ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়ে সাতক্ষীরার তালায় শেখ রিয়াদ বাবু নামে এক যুবকের আত্ম;হ;ত্যা;র ঘটনা নিয়ে অপরাজনীতি চলছে। ঘটনাটিকে ছাত্রলীগে পদ না পেয়ে আত্ম;হ;ত্যা বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। শনিবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমনটাই দাবি করেছে তালা উপজেলা ছাত্রলীগ।
তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ সাদী ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর আলম সুমন স্বাক্ষরিত ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শেখ রিয়াদ হোসেন বাবু তালা উপজেলা শাখার কোনো পদে ছিলেন না। পারিবারিক টানাপোড়েনে তিনি আত্ম;হ;ত্যা করেছেন। বাবুর মৃ;ত্যুর ঘটনায় তালা উপজেলা ছাত্রলীগ মর্মাহত। আত্ম;হত্যার ঘটনাটি নিয়ে অপরাজনীতি করে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চলছে।
রিয়াদ হোসেন বাবু তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের শেখ মনজুরের ছেলে। শুক্রবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে নিজ বাড়িতে তিনি বিষপান করেন। পরে তাকে উদ্ধার করে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার মৃ;ত্যু হয়।
খলিলনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহম্মেদ জানান, বাড়িতে টাকার জন্য বাবা ও মামা চাপ দিতো, বকাঝকা করতো। শুনেছি বাবু নেশা করতো। শুক্রবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সে আত্ম;হ;ত্যা করেছে।
তালা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী রাসেল বলেন, পারিবারিক অশান্তির কারণে বাবু আত্ম;হ;ত্যা করেছে বলে ধারণা করছি। ছেলেটি একটু ভিন্ন ধরণের ছিল, নেশা করতো। এসব নিয়ে পরিবার থেকে তাকে ভালো হওয়ার জন্য বলা হতো। সে ছাত্রলীগে পদ না পেয়ে আ;ত্মহ;ত্যা করেছে এমন বিষয় আমার জানা নেই।
পাঠকদের জন্য তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-
নিজের কাছেই অবাক লাগছে। আজ এক সপ্তাহ হলো…। বিষের বোতল টা আমার বালিশের নিচে পড়ে আছে স্পষ্ট দেখতে পারছি। সবাই নির্বাক হয়ে গেছে। ছোটো ভাইটা পাগলপ্রায়। জানি ছোট বোনটা খুব কাঁদছে। অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি হয়তো! এমনটা তো হবার কথা ছিল না।
জানেন?, সেদিন খুব কেঁদেছিলাম আমি। যেদিন আমার হাতটা ছেড়ে দিয়েছিলেন সোহাগ দাদা। আমার বাঁচার শেষ আশাটুকু ছিলেন উনি। অঝরে কেঁদেছি সারারাত এই কদিন। প্রতি রাতে বালিশ ভিজিয়েছি চোখের জলে। একটি বারও খোঁজ নাওনি কেমন ছিলাম আমি।
আর, দোস্ত তোদের অনেক ধন্যবাদ। ফেসবুকে আমাকে নিয়ে লেখালেখি করছিস। তবে কি জানিস? বাস্তবে এতটা সময় তোরা যদি দিতি…তাহলে, না থাক কিছু না।
জানি তোমরা খুব কাঁদছো। জানি খুব ভালোবাসতে আমাকে। হয়তো ঘৃণাও করতে অনেকে। যদি আর একটু খোঁজ করতে, আমার সমস্যাগুলো শুনতে…। যদি আমার দিকে আর একটু খেয়াল রাখতে…। যদি সবকিছু নির্ভয়ে বলতে পারতাম তোমাদের…। তাহলে আজ হয়তো…
ছোট বোন, কাঁদিস না লক্ষ্মীটি। হয়তো সব থেকে বড় অন্যায় টা তোর সাথে হলো! মাফ করে দিস তোর এই অপরাধী ভাইটিকে। জানি এই ভুলের কোন ক্ষমা নেই। ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষগুলো। দূর থেকে না হয় দেখলাম সবার হাসিমাখা মুখ।
ভালো থেকো সবাই, হয়তো ফিরার ইচ্ছা থাকলেও চাইলে পারবো না। ক্ষমা করে দিয়ো তোমাদের সন্তানকে। এখানে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। সবাইকে ছেড়ে থাকাটা অনেক অনেক বেশি কষ্টের। অনেক বেশি ভুল করে ফেলেছি। ইসস যদি আর একটু সময় পেতাম। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না। ভালো থেকো সবাই।
দূর থেকে দেখবো সবাইকে। ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষগুলো। ক্ষমা করে দিবেন এই বাজে ছেলেটাকে। আমি নাকি খারাপ, হুম মানলাম বাট হয়তো এমন কাউকে পাবেন না যে প্রমাণ করতে পারবে আমি খারাপ। কারণ আমি আজ অবধি এমন কোনো কাজ করিনি যে প্রমাণ করতে পারবেন।
ছোটো বেলা থেকে আমার রক্তে মিশে আছে রাজনীতি। আমি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তার দেখানো পথেই চলে আসছি আজ অবধি। চাকরি বা বিয়ে কোনোটাই করিনি ছাত্রলীগ করবো বলে। বাট আজ দলও টাকার কাছে জিম্মি। আমার জীবনে আর কি বাকি আছে, হয়তো বেঁচে থাকতাম দু-মুঠো ভাতের জন্যে। কিন্তু যখন অসহায় মানুষগুলো কাঁদে আমি তাদের কান্না সহ্য করতে পারি না। আমার নেতা বঙ্গবন্ধুও পারেনি। তাই তো সে নিজের জীবন দিছে, তবুও হার মানেনি, লড়াই করে গেছে অন্যায়ের বিপক্ষে সারাজীবন।
আমিও অন্যায় কে প্রশ্রয় দিতে পারিনি তাই আমি খারাপ। আমার জীবনে আজ অবধি যতো খারাপ সময় তার সব কিছু এই রাজনীতির জন্য। ভবিষ্যতের কথা ভাবিনি কখনো, আজ জীবনের এই শেষ সময় কেন জানি মনে হচ্ছে এই ছাত্রলীগের নেশাটাই আমাকে শেষ করে দিলো। হারিয়েছি সব, ঘর, পরিবার, ভালোবাসার মানুষ, কাছের মানুষ সব সব কিছু হারিয়েছি এই রাজনীতির জন্য। তাই চলে গেলাম এই নিষ্ঠুর স্বার্থের পৃথিবী থেকে। ক্ষমা করে দিবেন আমাকে। ’