মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জামসা ইউনিয়নের নয়পাড়া গ্রামের সুজাতা। মানিকগঞ্জের সবাই তাকে লেডি বাইকার হিসেবে চেনেন। এবার তিনি গত ২০ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পযর্ন্ত মাত্র ১৫ দিনে বাইক নিয়ে ঘুরে আসলেন বাংলাদেশের ৬৪ জেলা।
প্রথম দিনে চালিয়েছিলেন সাড়ে ৫০০ কিলোমিটার রাস্তা। প্রতিটি জেলার সার্কিট হাউসে গিয়ে তুলেছেন স্টিল ছবি। গিয়েছেন জেলার দর্শনীয় স্থানেও। ইয়ামাহা রাইর্ডাস ক্লাবের সাভার জোনের স্বক্রিয় সদস্যও সুজাতা। রাস্তায় থামলেই উৎসুক জনতা ঘিরে ধরতও তাকে।
এ সময় তার সঙ্গী হয়েছিল তার প্রিয় পোষা কুকুর জিমি। জিমির চার মাস বয়স থেকে সুজাতার সঙ্গে রয়েছে। বাইক চালিয়ে একা কোনো নারীর ৬৪ জেলা ভ্রমণ এটাই প্রথম দাবি সুজাতার। এর আগে বাইক চালিয়ে মাত্র ২৮ ঘণ্টায় টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পৌঁছে রেকর্ড গড়েন তিনি।
জানা গেছে, ঢাকার প্রাইম ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে লেখাপড়া করছেন। মাঝে পুলিশ সদস্য হিসেবে চাকরি নিয়েছিলেন। এক বছরের মাথায় স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে চলে আসেন সুজাতা। বাইক নিয়ে মেয়ের এমন মাতামাতিতে ছোটবেলা থেকে উৎসাহ দিয়ে এসেছেন তার মা আকলিমা মমতাজ শান্তি। সাহসী নারী সুজাতার মোটরসাইকেল চালানো নেশার মতো।
এতে এলাকাবাসী ও স্বজনরা লেডি বাইকার সুজাতাকে নিয়ে গর্ববোধ করেন। সুজাতার ৯ মাস বয়সে তার মায়ের সঙ্গে বাবা মফজেলের বিচ্ছেদ ঘটলে এক মেয়েকে নিয়ে উপজেলা ভূমি অফিসে চর্তুথ শ্রেণির চাকরি করে সুজাতার সুখের জোগান দিচ্ছেন মা। চার বছরের কুকুর জিমি ও ২৩ বছরের যুবতী লেডি বাইকার সুজাতা ১৩ বছর ধরে বাইক চালাচ্ছে।
সুজাতার সঙ্গে কথা হয় সময় নিউজের বিশেষ প্রতিবেদক মো. ইউসুফ আলীর। সুজাতা তাকে জানান, আপনিই প্রথম এসেছেন টিভিতে ও অনলাইনে নিউজ করা জন্য। এটা নিউজ হবে তা আমার জানা ছিল না।
সিংগাইরের নয়পাড়া গ্রামের গিয়েছিলাম ১০ জানুয়ারি ভোর ৭টায়। তিন সদস্যের পরিবার সুজাতা তার মা আকলিমা বেগম ও পঞ্চবানু। বাড়িতে রয়েছে তার সুজাতার আদরের জিমিসহ আরও ছোট-বড় কয়েকটি কুকুর।
সুজাতা জানায়, ছোট বেলায় বাবার সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদ হওয়ার পর মা নানির বাড়ি নয়পাড়া থাকেন। সেখানেই তার বেড়ে উঠা। মায়ের বাইক চালানো দেখেই তার বাইকের প্রতি আগ্রহ ছিল। নারী হওয়া মায়ের এমন সংগ্রামী জীবন হওয়া সেও তা আপনা আপনি রপ্ত করে। একসময় সমাজ আড়ালে কিছু বললেও এখন তা অনেক সহজ হয়েছে।
তাই গ্রামের রাস্তাঘাট পার হয়ে সে ২৮ ঘণ্টায় টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পৌঁছে রেকর্ড গড়েন। তারপর ঘুরে আসেন ৬৪ জেলায়। এখন সে সম্ভাব হলে বাইক নিয়ে বিদেশও ভ্রমণ করতে চান। আর এসব সম্ভব হয়েছে তার মা আকলিমা আক্তার শান্তির জন্য।
বাইকার সুজাতার মা জানান, মেয়েকে মেয়ে হিসাবে না একজন সন্তান হিসেবে যতুটুকু করার দরকার আমি করেছে। ওর ইচ্ছা প্রতি গুরুত্ব দিয়েছি। যখন যা চায় তা দিয়েছি। লেডি বাইকার হিসেবে আমি ওকে দেখতে চেয়েছি। তাই আমার ইচ্ছায় সে পুলিশের চাকরি থেকে চলে এসেছে। আমাদের বাড়িতে ওর কয়েকটি কুকুর ও সুজাতার প্রিয় পোষা কুকুর জিমি আছে। সুজাতা যেখানে যায় জিমিকে নিয়ে যায়।
সুজাতার নানি পঞ্চবানু জানায়, মেয়ে শান্তি যখন স্বামীর নির্যাতনে সইতে না পেরে চলে আসে ও বিচ্ছেদ হয়। তখন সুজাতার বয়স মাত্র ৯ মাস। তাই সুজাতার মাকে আমি বাড়ির কিছু জায়গা দিয়ে তার সঙ্গে রয়েছে। ছোট একটি সরকারি চাকরির ওপর শান্তির সংসার।
তারপরও সুজাতার মায়ের দিকে তাকিয়ে কেটে যাচ্ছে শান্তির সংসার। শান্তি যখন বাইক চালাই তো তখন কেউ কেউ বলতে মেয়ে হয়ে আবার বাইক চালায়। তবে এখন তা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সুজাতার ইচ্ছা বাইক নিয়ে বিদেশ যাবে। কিন্তু আমার তো টাকা অভাব।
সুজাতার মামা মো. রফিক মিয়া জানান, সুজাতা খুব ভালো মেয়ে। আমরা সুজাতাকে নিয়ে গর্ব করি। সুজাতার বান্ধবী তাসলীমা আক্তার জানায়, ছোট বেলা থেকে সুজাতার বাইকের প্রতি আলাদা কৌতূহল ছিল। আমাদের বাইকে নিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে যেত।
এখন তো দেশের মধ্যে নাম করছে। ওর নাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে আমরা আরো গর্বিত। সুজাতার প্রতিবেশী খায়রুল বলেন, সুজাতা শুধু বাইক নয় পড়াশোনায়ও ভালো। আমরা তার আরো উন্নতি আশা করি।