এলাকাবাসীর আয়োজনে মহা ধুমধামে প্রতিব’ন্ধী যুগলের বিয়ে

দৃষ্টি প্রতিব’ন্ধী কালাম ব্যাপারী (২২) এবং শ্রবণ ও বাক-প্রতিব’ন্ধী সুমা আক্তার (১৮), দুজনেরই বসবাস বরিশাল নগরীর পলা’শপুর গুচ্ছগ্রামে। সুমা’র বিয়ে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তার বাবা। একই অবস্থা ছিল কালামের অভিভাবকদেরও। অবশেষে তাদের চার হাত এক করে দিয়েছে এলাকাবাসী। সব খরচ বহন করে ধুমধাম অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই রোববার (৭ মা’র্চ) তাদের বিয়ে দেন তারা।

এ উপলক্ষে পুরো পলা’শপুর গুচ্ছগ্রামে বয়ে যায় আনন্দের ঢেউ। সামর্থ্য অনুযায়ী ফুল আর রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হয় বর ও কনের বাড়ি। দুই দিন ধ’রে চলে নানা অনুষ্ঠান। প্রতিবেশীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ,গান-বাজনা হৈ-হুল্লোড়, নাচানাচি কোনো আয়োজনেরই কমতি ছিল না এ বিয়েতে।

তার দুজনের পরিবারই অস্থা’য়ীভাবে ৫ নম্বর গুচ্ছগ্রামের ২ নম্বর লেনে বাস করে।

তাদের প্রতিবেশীরা জা’নান, কালামের গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজে’লার কালীগঞ্জ গ্রামে। মা-বাবা নেই। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে ছোট। বড় ভাই আবদুস সালামও বুদ্ধি প্রতিব’ন্ধী। গুচ্ছগ্রামের ২ নম্বর লেনের দুই কক্ষের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন দুই ভাই। দিন মজুরি করে দিনে ৪০০-৫০০ টাকা রোজগার করেন কালাম। তাদের বাসার কাছেই ভাড়া থাকে কনের পরিবার। কনে সুমা’র বাবা বাবুল পালোয়ান পেশায় রিকশাচালক। দুই মেয়ে, এক ছেলে নিয়ে ৫ জনের সংসার বাবুলের।

বেশ কিছুদিন ধ’রে তিনি মেয়ে সুমা’র বিয়ে দেয়ার চিন্তা করছিলেন। তবে শ্রবণ ও বাক-প্রতিব’ন্ধী মেয়েকে কে বিয়ে করবে? আর বিয়ের খরচই বা কোত্থেকে আসবে? সেই দু’শ্চিন্তায় ডুবেছিলেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে এক প্রতিবেশীর স’ঙ্গে কথা বললে একজন, দুজন করে অনেকেই শোনেন কন্যাদায়গ্রস্ত এ পিতার চিন্তার কথা। এরপর প্রতিবেশীরাই সুমা’র বর হিসেবে কালামকে বেছে নেন। তাদের মধ্যস্থতায় উভ’য় পরিবারই কালাম-সুমা’র বিয়েতে সম্মতি দেন।

বিয়ের ব্যব’স্থা তো হলো। এবার এলো খরচের চিন্তা। সেজন্য বিয়েতে কোনো ধ’রনের আনুষ্ঠানিকতায় রাজি ছিল না কালাম-সুমা’র পরিবার। সেখানেও এগিয়ে আসেন এলাকাবাসী। তারা ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নিলে বিয়ের তারিখ নির্ধারিত হয়।

মেয়েকে খালি হাতে শ্বশুরবাড়িতে পাঠায়নি এলাকাবাসী। দেয়া হয়েছে আলমা’রি, খাট, লেপ-তোষক। শুধু তাই নয়, বর-কনের বাড়ি পাশাপাশি হলেও ফুল দিয়ে সাজানো ঘোড়ার গাড়ি চড়িয়ে তাদেরকে ঘোরানো হয় পুরো এলাকা। এই বিয়েতে নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কেফায়েত হোসেন রনি ছাড়াও কয়েকজন গণ্যমান্য ব্য’ক্তি উপস্থিত ছিলেন।

কাউন্সিলর কেফায়েত হোসেন রনি বলেন, তাদের পরিবারের এমন ধুমধাম আয়োজনের সামর্থ্য ছিল না। তবে এলাকাবাসী পাশে দাঁড়িয়েছে বলে একটি সাধারণ বিষয়কে অসাধারণ রূপ দিতে পেরেছে। সবাই মিলে মিশে এক স’ঙ্গে উদ্যো’গ নিলে কোন কিছুই থেমে থাকে না। শুধু আমাদের মা’নসিকতার পরিবর্তন দরকার। তাহলেই সবার পাশে আম’রা দাঁড়াতে পারব।