ফসলের মাঠে ফুটে উঠল বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালবাসা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ফসলের মাঠে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলেছেন কৃষক আব্দুল কাদির। পাশাপাশি ফসলের মাঠে ফুটিয়ে তুলেছেন স্মৃতিসৌধ, নৌকা, শাপলা ও মুজিববর্ষ।

ঈশ্বরগঞ্জের পাড়া খালবলা গ্রামের তারা মিয়ার ছেলে আব্দুল কাদির। কৃষিকাজ করেই সে জীবিকা নির্বাহ করে। আদর্শ কৃষক হিসাবে এলাকায় তার সুনামও আছে। স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করতে গত বছর ফসলের মাঠে ভালবাসার জমিন

নামে বিশেষ শৈল্পিককর্ম ফুটিয়ে তোলে আলোচনায় আসেন কৃষক আব্দুল কাদির। এবার মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ও

দেশের প্রতি ভালবাসার তাড়না থেকেই ব্যতিক্রম কিছু করার ভাবনা থেকেই ফসলের মাঠে এই বঙ্গবন্ধুর শৈল্পিক প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলেছেন বলে জানিয়েছেন আব্দুল কাদির।

মোট ৩২ শতক জমিতে শৈল্পিক বুননে ফসলের মাঠকে করে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন। প্রতিদিন শতশত মানুষ কৃষক কাদিরের ক্ষেত দেখতে ভিড় করছেন।

সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শতশত উৎসুখ লোক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা ছাড়াও এসেছেন অনেক নারী। ক্ষেতে চোখ পড়লে দেখা যায় ছবির মতো আঁকা নৌকার পাশে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ছাড়াও স্মৃতিসৌধ ও শতবর্ষ লিখনি। যেন কোনো শিল্পি এঁকে রেখেছেন।

সরিষা ও লাল শাক বুনন এমন ভাবেই করা হয়েছে যা ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও নৌকাসহ স্মৃতিসৌধ। বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে উঁচু টাওয়ার। যেখানে উঠে ছবি তুলছেন অনেকেই। কথা হয় কৃষক আব্দুল কাদিরের সঙ্গে। তিনি

বলেন, তাঁর গ্রামে একটি বন্ধুমহল ডিজিটাল ক্লাব রয়েছে। তিনি সেই ক্লাবের উপদেষ্টা সদস্য। ক্লাবের সদস্যরা তাঁর কাছে ডিজিটাল পদ্ধতির কিছু একটা করে দেখানোর আবদার করে। ক্লাবের সদস্যদের দাবির প্রেক্ষিতে তাঁর মাথায় আসে স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে পাওয়া রবি শষ্য সরিষা ও লাল শাক প্রদর্শনী প্লটে চিত্রকলার আলোকে বীজ বপন করে কিছু নতুনত্ব

সৃষ্টি করা যায় কি-না। এর মধ্যে ঘটে যায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে বির্তক। ঘটে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভাঙচুর।

সর্বক্ষেত্রেই প্রতিবাদ হচ্ছে। এই প্রতিবাদ জানাতেই তিনি জমিন চাষ করে প্রথমে চিত্রাংকন করে বঙ্গবন্ধুর মুখায়ব আঁকেন ক্লাবের সদস্যদের সহায়তায়। আরো আঁকেন নৌকা, স্মৃতিসৌধ ছাড়াও ‘লাভ’ এর অক্ষর। চিত্ররেখার মাঝেই বারী-১৫ জাতের সরিষা ও লাল শাকের বীজ বপন করেন। জমিনে সেই বীজ গজানোর পর পুরো ক্ষেত যেন জীবন্ত ছবির মতো রূপ ধারণ করে।

বন্ধুমহলের সদস্যরা এর নাম দিয়েছে জমিনেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা। এই কারুকার্যময় চিত্ররূপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় তা দেখার জন্য প্রতিদিন শতশত মানুষ ক্ষেতের পাশে ভিড় করছে। তুলছে সেলফি।

ক্ষেত ঘুরে দেখা যায় দুই পাশে রয়েছে দুটি নৌকা, মাঝখানে বড় আকারের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, আরেক পাশে স্মৃতিসৌধ ও চারপাশে চারটি লাভ। কাদির বলেন, আমার নেতা বঙ্গবন্ধুর জন্য কিছু করতে পারলাম না। তাই এখন থেকে প্রতিবছর

এই মৌসুমে বিজয়ের মাসে আমার এই ক্ষেতটিতে এ ধরনের নকশি একে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করব। মানুষ জানবে, বঙ্গবন্ধুকে কখনো ভাঙা বা মুছে ফেলা যায় না।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, এ কেমন ভালোবাসা। যা দেখে নিজেই চমকে গেলাম। যা আমরা পারছি না। তা দেখিয়ে দিলেন কৃষক আব্দুল কাদির। আমার জানা মতে এটাই দেশের প্রথম জমিনে চিত্রাংকনসহ ভালোবাসার নিদর্শন।