ময়মনসিংহ জেলার সিমান্তবর্তী হালুয়াঘাট উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমের শেষ সময়ে শ্রমের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও উপজেলার ধারাবাজার বাসট্যান্ডে বোরো মৌসুমের প্রথম থেকেই বসেছে শ্রমিক হাট। স্থানীয়ভাবে এটা ‘কামলার হাট’ বলে পরিচিত। প্রথম দিকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় তারা শ্রম বিক্রি শুরু করেন। যত দিন যাচ্ছে শ্রমের মূল্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে বর্তমানে প্রতিজন শ্রমিক বর্তমানে ১০৫০ টাকা করে নিচ্ছেন। সঙ্গে দুবেলা খাবার তো রয়েছেই।
এদিকে কয়েক দিনের তাপদাহে কৃষকের ধান পেকে গেছে। পাকা ধান কাটার সময় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে শ্রমিকের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ধানের মূল্য ও বাজার চাহিদার দিক দিয়ে প্রতিবারের মতো এবার মজুরি বেশ চড়া। আগে প্রতি মণ ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা বিক্রি হতো। এখন ধানের মণ বাজারে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। দুই মণ ধানের মূল্যে একজন শ্রমিক মিলছে হালুয়াঘাটে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিক হাটে উপস্থিত শ্রমিক আর গৃহস্থের দর কষাকষির মাধ্যমে চলছে হাঁকডাক। মজুরি নির্ধারণ শেষে সকাল সাতটার মধ্যেই ধান কাটার জন্য চলে যেতে হয় মাঠে। সকাল ছয়টা থেকেই শ্রম বাজারে চলে দর কষাকষি। যেদিন বাজারে শ্রমিক কম আসে সেদিন শ্রমিকের মূল্য এক হাজার ৫০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। লকডাউনে কৃষক ৪০০ টাকা মূল্যে শ্রমিক পেয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তা বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় মোট ২২ হাজার ৪৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় যা দুই হাজার ৯০০ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে গত বছর হাইব্রিড ধানের আবাদ হয়েছিল ছয় হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু এ বছর হাইব্রিড আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার হেক্টর।
হাটে আসা নড়াইল ইউনিয়নের শ্রমিক বজলুর রহমান বলেন, গৃহস্থরা তাদের সাধ্যানুযায়ী কাজ করাতে চায়। তীব্র গরমের মধ্যে ও ধানক্ষেতে রক্তচোষা জোঁকের ভয় উপেক্ষা করে ধান কাটার কাজ করতে হয়। তাই আমি মনে করি এই মূল্যবৃদ্ধি যৌক্তিক।হাটে শ্রমিক নিতে আসা ধুরাইল ইউনিয়নের জাকির হোসেন বলেন, প্রায় তিন একর জমিতে হাইব্রিড ধান করেছিলাম। ধান ভালো হলেও ধানের মূল্য কম। অন্যদিকে কামলার দামে তো ধান কাটব কি না তা নিয়েই চিন্তিত।
হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, এ বছর উপজেলার বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যেই উপজেলায় ৬০ ভাগ ধান কর্তন হয়ে গেছে। সরকারি ভর্তুকির মাধমে উপজেলায় ১৩টি কম্বাইনড হারভেস্টার মেশিন ধান কাটার কাজ করছে। এতে করে শ্রমিকদের ওপর চাপ অনেকাংশেই কমে এসেছে।