অনেক আগে এমনটা হত। প্রশাসকরা ছদ্মবেশে হাজির হতেন প্রশাসনিক কাজকর্ম খতিয়ে দেখার জন্য। সাধারণ মানুষ সেজে প্রশাসনিক কর্তাদের মাঝে যেতেন সমাজব্যবস্থা ঠিকঠাক চলছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য! কিন্তু আজকাল সেসব অতীত। এখন ডিউটির বাইরে বাড়তি দায়িত্ব নিতে কে চায়! তবে এখনও কিছু মানুষ রয়েছেন যাঁরা সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে চান। পুণের পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ প্রকাশ এমনই একজন মানুষ।
পুলিশ নিজেরর কাজ ঠিকঠাক করছে কিনা, সেটা জানার জন্য এর থেকে হয়তো ভাল উপায় আর ছিল না। তিনি যেভাবে পুলিশের কাজ খতিয়ে দেখার চেষ্টা করলেন, তা এখনকার দিনে কেউ ভাবতেই পারে না। কাউকে কিছু না জানিয়ে সাধারন মানুষের বেশে তিনি হাজির হয়েছিলেন একের পর এক থানায়। খতিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন থানায় পৌঁছলে সাধারণ মানুষ ঠিকঠাক পরিষেবা পাচ্ছেন কিনা! অর্থাৎ সাধারণ মানুষের স্বার্থেই এমন সাজ।
কৃষ্ণ প্রকাশ একজন পাঠানের পোশাক পরে, মুখে নকল দাড়ি-গোঁফ লাগিয়ে একের পর এক থানায় হাজির হয়েছিলেন। সঙ্গে নিয়েছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অফ পুলিশ প্রেরণা খাটেকে। তাঁকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পুলিশের কাছে পরিচয় দিয়েছিলেন কমিশনার। তাঁরা দুজনে একের পর এক থানায় হাজির হন। সেখানে নিজেদের অ’ভিযোগ দায়ের করেন। তাঁরা আসলে দেখতে গিয়েছিলেন, সাধারণ মানুষ থানায় অ’ভিযোগ দায়ের করতে গেলে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার কেমন আচরণ করেন! প্রতিটি থানায় তাঁরা আলাদা অ’ভিযোগ দায়ের করেছিলেন। যেমন, হিঞ্জেওয়াদি থানায় তিনি অ’ভিযোগ করেন, তাঁর স্ত্রীকে কিছু সমাজবি’রোধী রাস্তায় উ’ত্ত্যক্ত করছিল।
এমনকী তারা রাস্তার মাঝখানে শব্দবাজি ফাটাচ্ছিল। এর পর ওয়াকার পুলিশ স্টেশনে গিয়ে তিনি অ’ভিযোগ করেন, তাঁর স্ত্রীর গ’লার সোনার চেন ছি’নতাই হয়ে গিয়েছে। পরপর দুটি পুলিশ স্টেশনে তাঁদের অ’ভিযোগ শুনে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হন পুলিসকর্মীরা। ওই দুই পুলিশ স্টেশনে কর্তব্যরত অফিসারদের তৎপরতা দেখে সন্তুষ্ট হন পুলিশ কমিশনার। তবে গোল বাঁধে অন্য একটি থানায়।
পিমরি চিঞ্চোয়ার থানায় গিয়ে কমিশনার অ’ভিযোগ করেন, কোভিড আ’ক্রান্ত রো’গী নিয়ে যাওয়ার জন্য একজন অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার তাঁদের কাছ থেকে অনেক টাকা দাবি করছে। কিন্তু ওই থানার কর্তব্যরত অফিসার তাঁর অ’ভিযোগে সাড়া দেননি। বরং সেই অফিসার তার অ’ভিযোগ নিতে অস্বীকার করেন। ওই থানার পুলিশকর্মীরা তাঁকে বলেন, স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে সবার আগে অ’ভিযোগ জানাতে!
এই ব্যাপারে কোনও সহায়তা তাঁরা করতে পারবেন না বলে জানান। এর পরই পুলিশ কমিশনার নিজের আসল পরিচয় দেন। ইতিমধ্যে ওই থানার কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারের কাছে জবাবদিহি চেয়েছে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ। কেন অ’ভিযোগ নেওয়া হলো না, তার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হবে ওই থানার পুলিশ কমিশনারকে।