হেফাজত নিয়ে অনড় অবস্থানে প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সরকার হেফাজতের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। বিশেষ করে ২০১৩ তে হেফাজতের যে সমস্ত নেতারা নাশকতা, তাণ্ডব করেছিলো, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছিলো, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গত এক মাসে হেফাজতের শতাধিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং গ্রেফতার আতঙ্ক থেকে বাঁচতে হেফাজতের আমির তার কমিটি বিলুপ্ত করে একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করেছেন। হেফাজতের সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং সমঝোতার চেষ্টা করছেন। তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তিনবার দেখা করেছেন। এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করছেন এবং তারা ভবিষ্যতে আর বাড়াবাড়ি করবেন না, নমনীয় থাকবেন ইত্যাদি নানা রকম কথা বলে সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেফাজতের ব্যাপারে অনড় এবং কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। হেফাজতের সাথে কোন রকম সমঝোতা নয়, এই নীতিই তিনি বহাল রেখেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের যেন কোনো কষ্ট না হয়, উন্নতি হয় সেজন্য তিনি লক্ষ্য রাখতে বলেছেন এবং কওমি মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ হেফাজত থেকে তুলে নেয়ারও উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। যারা সত্যিকারের আলেম-ওলামা তারা যেন সঠিকভাবে ইসলাম ধর্ম চর্চা এবং ধর্ম প্রচারের কাজ করতে পারে সেটির তিনি নিশ্চয়তা দিয়েছেন। কিন্তু যারা ইসলামের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন রকম অপকর্ম করছে এবং দুরভিসন্ধি চালাচ্ছে তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানের কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী বলছেন যে, অপরাধী অপরাধীই, তার কোনো পরিচয় নাই। তিনি হেফাজত করেন না আওয়ামী লীগ করেন এটি দেখার বিষয় নয়। বরং তার অপরাধের মাত্রা দেখা হবে, সেজন্য অপরাধ অনুযায়ী তার শাস্তি হবে।

একাধিক সূত্র বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী নিজে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের নির্দেশনা দিয়েছেন। যারা সহিংসতা তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত, সেই সহিংসতা এবং তাণ্ডবের দ্রুত বিচার হতে হবে এবং তাদেরকে আইনের আশ্রয়ে নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একের পর এক হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, পুরো বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী তদারকিতে হচ্ছে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রীর এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আইন সবার জন্য সমান এবং যারাই অপরাধ করবে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে, এই নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য যে, জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজতের আমির নির্বাচিত হওয়ার পর হেফাজত উগ্রবাদী, সহিংস ধারায় চলে যায়। তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে। এরপর তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির আসার বিরোধিতা করেন। এই সমস্ত বিরোধিতা করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী দিনে এবং পরদিন ২৭ মার্চ তারা ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামে তাণ্ডব চালায়। এরপর প্রধানমন্ত্রী হেফাজতের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, সরকারের ভেতরে হেফাজতের প্রতি অনেক সহানুভূতিশীল ব্যক্তি রয়েছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে এই সমস্ত সহানুভূতিশীল ব্যক্তিরা হেফাজতকে আবার নতুন আরেকটি সুযোগ দেওয়া বা নতুন করে বাঁচানোর তৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অনড় অবস্থানের কারণে তারা কিছু করার সাহস পাচ্ছেন না।