ফোনে বড় বোনকে যে কথা বলে গেলেন মুনিয়া

মৃত্যুর আগের দিন বড় বোনের কাছে ফোন করেন মোসারাত জাহান মুনিয়া। তার ফোন পেয়ে পরদিন তড়িঘড়ি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন বড় বোন।

লকডাউন পেরিয়ে বোনের অভিজাত ফ্ল্যাটে এলেন ঠিকই, কিন্তু আদরের বোনটিকে আর জীবিত পেলেন না। পেয়েছেন মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ।

সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান দুই নম্বর অ্যাভিনিউয়ের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর প্লটের বি/৩ ফ্ল্যাট থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় রাত ৩টার দিকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে গুলশান থানায় মামলা করেন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান। মামলায় দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) আসামি করা হয়েছে।

নিহত মুনিয়ার বাড়ি কুমিল্লা সদরের দক্ষিণপাড়া উজির দিঘী এলাকায়। তার বাবার নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান। তিনি রাজধানীর একটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার পরিবার গ্রামেই থাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের মার্চ মাসে এক লাখ টাকা মাসিক ভাড়ায় ওই ফ্ল্যাটে ওঠেন মুনিয়া। তিনি ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন।

গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দরজা বন্ধ পান মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান। ধাক্কাধাক্কি করলেও দরজা খুলছিলেন না মুনিয়া।

এর কিছুক্ষণ আগে থেকে তার ফোনও বন্ধ ছিল। এরপর ফ্ল্যাটের মালিকের উপস্থিতিতে মিস্ত্রি দিয়ে দরজা ভেঙে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

তিনি বলেন, সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি শেষে লাশটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া সিসিটিভির ফুটেজ ও মুনিয়ার ডিজিটাল ডিভাইসগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। মেয়েটি কেন আত্মহত্যা করেছে এবং এর পেছনে কারো ইন্ধন রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ডিসি আরো বলেন, দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে মুনিয়ার পরিচয় ছিল। তিনি ওই ফ্ল্যাটে যাতায়াত করতেন বলেও তথ্য পেয়েছেন তারা।

নিহতের বড় বোন নুসরাত জাহান জানান, রোববার তাকে ফোন করে ঝামেলায় পড়েছেন বলে জানান মুনিয়া। তার সঙ্গে যেকোনো মূহুর্তে যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন বোনের কাছে।

মুনিয়ার এ কথা শুনে সোমবার কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। সন্ধ্যার দিকে ওই ফ্ল্যাটে গেলে দরজায় ধাক্কাধাক্কি করলেও মুনিয়া দরজা খুলছিলেন না। পরে বাইরে থেকে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে মুনিয়াকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখেন। এরপর বিষয়টি বাড়িওয়ালাকে জানালে পুলিশে খবর দেয়া হয়।