চট্টগ্রামের সাবেক এমপি ও জামায়াত ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতা শাহজাহান চৌধুরীকে গ্রে’ফতার করেছে পু’লিশ। শনিবার ভোররাতে সাতকানিয়া পৌরসভার ছমদর পাড়ার নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রে’ফতার করা হয়।
তিনি চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় জামায়াতের মজলিশে সূরার সদস্য। সাতকানিয়া থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তাকে কোন মা’ম’লায় গ্রে’ফতার করা হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জানাতে পারেননি।
আরো পড়ুন: ডিম আনি, ডিম খাই:‘বাচ্চাগুলো প্রতিদিন ভর্তা-ভাজি দিয়ে ভাত খেতে পারে না। যখন ঝোলের তরকারি খেতে খুব জিদ করে, তখন এক হালি ডিম কিনি। বউ ডিমের ঝোল রান্না করে। মাছ-মাংস তো সবসময় কেনা যায় না; খুব দাম। ডিম-ই শুধু সস্তা।’
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন মোজাম্মেল মিয়া। দিনমজুর এ ব্যক্তির পাঁচ সদস্যের সংসারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম। তার সংসারে টানাপোড়েন লেগেই থাকে। পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা এলাকায় ভাড়া করা ঘরে।মোজাম্মেল মিয়া বলেন, অভাবের সংসারে ডিম সবচেয়ে ভালো খাবার। সবার পছন্দ। কম দাম, পোষায় বেশি। ডিম আছে বলেই ৩০ টাকার মধ্যে একবেলা ঝোলভাত খাওয়ার সাধ মেটে তার পরিবারের।
মোজাম্মেল মিয়ার কথায় বোঝা যায়, তিনি ডিম পছন্দ করেন অভাবের তাড়নায়। কিন্তু মোহাম্মদপুরের মেসে থাকা আরেক সচ্ছল ব্যাচেলর ফয়জুল আনসারীর কাছে ডিম সহজে খেয়ে বাঁচার তাগিদে পছন্দের খাবারে পরিণত হয়েছে।ফয়জুল বলেন, ‘প্রতিদিন ডিম খাচ্ছি। বেশিরভাগ দিনই দু-বেলা, কখনো তিনবেলা। মেসে অন্য কিছু খেতে চাইলেও উপায় নেই। কালেভদ্রেও ভালো-মন্দ রান্না করার সময় পাই না। ডিম খেয়ে বেঁচে আছি। খারাপ লাগে না।’
ফয়জুল হেসে বলছিলেন, “গরিব মানুষ যেমন ‘দিন আনে দিন খায়’ আমার মতো একা মানুষরা তেমন ‘ডিম আনে আর ডিম খায়’। ডিম নেই তো ঘরে খাওয়া নেই।” তার কথার প্রমাণ মিলল রাজধানীর আরও কয়েকজন ব্যাচেলরের সঙ্গে কথা বলে।
বোঝা গেল যে এখন রাজধানীর ব্যাচেলর জীবনে ডিমের গুরুত্ব অনেক। সহজলভ্য এবং কোনোরকম আনুষঙ্গিক উপাদান ছাড়াই একে খাদ্য উপযোগী করে তোলা যায় বলে ব্যাচেলরদের খাদ্যতালিকায় ডিমের স্থান সবার উপরে। তাদের জীবনধারণের নানা পরিস্থিতিতে ভরসার খাবার হিসেবে ডিম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ব্যাচেলরদের কয়েকজনের ডিম খাওয়া নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, বুয়ার অনুপস্থিতিতে খাবার তৈরি করতে গেলে ঝটপট খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে গেলে বা হঠাৎ কোনো অতিথি এলে ডিম ছাড়া উপায় নেই। এমনকি মেসের মিলের টাকা সঙ্কট থাকলে এবং কোনো কারণে গ্যাস-পানির সঙ্কট থাকলেই তাদের ডিম খেতে হয়। মেসে দিনের তিনমিলের মধ্যে অন্তত একমিল ডিম খাচ্ছেন তারা।
মোটকথা শুধু দরিদ্র বা ব্যাচেলর নয়; ডিম এখন প্রতিটি ঘরেই সুপার ফুড। সস্তা ও সহজলভ্য বিবেচনায় এমন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর প্রাকৃতিক খাদ্য দ্বিতীয়টি আর নেই। এছাড়া যারা মাছ-মাংস কিনে খেতে পারেন না তাদের আমিষের চাহিদার বেশি অংশ এখন ডিম পূরণ করে। পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যের প্রধান উপাদান হিসেবে শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রায় সব বয়সীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ডিম।
অন্যদিকে পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন হচ্ছেন। এজন্য ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ বাড়িয়েছেন তারা। এছাড়া খাদ্যাভাস পরিবর্তনে আর্থিক সচ্ছলতারও একটা বড় সম্পর্ক আছে। আগের থেকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। ফলে ডিমের মতো পুষ্টিকর খাদ্য তারা নিত্যদিনের তালিকায় রাখছেন। এজন্য পুষ্টি চাহিদা পূরণে আগের মতো ভাতের ওপর নির্ভরশীল থাকছে না মানুষ।
দেশে ডিমের জনপ্রিয়তা কী পরিমাণ বেড়েছে এর প্রমাণ মেলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভের রিপোর্ট দেখে। ওই রিপোর্টের তথ্যে, ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডিমের ভোগ ৭ দশমিক ২ গ্রাম থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৫৮ গ্রামে।
এদিকে দেশের মানুষের ক্ষুধার বড় ঘাটতি যে শুধু ডিম মিটিয়ে যাচ্ছে, তা কিন্তু নয়। এখন দেশের গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বড় হাতিয়ার ডিম, যা পোল্ট্রিখাতে বিপ্লব এনেছে।
অন্যদিকে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ, এমনকি সর্বশেষ মহামারি করোনা প্রতিরোধেও ডিমের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচারের (ইউএসডি) গবেষণা বলছে, করোনা প্রতিরোধের জন্য ভিটামিন-ডি বেশি প্রয়োজন। আর ডিম হচ্ছে ভিটামিন ডি-র বড় উৎস।
এসব বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ বলেন, রোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সব ক্ষেত্রেই ডিম বড় অবদান রাখছে। দেশে ডিমের বাজার এখন ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা দেশের সার্বিক প্রাণিসম্পদ খাতকে অনেক এগিয়ে নিয়েছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ডিম এখন খুবই সহজলভ্য বলা যায়। এজন্য পুষ্টি চাহিদা পূরণে ডিম খাওয়ার প্রচলন আরও বাড়িয়ে মানুষকে অনেক রোগ থেকে বাঁচানো সম্ভব। তিনি বলেন, একজন মানুষের স্বাভাবিক ডিমের চাহিদা পূরণ হলে রোগ কম হবে। ওষুধের পরিমাণ কম লাগবে। স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। আর্থিকভাবে সচ্ছল থাকবে। কারণ রোগ-বালাইয়ে প্রচুর আর্থিক বিপর্যয় হয়।
এদিকে ডিম যে সহজলভ্য ও দামের দিক থেকে একটি স্থিতিশীল পণ্য তার প্রমাণ মেলে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্যেও। দেখা গেছে, এক যুগ আগেও ২০০৯ সালে দেশের বাজারে প্রতি হালি ডিমের গড় দাম ছিল ২৮ টাকা। এখনো এই দামে বাজারে ডিম মিলছে।
ডিমের আরও কিছু পরিসংখ্যান: প্রাণিসম্পদ বিভাগের উৎপাদনের তথ্য বলছে, ২০১০ সালে দেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ৬০০ কোটি পিস, যা এখন ১ হাজার ৭৩৬ কোটিতে পৌঁছেছে। অর্থাৎ এক দশকে উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।জানা গেছে, দেশে প্রতিদিন মুরগি, হাঁস, কবুতর ও কোয়েলের প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি ডিম উৎপাদন হয়। পৃথক হিসাবে কেবল মুরগির ডিম উৎপাদন হয় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি।
অন্যদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা- এফএওর হিসাবে গত বছর বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ডিম খাওয়ার দিক থেকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছেছে। ওই মান অনুযায়ী, বছরে একজন মানুষের ১০৪টি ডিম খাওয়ার কথা। বাংলাদেশের মানুষ গত বছরই গড়ে ওই পরিমাণে ডিম খাওয়া শুরু করেছে।
সংকটের কথা বলছেন উৎপাদকরা: বাংলাদেশ এগ প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, দেশের খামারিরা চাহিদা অনুযায়ী ডিম উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে। কিন্তু এ খাতটি নানা সঙ্কটে ভুগছে। বর্তমানে করোনা এ খাতকে একেবারে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, এগ প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত খামার ছিল এক হাজার কিন্তু এখন একশ থেকে দুশ’তে এসে ঠেকেছে। লোকসানে ব্যবসায় টিকতে না পেরে অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। এ কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যদিও এরপরও ডিমের দাম বাড়েনি। লোকসান হচ্ছে।
তাহের আহমেদ বলেন, বড় বড় খামারি বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে এখন বন্ধ করে অন্যদিকে ঝুঁকছেন। ছোট খামারিরা বেশিরভাগ ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন হাতেগোনা কিছু ব্যবসায়ী টিকে রয়েছেন। বাংলাদেশ এগ প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরও বলেন, চাহিদার সম্পূর্ণ ডিম উৎপাদনের জন্য এ সেক্টর নিজেদের প্রস্তুত করেছে। ব্যাপক হারে উৎপাদনও বাড়িয়েছে। তবে সেই তুলনায় সহায়তা মেলেনি।