১৫০ টাকা কেজি কাঁচা মরিচ, ৫০ টাকার নিচে সবজি নেই

রাজধানীর খুচরা বাজারে এখন এক কেজি ঝিঙার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। কাঁকরোলের মৌসুম হলেও বাজারভেদে এই সবজি কিনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। প্রতি কেজি কচুর মুখি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। লতির কেজিপ্রতি দর ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বেগুন কোথাও ৫০ টাকা আবার কোথাও ৬০ টাকা। এক কেজি পটোল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ধুন্দল ৩৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢেঁড়স ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে বাজারে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে দেড় শ টাকা কেজিতে।

কয়েক দিন আগেও কাঁচা পেঁপে বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে। তবে এখন প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। ২৫ থেকে ৩০ টাকা হালি দরে যে কাঁচা কলা পাওয়া যেত, তা এখন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

হাতে গোনা দু-একটি ছাড়া প্রায় সব সবজির দামই এখন কেজিপ্রতি ৫০ টাকার ওপর। বেশ কিছুদিন ধরেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এসব সবজি। বৃষ্টি ও দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার কারণে রাজধানীতে সরবরাহে কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে দাবি করে ব্যবসায়ীরা বলছে, তাদের খরচ বেড়েছে। বৃষ্টি-বন্যার উন্নতি না হলে বাজার পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিল তারা। তবে বাজার ঘুরে সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক আছে বলেই ধারণা মিলেছে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে সবজি কিনছিলেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘ব্যাগ ভরে সবজি কেনার সুযোগ আর নেই। এক কেজি সবজি কিনলেই এখন ৫০ টাকা শেষ। তাই পরিমাণে কমিয়ে তিন ধরনের সবজি নিয়েছি। এতেই ৮৫ টাকা শেষ।’একটু কম দামের আশায় কারওয়ান বাজারে সবজি কিনছিলেন আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কমের আশায় এখান থেকে বাজার করতে এসেছিলাম। কিন্তু খুব একটা লাভ হয়নি। খরচ মোটামুটি কাছাকাছিই।’

কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা কামাল হোসেন বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির কারণে সবজির অনেক ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এতে হঠাৎ করেই সরবরাহ অনেক কমে গেছে; যে কারণে দামও বেড়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দাম কমবে না।’

অথচ কারওয়ান বাজার ঘুরে সবজির সরবরাহের ঘাটতি চোখে পড়েনি। তেজগাঁও কলেজের সামনেই কয়েকটি সবজির দোকান রয়েছে। এই দোকানগুলোতেও সবজির কোনো কমতি নেই। শুধু সবজিই নয়, অন্তত চার-পাঁচ রকমের শাকও পাওয়া যাচ্ছে দোকানগুলোতে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারা প্রতিদিনই ভোরবেলা কারওয়ান বাজার থেকেই পণ্য নিয়ে আসে।

এদিকে বৃষ্টির অজুহাতে বেড়েছে কাঁচা মরিচের দামও। ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনতে এখন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে ভোক্তাদের। অর্থাৎ প্রতি কেজির দাম পড়ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম দ্বিগুণ হয়েছে।

বগুড়ার বৃহত্তম সবজি মোকাম মহাস্থানগড় পাইকারি বাজার ঘুরে কালের কণ্ঠ’র নিজস্ব প্রতিবেদক লিমন বাসার জানিয়েছেন, যেসব সবজি ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে সপ্তাহখানেক আগেও বিক্রি হয়েছে, সেগুলো এখন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এই পাইকারি বাজারেই প্রতি কেজি মরিচের দাম উঠছে ১০০ টাকা কেজি। কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে সবজির দামে—এমন দাবি এখানকার ব্যবসায়ীদের।

বগুড়ার মহাস্থানহাটের পাইকারি টমেটো ব্যবসায়ী আলী আজগর জানান, কয়েক দিন আগেও তিনি ২৫ কেজি ওজনের এক ঝুড়ি টমেটো বিক্রি করেছিলেন ৮৭৫ টাকায়, যা গতকাল সোমবার দুই হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। অর্থাৎ ঝুড়িপ্রতি দাম বেড়েছে এক হাজার ৩২৫ টাকা।বগুড়ার মহাস্থানগড়ের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী আহম্মদ হোসেন জানান, গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে হাটে সবজি আমদানি নেই বললেই চলে। আগে যেখানে এই হাট থেকে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক সবজি ঢাকায় পাঠানো হতো, এখন সেখানে দু-চারটি ট্রাক পাঠানোও মুশকিল হয়ে গেছে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, এ অঞ্চলের চাষিরা প্রচুর সবজির আবাদ করেন। কিন্তু সম্প্রতি টানা বর্ষণে ক্ষেতে পানি জমে চাষিদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।

কালের কণ্ঠ রংপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক স্বপন চৌধুরী জানিয়েছেন, রংপুরের হাট-বাজারে খুব একটা সবজি মিলছে না। সপ্তাহখানেকের বেশি সময় ধরে বন্যাসহ ভারি বর্ষণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে কিছু সবজিক্ষেত নষ্ট হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় কাঁচা মরিচসহ জলাবদ্ধতায় পড়েছে প্রায় ২৮ হাজার হেক্টর জমির সবজিক্ষেত। রংপুরে সবজি উৎপাদনের এলাকা বলে পরিচিত মিঠাপুকুর উপজেলা। আর কাঁচা মরিচের ব্যাংক বলে পরিচিত কাউনিয়া উপজেলার তিস্তার চর। মরিচসহ এখানকার রকমারি সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়।

রংপুর, বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে সবজি আমদানির পরিমাণ কমে গেলেও ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলো থেকে সরবরাহ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, সাভারসহ কয়েকটি এলাকা থেকে এখন সবজির বেশির ভাগ চাহিদা পূরণ হচ্ছে।