সরকারের সঙ্গে হেফাজতের এক ধরনের আলাপ-আলোচনা চলছে। পর্দার আড়ালের মাঝে মাঝে পর্দার সামনেই হেফাজতের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন ধরনের বৈঠকের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। তবে এসব বৈঠক নিয়ে সরকার বা হেফাজতের কেউই মুখ খুলতে রাজি নয়। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে যে কথাগুলো বলছে তাতে তারা বলছেন যে, সৌজন্য সাক্ষাৎ হচ্ছে। হেফাজতের নেতাদের মুক্তির দাবিসহ তারা ৪ দফা শর্ত দিয়েছেন। কিন্তু বিভিন্ন সূত্র থেকে খবরে জানা গেছে যে, হেফাজত আসলে সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং তারা সরকার যেন তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখে, হেফাজতকে যেন নির্মূল না করে সেজন্যই তারা এক ধরনের আকুতি করছে। আর এই আকুতি করতে গিয়ে তারা সরকারকে ইতিমধ্যে ৫ দফা প্রস্তাবও দিয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। আবার সরকারের দিক থেকেও হেফাজতের বিভিন্ন ব্যাপারে আপত্তি এবং শর্তের কথা বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় যে বৈঠক হয়েছিলো সেই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি কিছু শর্তের কথা বলেছেন। এছাড়াও হেফাজত সরকারের বিভিন্ন মহলের সাথে যোগাযোগ করছে সেই যোগাযোগের ভিত্তিতে সরকারের পাঁচটি শর্তের কথা হেফাজতের নেতারা অনানুষ্ঠানিক আলাপে স্বীকার করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে হেফাজতকে হেফাজতের ব্যাপারে যে সমস্ত শর্ত আরোপ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে.
১. জুনায়েদ বাবুনগরীকে বাদ দেওয়া: সরকার প্রথমেই মনে করছে যে হেফাজতকে যদি পুনর্গঠন করতে হয় এবং সরকারের অনুগত একটি সংগঠন হিসেবে রাখতে হয় তাহলে প্রথমেই তাদের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীকে বাদ দিতে হবে। এখন অবশ্য জুনায়েদ বাবুনগরীকে দলের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী নিষ্ক্রিয় করে রেখেছেন এবং জুনায়েদ বাবুনগরীকে কোন রকম বক্তৃতা বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত রাখা হয়েছে। কিন্তু হেফাজতের সূত্রগুলো বলছে, সরকার চাইছে জুনায়েদ বাবুনগরীকে পুরোপুরি আনুষ্ঠানিকভাবেই হেফাজত থেকে বাদ দিতে।
২. কওমি মাদ্রাসায় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ: সরকার এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে গেছে। সরকার বলেছে যে, কওমি মাদ্রাসায় কোনো শিক্ষার্থীকে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা যাবে না এবং সেখানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। হেফাজতের নেতারা এ দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নিয়েছে বলেও একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
৩. কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ করতে হবে: সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে কওমি মাদ্রাসার যারা শিক্ষক আছে তাদের জন্য রাজনীতি বন্ধ করতে হবে এবং তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো রাজনৈতিক করতে পারবে না। এই বিষয়টিতেও নীতিগতভাবে তারা রাজি হয়েছেন।
৪. রাজনৈতিক দলের কোনো সদস্য হেফাজতে থাকতে পারবে না: হেফাজতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে হেফাজত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আর এই কারণে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, সত্যি যদি হেফাজত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হয় তাহলে কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য এখানে থাকতে পারবে না। খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ইত্যাদি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যরা এখন হেফাজতে ভিড় করেছে এবং তারা তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন। এই প্রবণতা বন্ধের জন্য সরকার সুস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং সরকার মনে করে যে, হেফাজতের সংগঠনের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য থাকবে না।
৫. হেফাজত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি করবে না: ভবিষ্যতে হেফাজত থাকলেও সেটি তারা আলেম, ইসলাম, দর্শন ইত্যাদি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করবে এবং ইসলামী চর্চা করবে। কোনো রাজনৈতিক আদলের সভা-সমাবেশ ইত্যাদি করবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সরকারের ৫ শর্তের মধ্যে চারটি শর্তের ব্যাপারেই হেফাজত নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন। তবে শুধুমাত্র জুনায়েদ বাবুনগরীর হেফাজতে থাকবে কি থাকবে না এই বিষয়টি নিয়েই সরকারের সঙ্গে হেফাজতের এখন মিমাংসা হয় নি। তবে সরকারি সূত্রগুলো বলছে, হেফাজতের যে সমঝোতাই হোক না কেন সে সমঝোতা শুধু তাদের সাথেই হবে, যাদের বিরুদ্ধে কোনো স;ন্ত্রা;স, স;হিং;সতার অভিযোগ নেই। সরকার যারা স;ন্ত্রা;সী তারা যে দলেরই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং এ ধরনের কোনো সমঝোতা যদি শেষ পর্যন্ত হয়ও তাহলেও সেটি যারা অ;নিয়ম বি;শৃংখলা করেছে তাদের বিরু;দ্ধে অ;ভিযান বন্ধ করতে পারবে না।