বিবাহিত ও বাচ্চার বাবার সঙ্গে প্রে’ম করা ঠিক হয়নি –মুনিয়া

কলেজছা’ত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার লা’শ উ’দ্ধারের ঘ’টনা নানা র’হস্যের জ’ন্ম দিয়েছে। গুলশানের লাখ টাকা ভাড়ার বাসায় ওই কলেজছা’ত্রী একাই থাকতেন। ঘ’টনার পর তার পরিবারের দা’য়ের করা মা’মলায় তাকে প্র’রোচনার অ’ভিযোগ আনা হয়েছে বসুন্ধ’রা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বি’রুদ্ধে।

মা’মলা দা’য়েরের পর আনভীরের দেশত্যা’গে নি’ষেধাজ্ঞা জা’রি করেছেন আ’দালত। ঘ’টনার পর আনভীরের স’ঙ্গে মুনিয়ার অন্তর’ঙ্গ ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছ’ড়িয়ে পড়ে। এতে নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ওই ত’রুণীর স’ঙ্গে আনভীরের কি স’ম্পর্ক ছিল।

মুনিয়া নিজের জী’বন কেন শে’ষ করেছেন। নাকি অন্য কোনো কারণে তার মৃ’ত্যু হয়েছে এমন নানা প্রশ্ন ঘুরে ফিরে এসেছে দিনভর। এ ঘ’টনায় বসুন্ধ’রা এমডিকে আ’সামি করা হলেও এ পর্যন্ত তার পক্ষ থেকে গ’ণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি।

বসুন্ধ’রা গ্রুপও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি। পু’লিশ ও ত’দন্ত সূত্র জানায়, গুলশানে মুনিয়ার ভাড়া বাসার দেওয়ালে টানানো ছিল আনভীর ও মুনিয়ার যৌথ অনেক ছবি। ওই বাড়ির মালিক আয়োজিত ২৩শে এপ্রিলের ইফতার পার্টিতে তোলা মুনিয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্র’কাশ করেন বাড়ির মালিকের মে’য়ে।

ওই ছবি নজরে পড়ে সায়েম সোবহান আনভীরের মায়ের। মুনিয়ার বাসা থেকে জ’ব্দ করা ডায়রিতে পাওয়া গেছে তার সর্বশে’ষ লেখা। ছয়টি ডায়রিতে নিজের ভালোবাসা, বি’ষাদ ও য’ন্ত্রণার কথা লিখেছেন মুনিয়া। উল্লেখ করেছেন ‘জীবনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের’।

তারপরই সোমবার সন্ধ্যার পর গুলশান-২-এর ১২০ নম্বর রোডের ১৯ নম্বর বাড়ির ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার লা’শ উ’দ্ধার করে পু’লিশ। এ ঘ’টনায় প্র’রোচনার অ’ভিযোগে ওই দিন রাতে গুলশান থা’নায় মা’মলা করেছেন মুনিয়ার বড় বোন ব্যাংক কর্মক’র্তা নুসরাত জাহান।

মা’মলায় প্র’রোচনার অ’ভিযোগ আনা হয়েছে সায়েম সোবহান আনভীরের বি’রুদ্ধে। পু’লিশ ইতিমধ্যে ২৩শে এপ্রিল থেকে ২৬শে এপ্রিল পর্যন্ত সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। জি’জ্ঞাসাবা’দ করেছে ওই বাড়ির নি’রাপত্তাকর্মী, বাড়ির মালিক, মালিকের জামাতা ইব্রাহিম আহমেদ রিপন ও তার স্ত্রী’’কে।

জি’জ্ঞাসাবা’দ করা হবে মডেল হিসেবে পরিচিত ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাকে। পু’লিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, ওই বাসায় আনভীরের যাতায়াত ছিল কিনা তা নিশ্চিত হতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অন্য কেউ ওই বাসায় ঘ’টনার আগে গিয়েছিল কিনা তাও ত’দন্ত করা হচ্ছে।

এ ছাড়াও নি’হত মুনিয়ার ময়নাত’দন্ত প্রতিবেদন পেলেই তার মৃ’ত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এই ঘ’টনায় আনভীর বা অন্য কারও প্র’রোচনার প্র’মাণ পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

ডিসি সুদীপ চক্রবর্তী জানান, এ ঘ’টনার মা’মলার পরপরই সায়েম সোবহান যাতে দেশ ছা’ড়তে না পারেন এজন্য অ’ভিবাসন ক’র্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে অ’নুরোধ করা হয়েছে।

সেইস’ঙ্গে দেশত্যা’গে নি’ষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য আ’দালতের অ’নুমতি চাওয়া হয়েছে। এদিকে, গুলশান-২-এর ১২০ নম্বর রোডের ১৯ নম্বর বাড়িতে গেলে কথা হয় নি’রাপত্তার’ক্ষী আব্দুল কুদ্দুসের স’ঙ্গে। তিনি জানান, গত ২২, ২৩শে এপ্রিল পরপর দু’দিন ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন সায়েম সোবহান আনভীর।

ফ্ল্যাট বি-৩ থাকতেন মুনিয়া। বাসাটি গত ১লা মা’র্চ দুই বছরের জন্য ভাড়া নেন মুনিয়া। মুনিয়ার নামে ভাড়ার চু’ক্তি থাকলেও সংশ্লিষ্টরা জানান বাড়ির মালিকের মে’য়ের জামাতা ইব্রাহিমের কাছে প্রতি মাসে ভাড়া ১ লাখ ও সার্ভিস চার্জ ১১ হাজারসহ ১ লাখ ১১ হাজার টাকা অন্য কেউ পাঠাতেন।

মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান জানান, তার বোন মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ঢাকায় থাকাকালেই আনভীরের স’ঙ্গে প’রিচয়। প’রিচয় থেকে প্রায়ই ফোনে কথা হতো। দেখা হতো বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে।

২০১৯ সালে স্ত্রী’’ প’রিচয়ে বনানীর একটি বাসা ভাড়া নিয়ে মুনিয়াকে নিয়ে থাকতেন আনভীর। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনভীরের পরিবার বিষয়টি জানতে পারে। ওই সময় ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাকে দিয়ে মুনিয়াকে নিজেদের বাসায় ডেকে নেন আনভীরের মা।

বাসায় নিয়ে তাকে হু’মকি-ধ’মকি দেন। আনভীরের স’ঙ্গে মেলামেশা করলে প’রিণতি হবে কঠিন। শ’র্ত দেন বেঁ’চে থাকতে চাইলে ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে। পু’লিশ ও নি’হতের পা’রিবারিক সূ’ত্রে জানা গেছে, ওই সময়ে আনভীরও তাকে কুমিল্লা চলে যেতে বলেন।

ওই সময়ে ক’রোনার প্র’কোপ দেখা দেয়। অবস্থা প্রতিকূল দেখে ঢাকা ছেড়ে কুমিল্লা চলে যান মুনিয়া। এরমধ্যে আবার আনভীর তাকে ডাকেন। বিয়ে করার প্রতিশ্রু’তি দেন। যেহেতু তার পরিবার এটি মানছে না তাই বিয়ে করে বাইরের কোনো দেশে মুনিয়াকে সেটেল করবেন বলে জানান।

এক পর্যায়ে গত ১লা মা’র্চ গুলশানের ওই বাসা দুই বছরের জন্য ভাড়া নেন মুনিয়া। স’ম্পর্ক ভালোই চলছিল তাদের। প্রায়ই ওই বাসায় আসা-যাওয়া করতেন আনভীর। দেয়ালে ঝুলানো ছিল তাদের অ’ন্তর’ঙ্গ বিভিন্ন ছবি। কিন্তু মুনিয়াকে নিয়ে বাইরে প্র’কাশ্যে ঘোরাফেরা করতেন না আনভীর।

গত ২৩শে এপ্রিল ওই বাড়ির মালিকের বাসায় ছিল ইফতার পার্টি। ওই পার্টিতে গিয়েছিলেন মুনিয়া। সেসব ছবি ফেসবুকে আপলোড করেন বাড়ির মালিকের মে’য়ে। এটি নজরে পড়ে পিয়াসার। পিয়াসার মাধ্যমে জানতে পারেন আনভীরের মা। এ নিয়ে আনভীরের স’ঙ্গে কথা হয় তার মায়ের।

তারপর আনভীর ক্ষো’ভ প্র’কাশ করেন মুনিয়ার ওপর। এ বিষয়ে মা’মলার এ জাহারে মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান উল্লেখ করেছেন, মুনিয়া তাকে ফোন করে বলেছে আনভীর তাকে বকা দিয়েছেন। বলেছেন, মুনিয়া ফ্ল্যাটের মালিকের বাসায় গিয়ে ইফতার করেছে কেন, কেন ছবি তুলেছে। এসব ছবি পিয়াসা দেখেছে।

পিয়াসা তার (আনভীর) মাকে সবকিছু জানিয়ে দিয়েছে। এজাহারে বলা হয়, আ’সামি মোসারাতকে বলে, তিনি দুবাই চলে যাচ্ছেন, সে যেন কুমিল্লায় চলে যায়। আ’সামির মা জানতে পারলে তাকে (মুনিয়া) মে’রে ফেলবেন। এজাহারে নুসরাত আরো উল্লেখ করেছেন, দু’দিন পর ২৫শে এপ্রিল মুনিয়া তাকে ফোন করেন। ওই সময় কা’ন্নাকা’টি করে মুনিয়া বলেন, আনভীর তাকে বিয়ে করবেন না, শুধু ভোগ করেছেন।

মুনিয়া তাকে আরো বলেছেন, আনভীর বলেছেন, মুনিয়া তার শ’ত্রুর স’ঙ্গে দেখা করেছেন। মুনিয়াকে তিনি ছাড়বেন না। মুনিয়া চিৎ’কার করে বলেন, আ’সামি তাকে ধোঁ’কা দিয়েছে। যেকোনো সময় তার বড় দু’র্ঘটনা ঘ’টে যেতে পারে। তারা (বাদী নুসরাতের পরিবার) যেন দ্রু’ত ঢাকায় আসেন।

আত্মীয়স্বজন নিয়ে মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত বেলা দুইটার দিকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় রওনা দেন। আসার পথে বারবার মুনিয়ার ফোনে কল করেন। কিন্তু তিনি আর ফোন ধ’রেননি। গুলশানের বাসায় পৌঁছে দরজায় নক করলে ভেতর থেকে কোনো সাড়া শ’ব্দ না পেয়ে নিচে নেমে আসেন।

তারা নি’রাপত্তার’ক্ষীর কক্ষ থেকে বাসার ইন্টারকমে ফোন করেন। পরে ফ্ল্যাটের মালিকের নম্বরে ফোন দিলে মিস্ত্রি এনে তালা ভে’ঙে ঘরে ঢোকার পরাম’র্শ দেন। মিস্ত্রি ডেকে তালা ভে’ঙে ভেতরে ঢোকার পর তিনি দেখেন, তার বোন ওড়না প্যাঁচিয়ে শোয়ার ঘরের সিলিংয়ে ঝু’লে আছেন।

এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, পু’লিশ এসে ওড়না কে’টে মুনিয়ার লা’শ নামায়। আলামত হিসেবে আ’সামির স’ঙ্গে ছবি, আ’সামির স’ঙ্গে প্রে;মের স’ম্পর্ক নিয়ে লেখা ডায়েরি ও তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইলফোন জ’ব্দ করে পু’লিশ। জানা গেছে, মুনিয়ার স’ঙ্গে সর্বশে’ষ তার বোনের কথা হয়েছে সকাল সাড়ে ৯টায়।

ওই ঘ’টনার আগে আনভীরের স’ঙ্গে ফোনে উ’ত্তপ্ত কথা হয় মুনিয়ার। এরকম একটি অডিও রেকর্ড ইতিমধ্যে প্র’কাশ পেয়েছে। এতে মুনিয়াকে ৫০ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে অ’ভিযোগ করেন আনভীর।

এমনকি তাকে অক’থ্য ভাষায় গা’লি দেন তিনি। পু’লিশ সূত্র বলছে, আ’সামির প্রত্যক্ষ ও প’রোক্ষ প্র’রোচনায় ২৬শে এপ্রিল সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে মুনিয়া মা’রা যান।

ওই বাসা থেকে ছয়টি ডায়েরি জ’ব্দ করেছে পু’লিশ। একটি ডায়েরিতে তার সর্বশে’ষ লেখা পাওয়া গেলেও এতে তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। এতে লেখা রয়েছে, ‘আনভীরের স’ঙ্গে প্রে;ম করা আমা’র ভু’ল ছিল। বিবাহিত ও বাচ্চার বাবার স’ঙ্গে প্রে;ম করা ঠিক হয়নি।

তবুও আমি তাকে ভালোবাসি। আমি বি’শ্বা’স করি, আ’ল্লাহর সিদ্ধান্ত ছাড়া বিয়ে হয় না। আনভীরের স’ঙ্গে আমা’র স’ম্পর্ক ন’ষ্ট করার চে’ষ্টা করা হচ্ছে। আনভীর আমাকে ভু’ল বুঝেছে। তাই আমি জীবনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কাল এসে আনভীর তার ভু’ল বুঝতে পারবে।’

তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট মুনিয়া। বাবা শফিকুর রহমান ছিলেন বীর মু’ক্তিযো’দ্ধা এবং প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদার। তাদের বাড়ি কুমিল্লার উজির দিঘিরপাড়। মা কাজী সেতারা বেগম ছিলেন ব্যাংকার। গত তিন বছর আগে মা ক্যান্সার আ’ক্রান্ত হয়ে এবং বাবা হৃদরো’গে আ’ক্রান্ত হয়ে মা’রা যান।

কুমিল্লা সদরে তাদের বহুতল বাড়ি এবং নিজস্ব মা’র্কেট রয়েছে। বড় ভাইয়ের স’ঙ্গে তাদের দু’বোনের পারিবারিক কিছুটা দূরত্ব রয়েছে। বাবা-মা মা’রা যাওয়ার পরে বড় বোন নুসরাত জাহান এবং বোন জামাই মো. মিজানুর রহমানের তত্ত্বাবধানে পড়ালেখা করতেন মুনিয়া।

বোন জামাই মিজানুর রহমান চাঁদপুরে অবস্থিত একটি ব্যাংকের কর্মক’র্তা। মুনিয়া মিরপুরের ন্যাশনাল বাংলা স্কুল থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হন। গত বছর (২০২০) এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও দিতে পারেননি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসএসসিতে পড়াকালীন মিরপুরে ছা’ত্রী হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা করতেন মুনিয়া।