কেমন ছিলেন কবি এরশাদ ও প্রেমিক এরশাদ

ঢাকা: সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ আর নেই। রোববার (১৪ জুলাই) সকালে তিনি রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এরশাদ তার দুই স্ত্রীর দুই ছেলের পাশাপাশি অন্তত দুটি দত্তক সন্তান রেখে গেছেন। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান মারা যাওয়ায় এই সন্তানরাই এখন তার উত্তরাধিকার।

এদিকে, এরশাদের কবি এবং প্রেমিক পরিচয়উচ্চাভিলাষী সামরিক কর্তাদের অভিলাষ প্রকাশ পায় নানা কর্মকাণ্ডেই। বিশেষ করে ক্ষমতার মোহে আসক্ত সেনা কর্মকর্তারা কখনও সর্বশক্তি নিয়ে হাজির হন সদর দরজায়, অথবা পেছনের দরজায়। বাংলাদেশের সাবেক সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম ছিল না। রাজনৈতিক ক্রান্তিকালের সুযোগ নিয়ে নিজেই সামরিক শাসন জারি করেছিলেন।

স্বৈরপন্থায় ক্ষমতায় এসে স্বৈরশাসক বনে যান এরশাদ। সামরিক এবং রাজনৈতিক জীবনের পথ মাড়িয়ে খ্যাতি মিলেছে তার। মিলেছে কুখ্যাতিও। ভালোবাসার বন্ধুরা তাকে পল্লীবন্ধু জানে। আবার কারও কাছে স্বৈরাচার। এ দুটি পরিচয়ের বাইরেও এরশাদের বহুমুখী পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে কবি এবং প্রেমিক পরিচয় দুটি এরশাদকে অনন্য করেছে। প্রেমিক রাজা! কবি রাজা! তার রচিত কবিতা এবং গানে নারীর প্রতি ভালোবাসা মুখ্য হয়ে উঠেছে।

তার কবিতায় যেমন ঠাসা ছিল প্রেম, আবার বিচ্ছেদের সুরও ছিল। না পাওয়ার বেদনা প্রকাশ পেয়েছে তার রচনার পরতে পরতে। বহু নারীসঙ্গ মিলেছে তার। কিন্তু অতৃপ্তির বেদনা তাড়া করে বেড়িয়েছে জীবনভর। বহুজনে সংসার পেতেছেন এরশাদ। তবে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে থিতু হওয়া হয়নি শেষ বেলায়ও। সেনাবাহিনীর এই অফিসার যৌবনের প্রথমলগ্নে বিয়ে করেন ময়মনসিংহের মেয়ে রওশনকে।

আর জীবনের শেষ বেলায়ও রওশানের সঙ্গেই বোঝাপড়া থাকে এরশাদের। যদিও এরশাদ-রওশনের সংসার নিয়ে নানা আলোচনা আছে বাজারে। রাজনীতিতে যুগপথ হাঁটলেও বহুকাল আগে থেকেই এরশাদ এবং রওশন আলাদা বসবাস করে আসছেন বলে জানা গেছে। অসুস্থ বেলায়ও রওশনের সঙ্গ মেলেনি এরশাদের।

আর এই দম্পতির ঘরে সাদ নামের এক সন্তান রয়েছে। সাদ এরশাদ ভারতীয় এক নারীকে বিয়ে করে দেশের বাইরে বসবাস করছেন বলে জানা যায়। তবে এরশাদের প্রেমরসায়নে চূড়ান্ত অনুঘটক ছিলেন বিদিশা সিদ্দিক। এরশাদের জেলজীবনের ছয় বছরের প্রেমের সঙ্গী বিদিশা। ২০০০ সালে যেদিন এরশাদ-বিদিশার বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ পায়, সেদিন ছিল এরশাদ-বিদিশার ঘরের সন্তান এরিকের প্রথম জন্মদিন।

যদিও প্রেমিক এরশাদের ঘরে বিদিশার প্রেম স্থায়িত্ব পায়নি। চারদলীয় জোটের আমলে বিচ্ছেদ ঘটে এরশাদ-বিদিশার। এরশাদের করা চুরির মামলায় জেলেও যেতে হয় বিদিশাকে। এরশাদকে ছেড়ে জীবনের অন্য বাঁকে চলছেন বিদিশা। সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও প্রভাবশালী রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন বিদিশা। এরপর ক্ষমতায় থাকাকালে মেরি নামের আরও এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন বলে প্রচার রয়েছে।

যদিও এরশাদ কোনোদিন সে বিয়ের কথা স্বীকার করেননি। ক্ষমতা গ্রহণের দুই বছর পর মেরির সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে। পরে মেরিকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ২০১৫ সালে এরশাদের এই কথিত স্ত্রী মারা যান। স্ত্রী ছাড়াও এরশাদের বেশ কিছু বান্ধবীর নাম মানুষের মুখে মুখে।

এর মধ্যে জিনাত মোশাররফ নামটি বিশেষভাবে পরিচিত। জিনাত মোশাররফের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল মানুষের মুখে মুখে। প্রেমের স্বীকৃতি দিতে জিনাত মোশাররফ নামের সঙ্গে হুসেইন যুক্ত করেছিলেন। এরশাদেরই মন্ত্রিসভার সদস্য মোশাররফের স্ত্রী ছিলেন। যদিও পরে বিচ্ছেদ ঘটে। বর্তমানে তিনি লন্ডনে বসবাস করছেন। এছাড়াও একাধিক গায়িকা, নায়িকার সঙ্গে তার প্রেম গড়ে ওঠে বলে বিভিন্ন সময় খবরে এসেছে।

যদিও একটি ঘটনা দিয়ে আরেকটি ঘটনা চাপা পড়েছে। প্রেমে পড়েছেন বহুজনে। স্থির হতে পারেননি কারও সংসারেই। ঠিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মতোই ছিল তার প্রেমিক জীবন। যেখানে বিরহের সুরলহরি বেজেছে অনবরত। রবিবার সকাল পৌনে ৮টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।