এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ৪৪ শতাংশ বেড়েছে !

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজের বাজারে নৈরাজ্য থামছেই না। সংকট কাটাতে আকাশপথে পেঁয়াজ আমদানি করেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। দেশি পেঁয়াজের দাম এখনো আকাশচুম্বী। গতকাল রবিবার পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। সাপ্তাহিক ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ খালাস না হওয়ার সুযোগ নিয়ে দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বাজারের তথ্য বলছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের যে দাম, তাতে দুই কেজি ব্রয়লার মুরগি কেনা যাচ্ছে। বাজারে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি পাওয়া যাচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়। সেই হিসাবে দুই কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ২২০-২৪০ টাকা।

গতকাল সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কারওয়ান বাজারে দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছিল ২৩০ টাকা। অথচ আগের দিন বিক্রি হয়েছে ২১০-২১৫ টাকা দরে। আর খুচরায় বিক্রি হচ্ছে কেজি ২৩০-২৪০ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজ গড়ে প্রতি কেজি ২০০ টাকার নিচে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁরা নতুন করে দাম বাড়াননি। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। কারণ আড়ত থেকে নতুন করে পেঁয়াজ আনা হয়নি। এখন আড়তে দাম বাড়লে খুচরা বাজারেও বাড়বে।

শ্যামপুরের একাধিক ব্যবসায়ী কালের কণ্ঠকে জানান, পেঁয়াজের বড় পাইকারি বাজার শ্যামপুরে এখন দেশি পেঁয়াজের সংকট। আমদানি করা পেঁয়াজ থাকলেও পরিমাণে খুব কম। শনিবার আকাশপথে পেঁয়াজের একটি বড় চালান আসে। কিন্তু এক ঘণ্টার মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। গতকাল কোনো কোনো আড়তে পেঁয়াজ নেই।

শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী ও পেঁয়াজ আমদানিকারক মো. হাফিজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম কমতির দিকেই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আবারও দাম বেড়ে গেছে। শ্যামবাজারে এখন কোনো পেঁয়াজ নেই। দেশি পেঁয়াজ তো নেই! আকাশপথে শনিবার ৯৬ টন পেঁয়াজ এসেছে, কিন্তু এক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। দুই-এক দিনের মধ্যেই আবারও পেঁয়াজের চালান আসবে। আশা করছি বাজারে জোগান বাড়লে দামও কমে যাবে।’

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশ আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। এক মাস আগে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০-১৩০ টাকা কেজি, যা এখন ২২০-২৩০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০-১২৫ টাকা, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০-২০০ টাকা।

এক বছরের হিসাবে টিসিবি বলছে, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫৫৪ শতাংশ। দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫৯২ শতাংশ আর আমদানি করা পেঁয়াজ বেড়েছে ৫৬০ শতাংশ। এক বছর আগে এই পেঁয়াজের দাম ছিল ২০-৩৫ টাকা। দেশি পেঁয়াজ ছিল ৩০-৩৫ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ ছিল ২০-৩০ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত জোগান না এলে দাম বাড়া-কমার মধ্যেই থাকবে। সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে আর সরবরাহ না হলে দাম বাড়িয়ে শত শত কোটি টাকা মুনাফা করবে আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা।’ তিনি আরো বলেন, ‘পেঁয়াজের সংকট নিয়ে একটা স্থায়ী সমাধান হওয়া প্রয়োজন। নতুবা বারবার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভোক্তার পকেট কাটবে ব্যবসায়ীরা। উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে জোর দিতে হবে। দেশি পেঁয়াজ বাজারে এলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে কিংবা ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করলেই বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে।’

নতুন পেঁয়াজ উঠলেও দাম কমছে না : ফরিদপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে নতুন পেঁয়াজ (মুড়ি কাটা) উঠলেও দাম কমেনি। পুরনো পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতি কেজি নতুন পেঁয়াজ ১৮০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফরিদপুর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক নির্মলেন্দু চক্রবর্তী শঙ্কর জানান, খুচরা বাজারে পুরনো পেঁয়াজ (হালি পেঁয়াজ) বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি দরে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ছয় হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় চাষিরা আগাম জাতের পেঁয়াজ পরিপক্ব হওয়ার আগেই তুলে বাজারে বিক্রি শুরু করেছে।

দিনাজপুর প্রতিনিধি এমদাদুল হক মিলন জানান, দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজার বাহাদুর বাজারে নতুন পেঁয়াজ ২০০ টাকা, পুরনো পেঁয়াজ ২১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে গতকাল। অন্যদিকে পাতাসহ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রকারভেদে ৬০-৮০ টাকা দরে।

পেঁয়াজের সংকটের পর থেকে দিনাজপুরে দেশি পেঁয়াজের দাম একবার ২০০ টাকার নিচে নেমেছিল। যা স্থায়ী ছিল মাত্র দুই দিন। এ সময় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১৭০ টাকা দরে। এরপর আর ২০০ টাকার নিচে নামেনি পেঁয়াজের দর।

পাবনায় আগাম পেঁয়াজের বাম্পার ফলন : দেশের অন্যতম বৃহৎ পেঁয়াজ আবাদ এলাকা পাবনার সুজানগরে উৎপাদিত আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পাবনা প্রতিনিধি আহমেদ উল হক রানা।

কৃষকরা জানিয়েছে, আগামী ৭-১০ দিনের মধ্যেই নতুন পেঁয়াজ বাজারে পুরোপুরি চলে আসবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপপরিচালক মো. আজহার আলী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, এবার পাবনায় ৯ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে পেঁয়াজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন। আগামী ৮-১০ দিনের মধ্যে অন্তত সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমির পেঁয়াজ বাজারে আসবে।