কারাব’ন্দি আসলাম চৌধুরীর মে’য়ের ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস

ইস’রায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার উৎখাত ষড়যন্ত্রের অ’ভিযোগে ২০১৬ সালের ১৫ মে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে পু’লিশের হাতে গ্রে’ফতার হন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও চট্টগ্রামের আ’লোচিত নেতা আসলাম চৌধুরী। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। ওই বছরের ২৬ মে রাষ্ট্রদ্রোহের অ’ভিযোগে তার বি’রুদ্ধে একটি মা’মলা দায়ের করেন ডিবি পু’লিশের পরিদর্শক গো’লাম রব্বানী।

এরপর ১৪৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অ’ভিযোগ এনে রাইজিং এগ্রো ফার্মা’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রাইজিং স্টিল মিলস লিমিটেডের জামিনদার বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বি’রুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক মো. মোশারফ হোসেইন মৃধা বাদী হয়ে চট্টগ্রামের হালিশহর (সিএমপি) থা’নায় মা’মলা দায়ের করেন।

এর আগে ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইস’লামীসহ সমমনা ১২ ইস’লামী দল হরতা’লের ডাক দেয়। এর সম’র্থনে ওই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় কোতোয়ালি থা’নাধীন বাবুবাজার জামে ম’সজিদের সামনে মিছিল বের হলে পু’লিশ বাধা দেয়।তখন পু’লিশের ওপর ইটপাট’কেল নিক্ষেপ করা হয়। পু’লিশও আত্ম’রক্ষার্থে লা’ঠিচার্জ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পু’লিশের ওপর মিছিলকারীরা ককটেল ও গু’লি চালায়। এ ঘটনায় এসআই এরশাদ হোসেন বাদী হয়ে ওই দিন রাজধানীর কোতোয়ালি থা’নায় ১০১ জনের নাম উল্লেখ করে মা’মলা করেন।এছাড়া আরও দুই থেকে আড়াইশ’ অ’জ্ঞাতনামাদের আ’সামি করা হয়। এই মা’মলায় আ’সামি হিসেবে আসলাম চৌধুরীকে চলতি বছরের গত ১৮ জানুয়ারি গ্রে’ফতার দেখায় পু’লিশ।

এখন পর্যন্ত বিএনপির এই নেতাকে ৬৮টি মা’মলায় গ্রে’ফতার দেখানো হয়েছে। সর্বশেষ আট বছর আগের ওই নাশকতার মা’মলায় তাকে গ্রে’ফতার দেখিয়ে রি’মান্ডে নিতে চেয়েছিল পু’লিশ। শুনানি নিয়ে আ’দালত তাকে তিন দিন জে’লগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেন।

এর মধ্যে আ’দালত থেকে কয়েকবার জামিনে মুক্তি পেলেও আবার জে’লগেটে অন্য মা’মলায় গ্রে’ফতার দেখিয়ে কারাব’ন্দি করা হয় এই নেতাকে।

পাঁচ বছর ধরে কারাব’ন্দি আসলাম চৌধুরীর একমাত্র সন্তান মেহরীন আনহার উজমা তার বাবাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। উজমা’র শেয়ার করা স্ট্যাটাসটি ইতোমধ্যে ভাই’রাল হয়ে গেছে।

কারাব’ন্দি বাবাকে নিয়ে মেহরীন আনহার উজমা’র স্ট্যাটাসটি হুবহু পাঠকদের জন্য তুলে ধ’রা হলো:
আমা’র বাবা আসলাম চৌধুরী- ‘আমি প্রশান্ত মহাসাগরের নীল জলরাশি দেখিনি, কখনো মাপতে যাইনি এর গভীরতাও, কিন্তু দেখেছি আমা’র বাবাকে যার হৃদয় এতটাই গভীর যে তার অবুঝ সন্তান এই গভীরতায় যেভাবে ইচ্ছে বিচরণ করতে পারি সামুদ্রিক প্রা’ণিকুলের মতো’।

হ্যাঁ, আমি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত রাজনৈতিক দল বিএনপি নেতা ৫ বছর ধরে মিথ্যা অ’ভিযোগে কারান্তরিত এবং নির্যাতিত মো. আসলাম চৌধুরীর একমাত্র সন্তান। সম্পূর্ণ মিথ্যা অ’ভিযোগে তিনি আজ আমা’র ছোট তিনজনের পরিবার এবং বাবার বৃহৎ পরিবার বিএনপি থেকে ৫ বছর ধরেই বিচ্ছিন্ন। অথচ নিজের ক্যারিয়ারে সম্পূর্ণ সফল। আমা’র বাবা আর্থিক কারণে নয়; কেবলমাত্র নিজ এলাকা সীতাকুণ্ডের জনসাধারণের কল্যাণার্থে এবং বিএনপির প্রতি ভালোবাসার কারণেই রাজনীতিতে আসা তার। বাবা একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, চাকরি জীবনের শুরুতে বিসিএস কর্মক’র্তাও ছিলেন। ব্যবসায়িক জীবনেও সফল ছিলেন আমা’র বাবা। পরবর্তীতে তিনি লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমা’র বাবার সমস্ত ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক অর্জন, সেই সঙ্গে আমা’র পরিবার ধ্বংসপ্রায়।

২০১২ সাল থেকে আমা’র বাবাকে বিভিন্ন মিথ্যা মা’মলায় হয়’রানির শিকার হতে হয়। এরপর ২০১৬ সালে আমা’র দেশপ্রে’মিক বাবাকে সম্পূর্ণ বানোয়াট মা’মলায় গ্রে’ফতার করা হয়, যার কোনো বিন্দু পরিমাণ সত্যতা নেই। বাবা নিজেও অনবরত কারাব’ন্দিত্বে শারীরিক এবং মানসিক নাজেহাল হয়ে অ’সুস্থ প্রায়। বাবার অনুপস্থিতিতে তার অর্জিত ব্যবসা বাণিজ্যও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। এছাড়া আমা’র মাকেও হতে হচ্ছে বিভিন্নভাবে নাজেহাল। বাবার অবর্তমানে মা আর আমি শুধু অন্ধকারই দেখছি চারিদিকে। এতকিছুর পরেও আমা’র সাহসী বাবা পথভ্রষ্ট হননি, অন্যায়ের কাছে মা’থানত করেননি। যে রাজনীতি সারাজীবনের অর্জিত জীবনকে ধ্বংস করে, পরিবারের সদস্যদের শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতির কারণ হয়; কি দরকার সেই রাজনীতির সাথে যু’ক্ত থাকার? আপনারা যারা আজ মিথ্যা অ’ভিযোগে, অযৌক্তিক কারণে বাবাকে গত ৫ বছর ধরে কারান্তরীণ রেখেছেন, যার ফলে প্রতিনিয়ত আমি হচ্ছি বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত, আপনাদেরও কি পরিবার নেই, সেই যন্ত্র’ণা কি আপনাদের অনুভবে আসে না? প্রসঙ্গত, আমি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।

২০১৬ সালে বাবার গ্রে’ফতারের পরদিন আমা’র ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা ছিল। কী’ মানসিক ক’ষ্ট নিয়ে আমি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলাম তা শুধু আমি উপলব্ধি করতে পারি। সেই ২০১২ সাল থেকে বাবা আমাদের কাছ থেকে দূরে। কেউ কি একবারের জন্যও ভেবে দেখেছেন পরিবারের এই ছোট্ট মে’য়েটির কথা? আমা’র দিকে তাকিয়ে মা নীরবে কাঁদেন। আমাকে দেওয়ার মতো সান্ত্বনা হয়তো মায়ের ঝুলিতে ফুরিয়ে গেছে। আজ যারা নি’র্যাতনের ছড়ি ঘুরাচ্ছেন, মনে রাখবেন নিঃস’ন্দেহে সবার ওপরে একজন তো আছেনই- তিনি তো উত্তম বিচারক’র্তা। ইনশাআল্লাহ, আমি তার ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে আজ আমা’র বাবা এবং পরিবারের নি’র্যাতনের ভা’র সেই মহানের ওপরই অর্পণ করছি। তিনিই অবশ্যই এর বিচার করবেন। সব নি’র্যাতনের অবসান হোক। সহসা বাবা মুক্তি পাক। আর কোনো মিথ্যা মা’মলা নয়। আমি চাই আমাদের তিনজনের ছোট পরিবারটি আবার এক হোক।