তুমি কিছু করলে বসুন্ধরা গ্রুপ শেষ হয়ে যাবে!

‘তুমি কিছু করলে বসুন্ধরা গ্রুপ শেষ হয়ে যাবে’- আ’ত্মহননের পথ বেছে নেওয়া তরুণী মোসারাত জাহান মুনিয়াকে এমন একটি বার্তাই দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন। মুনিয়া-শারুনের গোপন হোয়াটসঅ্যাপ চ্যা’ট ফাঁসের মাধ্যমে মি’লেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

অনেকেই বলাবলি করছেন, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে ফাঁসিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিতেই কী তাহলে মুনিয়াকে আ’ত্মহননে প্র’রোচিত করেছেন শারুন? শুধু তাই নয়, ফাঁস হওয়া চ্যাট থেকে স্পষ্ট অনেক আগে থেকেই মুনিয়ার সঙ্গে অনৈতিক অন্ত’রঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন হুইপপুত্র।

আ’ত্মহ’ত্যা করা তরুণীটির সঙ্গে ক্যাসিনো বি’রোধী অ’ভিযানে গ্রেফ’তার হওয়া ব’হিস্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটেরও অবৈ’ধ সম্পর্ক ছিল, এটিও বেরিয়ে এসেছে ফাঁস হওয়া চ্যাট থেকেই। সেই চ্যাটে মুনিয়া শারুনকে লিখেছেন- ‘সম্রাট চলে যাওয়ার পর আপনি তো জানেন আমি কতো কষ্টে ছিলাম।

আর লাস্ট ইয়ারে তো আমি খুবই কষ্টে ছিলাম। আপনি ওই টাইমে আমার পাশে না থাকলে আমি কী করতাম জানি না।’ ইতোমধ্যেই এসব চ্যাট ভোরের পাতার হাতে এসেছে। জানা যায়, শারুন-মুনিয়া নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। হোয়াটসআপে ও টেলিগ্রামে নিয়মিত বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর সংক্রান্ত বিভিন্ন আপডেট শারুনকে জানাতেন মুনিয়া।

শারুন কায়দা কৌশল করে মুনিয়াকে নানাভাবেই আ’নভীরের বিরুদ্ধে উ’স্কে দেওয়ার চেষ্টা করতেন। মুনিয়ার ভাষায় হুইপুত্র যেন সাক্ষাৎ এক ফেরেশতা! এদিকে, মো’সারাত জাহান মুনিয়ার ঝু’ল’ন্ত লা’শ উ’দ্ধারের পর আ’ত্মহ’ত্যায় প্র’রোচনা মা’ম’লার ত’দন্ত শুরু করেছে পুলিশ। হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীর সঙ্গে মুনিয়ার কিছু কথোপকথনের স্ক্রি’নশটের সূত্র ধরে মঙ্গলবার বিকেলে একটি সূত্র তাঁর কাছে কিছু তথ্য জানতে চায়।

শারুন বলেন, সূত্রের জানতে চাওয়া বিষয়গুলো তিনি জানিয়েছেন। তবে কে তাঁকে ফোন করেছিলেন, সে ব্যাপারে হুইপপুত্র কিছু বলতে চাননি। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হতে থাকে, মৃ’ত্যুর আগে শারুন চৌধুরীর সঙ্গে মোসারাত জাহান মুনিয়ার কথা হয়েছিল। এ কারণেই শারুনের সঙ্গে কথা বলে ওই সূত্র।

শারুন বলেন, তাঁর কাছ থেকে গতকাল বিকেলে একটি সূত্র মোসারাতের সঙ্গে কথোপকথনের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে জানতে চেয়েছে, তিনি মোসারাতকে চেনেন কি না। শারুন জানান, মোসারাতের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। গত বছর মোসারাত ফেসবুকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

তিনিই তাঁকে জানান, বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে তাঁর সাবেক স্ত্রীর সম্পর্ক হয়েছে। তবে শারুনের দাবি, মোসারাতের মৃ’ত্যুর পর ফেসবুকে তাঁর সঙ্গে কথোপকথনের যে স্ক্রিনশট ছড়া’নো হচ্ছে, সেগুলো মিথ্যা। সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ে এই কথোপকথনগুলোর ফরে’নসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করারও দাবি জানিয়েছেন শারুন।

শারুন-মুনিয়ার চ্যাটের অংশবিশেষ: মুনিয়াও শারুনকে আক্ষেপ করে বলতেন, ‘আপনার লাইফে আপনার ওয়াইফের আগে যদি আমি আসতাম।’ এর উত্তরে শারুন বলেছেন, ‘আমি ভালো মানুষ না। জাস্ট উপ’কার করি।’ কোন কোন চ্যাটে মুনিয়া লিখেছেন, ‘আমার আপনার ভেতরে যা হয়েছে ওইটা কেউ জানবে না। আপনি আমার জন্য অনেক করেছেন।’

নিজেদের মধ্যকার এসব চ্যাট নিয়ে অবশ্য উৎকন্ঠায় ছিলেন শারুন। সেই কথাই জানিয়েছিলেন মুনিয়াকে। উত্তরে মুনিয়া লিখেছিলেন ‘জি না, আমি ডিলিট করে দেই সব।’ এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যার পর গুলশান-২-এর ১২০ নম্বর রোডের ১৯ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান (মুনিয়া) নামের এক তরুণীর ম’রদে’হ উ’দ্ধার করে পুলিশ। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার উজির দিঘিরপাড় এলাকায়। এক লাখ টাকা ভাড়ায় মাস দুয়েক আগে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন মোসারাত।

এ ঘটনায় ওই তরুণীর বোন বাদী হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে একটি মা’মলা দা’য়ের করেন। মামলায় ওই তরুণীকে আ’ত্মহ’ত্যায় প্র’রোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে আনভীরের বিরুদ্ধে।

এসব বিষয়ে শারুন চৌধুরী ভোরের পাতাকে বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে এসব স্ক্রিনশট বানানো হয়েছে। এগুলো পুরোপুরি ভুয়া এবং বানোয়াট। মেয়েটার সাথে আমার গত এক বছরে কোনো যোগাযোগ হয়নি। হোয়াটসআ্যাপে কোনোদিন কথাই হয়নি। পৃথিবীর যেকোনো ডিজিটাল ল্যাবে এই স্ক্রিনশটগুলো পরীক্ষা করলেই সেগুলো ভুয়া প্রমাণিত হবে বলেও দাবি করেন তিনি।

২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাতের ঝু’ল’ন্ত লা’শ উদ্ধার করা হয়। গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ওই ফ্ল্যাটে বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের যাতায়াত ছিল। কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মুনিয়া আ’ত্মহ’ত্যা ক’রেছেন, তদন্ত করে দেখবে পুলিশ।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, গুলশানে তরুণীর মৃ’ত্যুর ঘ’টনা তদন্ত করছে পুলিশ। কারও অপরাধ থাকলে তাঁর শাস্তি হবে। চট্টগ্রাম-১২ আসনের সাংসদ সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে শারুন চৌধুরী। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে আ’ত্মহ’ত্যায় প্ররো’চনা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। শারুন ওই অভিযোগ অস্বী’কার করে আসছেন।