বিয়ে করতে যান নি। পারিবারিক বেনারসি আর জমকালো শাল গায়ে নিজের বাড়ির পশ্চিম বারান্দা ঘুরে জোড়াসাঁকোর বাসভবনে বসেছিলেন বিয়ে করতে।

যাইহোক, তাঁর বিয়ের চিঠি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন ওঠে। নিজের হাতের লেখায় বিয়ের আমন্ত্রণপত্রে পাত্রের পরিচয়ে লিখেছেন ‘আমার পরমাত্মীয়’। নিজেকেই নিজের ‘আত্মীয়’ বলছেন কেন? আমন্ত্রণপত্রের ওপরে বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে লেখা ‘আমার motto নয়’। এই কথারই বা কী অর্থ? ইংরেজি ‘মোটো’ বলতেই বা কী বোঝাতে চেয়েছেন বিশ্বকবি?

বিয়ে উপলক্ষ্যে এই চিঠি কবিগুরুর ঘনিষ্ঠ অনেকেই পেয়েছিলেন। অধ্যাপক জগদীশ ভট্টাচার্য তাঁর ‘কবিমানসী’ বইয়ে এই চিঠির প্রসঙ্গে লিখেছিলেন – ‘সমস্তটাই উচ্চাঙ্গের রসিকতা হতে পারে, অথবা হয়তো সবটাই রহস্যাবৃত প্রহেলিকা।’ সেই রহস্যের জট আজও খোলেনি।