নিজে ইফতার বানিয়ে রোজাদারদের মাঝে বিতরণ করেন হিন্দু তরুণী

তিলোত্তমা শিকদার অনেকেরই পরিচিত মুখ। বিশেষ করে ছাত্রলীগের সবাই তাকে চেনেন। তিনি ডাকসুর সদস্যও। ছাত্রলীগের রাজনীতি করার পাশাপাশি ডাকসুর নেত্রী হওয়ায় বিভিন্ন সময় আলোচনায় ছিলেন তিনি।

এবারের রমজান মাসে অন্যরকম এক মানবিক উদ্যোগ নিয়ে আলোচনায় এসেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী তিলোত্তমা শিকদার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তিলোত্তমা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীদের উপ-সাংস্কৃতিক

বিষয়ক সম্পাদক। থাকেন কবি সুফিয়া কামাল হলে। করো’নাভাই’রাস ঠেকাতে লকডাউন ঘোষণার ৩-৪ দিন আগে চলে যান নিজ শহর বরিশালে। ভাবতে পারেননি এতদিন লকডাউন থাকবে; তাই চাইলেও এখন ঢাকায় আসতে পারছেন না তিনি।

এরই মধ্যে গতকাল শনিবার থেকে শুরু হয়েছে রমজান মাস। লকডাউনে নিম্নআয়ের অনেক মানুষ সেহরি না খেয়েই রোজা রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। অনিশ্চিত তাদের ইফতারের আয়োজন। এসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন ডাকসুর সদস্য ছাত্রলীগ নেত্রী তিলোত্তমা

শিকদার। প্রথম রমজান থেকে নিজের বাসায় রান্না শুরু করেছেন ইফতার। বাসায় তৈরি করা ইফতার নিয়ে ছুটছেন বরিশাল শহরের বিভিন্ন এলাকায়। প্রথম রমজান থেকে শুরু করা এই ইফতার আয়োজন চলবে শেষ রমজান পর্যন্ত। সনাতন ধ’র্মাবলম্বী একটি মে’য়ের এমন মানবিক উদ্যোগ যেন সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত।

শুধু তাই নয়; লকডাউনের কারণে বিপদে পড়া ছাত্র-ছা’ত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিলোত্তমা শিকদার। ঢাবির ছাত্রদের মধ্যে যারা লকডাউনের কারণে টিউশনি বা বিকল্প আয়ের পথ হারিয়ে বিপদে পড়েছেন তাদের নাম সংগ্রহ করে সহযোগিতা করছেন তিলোত্তমা। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা

ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিকাশে টাকা পাঠাচ্ছেন তিনি। নিজ হল এবং আশপাশে যারা বিভিন্ন বাসায় আ’ট’কা পড়েছেন; তাদের জন্য ১০ কেজি চাল, দুই কেজি ডাল, দুই লিটার তেল ও আটা উপহার হিসেবে পাঠাচ্ছেন তিলোত্তমা। ফোনে এবং বিকাশে টাকা পাঠিয়ে এসব উপহার সামগ্রী কিনে তা পাঠিয়ে দিচ্ছেন ছাত্র-ছা’ত্রীদের বাসায়।

ইতোমধ্যে ২১ জন ছা’ত্রী এবং ১১ জন ছাত্রকে দুই হাজার টাকা করে বিকাশে পাঠিয়েছেন তিনি; যেন তারা করো’নাভাই’রাসের সংকটে মনোবল না হারায়।এসব বিষয়ে জাগো নিউজের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’র্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তিলোত্তমা শিকদার।

তিলোত্তমা বলেন, ভেবেছিলাম ঢাকায় ফিরব। কিন্তু লকডাউনের কারণে আ’ট’কা পড়েছি। আ’ট’কা পড়লেও সহপাঠী, ছোট ভাই-বোনদের বিপদে পাশে আছি। ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে চাইলে সবসময় মানুষের পাশে থাকা যায়। এজন্য মানবিক হওয়া জরুরি।

তিনি বলেন, লকডাউনের শুরুতে বিপদে পড়ে আমা’র নিজ হল অর্থাৎ কবি সুফিয়া কামাল হলের কিছু ছা’ত্রী। আমি সবাইকে জানাই; যাদের সমস্যা হচ্ছে আমাকে বলার জন্য। আমি গো’পনে সহায়তা পৌঁছে দেব। সেখান থেকে প্রায় ১০০ জনের নাম আসে। আমি যেহেতু এখানে আ’ট’কা পড়েছি; তাই সংগঠনের ছোট দুই ভাই এবং এক বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় গো’পনে ১০০ জনের কাছে খাদ্যসামগ্রী পাঠাই। এরপর আরও বেশ কিছু বার্তা পেয়েছি; যারা বিভিন্ন মেসে আ’ট’কা পড়েছে তাদের। তাদেরও সহায়তা করেছি। পাশাপাশি পরিচিতদের মাধ্যমে অনেকের জন্য গো’পনে খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়েছি।

তিলোত্তমা শিকদার বলেন, এর মধ্যে এমন কিছু ছাত্র-ছা’ত্রীর খবর পেয়েছি; যারা টিউশনি করে লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজের পরিবার চালায়। এমন ২১ জন ছা’ত্রী এবং ১১ জন ছাত্রকে বিকাশে দুই হাজার টাকা করে দিয়েছি। যদিও এই টাকা কিছুই না। কিন্তু আমা’র সাম’র্থ্য অনুযায়ী যতটুকু পেরেছি তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এসব ছাত্র-ছা’ত্রীর অনেকেই এখন পরিবারের সঙ্গে বাড়িতে রয়েছেন। তিলোত্তমা আরও বলেন, বেশি মেসেজ পাচ্ছি মে’য়েদের। কারণ মে’য়েরা সবার কাছে সমস্যার কথা বলতে পারে না। যারা শেয়ার করেছে তাদের কাছে ভালোবাসার উপহার পৌঁছে গেছে। ইতোমধ্যে ডাকসু থেকে শিক্ষার্থী সহায়তার ফান্ড চালু হয়েছে। আমা’র কাছে যারা সাহায্য চেয়েছেন সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। শেষ পর্যন্ত সবার পাশে থাকতে চাই আমি। ঢাবির সব শিক্ষার্থী নিরাপদে থাকুন, এটাই চাই। করো’নার ভ’য় কে’টে যাবে। আবার আম’রা স্বাভাবিক জীবনে ফিরব- সেটাই প্রত্যাশা।

তিলোত্তমা বলেন, এরই মধ্যে শনিবার থেকে শুরু হলো রমজান মাস। ধ’র্মপ্রা’ণ মু’সলমান একটা বছর অ’পেক্ষা করে রমজানের জন্য। কিন্তু এবার রমজানের আগে থেকেই শুরু হয়ে গেল করো’না। এর প্রভাব পড়েছে রমজানের ওপর। এ অবস্থায় করো’নার সংকটের কারণে অনেকের বাসায় ইফতারের ব্যবস্থা নেই। অনেকের ঘরে খাবার নেই। তাই প্রথম রমজান থেকে বাসায় ইফতার তৈরি করে রাস্তায় বের হয়েছি। সামাজিক দূরত্ব মেনে শতাধিক মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ করেছি শনিবার। তিনি বলেন, এই ইফতার বিতরণ আমা’র কাছে জীবনের অন্যতম আনন্দের এক মুহূর্ত মনে হয়েছে। কারণ এসব মানুষ ইফতার পেয়ে যে খুশি হয়েছেন তা দেখে আমা’র মন ভরে গেছে। আমা’র জীবন ধন্য হয়ে গেছে। আমা’র মন চায় এসব মানুষকে আরও দেয়ার, আরও সহযোগিতা করার। যদি প্রতিদিন এক হাজার মানুষকে ইফতার দিতে পারতাম আরও বেশি তৃপ্তি পেতাম। মনের তৃপ্তির জন্য এবার পুরো মাস দরিদ্র মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ করব। ইফতার বিতরণ করতে গিয়ে এমন কিছু মানুষ পেয়েছি যারা সাহরি না খেয়েই রোজা রেখেছেন। আমি চেষ্টা করছি, আমা’র আয়োজনটা আরেকটু বড় করার।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় জাগো নিউজকে বলেন, খুবই ভালো কাজ করছেন তিলোত্তমা। এলাকার মানুষের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করেছেন। ঢাবির ছাত্র-ছা’ত্রীদের সহযোগিতা করছেন। ছাত্রলীগের সবাইকে তার মতো এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন ও ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ শি’বলী রুবাইয়াতুল ইস’লাম জাগো নিউজকে বলেন, এক মাস ধরে খুব ভালো কাজ করছেন তিলোত্তমা। তার পাশাপাশি ডাকসুর সবাই কাজ করছেন। আমি খুব খুশি তাদের কাজে। জাতীর এই সংকটে তাদের এগিয়ে আসা আমাদের স্বপ্ন দেখায়, প্রত্যাশা রাখি দু’র্যোগ কে’টে যাবে। আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।