করোনা ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হয়েছেন কি না তা মাত্র ১৫ মিনিটেই বের করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে নেদারল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠান। শুধু রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই বোঝা যাবে তিনি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত কি না।
সেনসি টেস্ট নামে ওই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী রবার্ট ডাস জানান, তাদের পরীক্ষা পদ্ধতি কার্যকর হলেও এতে কিছুটা সীমাবদ্ধতা এখনো রয়ে গেছে। কেউ আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টেস্ট করলে বিষয়টি ধরা পড়বে না। এজন্য কিছুদিন পরে টেস্ট করাতে হবে।
মি. রবার্ট জানান, সেনসি টেস্টের পরীক্ষা পদ্ধতি খুবই সহজ ও সাধারণ। আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীর শরীরে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ভাইরাস প্রতিরোধী আইজিজি ও আইজিএমের মতো অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। কারও শরীরে এই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না তা টেস্টের মাধ্যমেই মূলত করোনার উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হচ্ছেন তারা।
রবার্ট বলেন, এটা অনেকটা প্রেগন্যান্সি টেস্টের মতো। আগেভাগে টেস্ট করালে ফলাফল নেগেটিভ আসবে। কিন্তু শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হলে মাত্র ১৫ মিনিটেই টেস্টের ফল পজেটিভ দেখাবে।
তবে, কেউ সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও টেস্টের ফলাফল পজেটিভ দেখাবে। কারণ তখনও তার শরীর আইজিজি দিয়ে সুরক্ষিত।’
সেনসি টেস্টের এ কর্মকর্তা আরও জানান, তারা গত সপ্তাহে এই টেস্ট স্টিক উন্মুক্ত করেছেন। তবে আপাতত শুধু নেদারল্যান্ডসের চিকিৎসকদের কাছেই সেগুলো পাঠানো হচ্ছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে অল্প সময়ের মধ্যেই এটি সারাবিশ্বে পৌঁছে দেয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান।
এছাড়া করোনা ভাইরাসে নেদারল্যান্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৭৬ জনে। এই ভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮১১ জনসহ আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৫৬০ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন ২ জন।
নেদারল্যান্ডে বর্তমানে ৫ হাজার ২৮২ জন আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ৪৪৭ জনের অবস্থা সাধারণ। বাকি ৪৩৫ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকংশই আইসিউতে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, চীন থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বে। সেখানে ভাইরাসটি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসলেও অন্যান্য দেশে বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। এতে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ২৯৬ জন। এর মধ্যে ইতালিতেই ৭৪৩ জন।
এ নিয়ে করোনা ভাইরাসে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৮ হাজার ৮১০ জনে। এর মধ্যে চীনে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ২৭৭। চীনের বাইরে মারা গেছে ১৫ হাজার ৫৩৩ জন।
এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪২ হাজার ৫৬৮ জনসহ আক্রান্ত হয়েছে ৪ লাখ ২১ হাজার ৪১৩ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৮ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন। চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ১৭১ জন। এছাড়া চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৪০ হাজার ২৪২ জন।
বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ২ লাখ ৯৪ হাজার ২১৫ জন আক্রান্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২ লাখ ৮০ হাজার ৯৪৬ জনের অবস্থা সাধারণ। ১৩ হাজার ২৬৯ জন আইসিউতে রয়েছেন।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান ড. টেড্রস আধানম গেব্রেইয়সুস অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারগুলো এই বৈশ্বিক মহামারি ঠেকাতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তিনি সরকারগুলোকে নিজ নিজ দেশের করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা আরও বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় এখন লকডাউন যথেষ্ট নয়।
করোনা ভাইরাস পৃথিবীজুড়ে অদ্ভুত এক আঁধারের ছায়া নিয়ে এসেছে। চারিদিক নিরব, নিস্তব্ধ। কেউ কারও সাথে মিশছে না বা চাইছে না। যেন সবাই সবাইকে এড়িয়ে যেতে পারলেই বাঁচে। ‘বিশ্ব গ্রাম’ ধারণায় মানুষ অনেক বছর ধরেই একাকি জীবনের অভ্যস্ত হয়ে উঠছিল। কিন্তু এতটা একাকি হয়তো তারা কখনোই হয়নি। যে চাইলেও তারা একে অন্যের সাথে দেখা করতে পারবে না। সবাই যেন এক যুদ্ধ কেন্দ্রীক জরুরি অবস্থায় রয়েছে।
এক করোনা ভাইরাস পুরো বিশ্বকেই যেন স্তব্ধ করে দিয়েছে। অধিকাংশ দেশেই রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত, শপিংমল-মার্কেট, রেস্তোরাঁ-বার ফাঁকা। যেন সব ভূতুড়ে নগরী, যুদ্ধকালীন জরুরি অবস্থা চলছে। সবার মধ্যে ভয়, আতঙ্ক আর আশঙ্কা।
উহান, চীনের শিল্পোন্নত এই শহর থেকেই প্রথম করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে ভাইরাসটি প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে আসলেও চীনের বাইরে ব্যাপক হারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
চীনে উদ্ভূত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৯৭টি দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।