কোনো দেশের জন্য পতাকা শুধু একটি কাপড় নয়। এতে জড়িয়ে থাকে তার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আত্মত্যাগের করুণ কাহিনী। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয় পতাকা। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বিশ্বের সেরা অর্থবহ পতাকার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এ তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে বাংলাদেশ। তালিকায় থাকা ১০টি দেশের জাতীয় পতাকার গড়ন ও অর্থ জেনে নিন-
বাংলাদেশ : বাংলাদেশের পতাকার সবুজ রং এদেশের প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক। বৃত্তের লাল রং উদীয়মান সূর্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের রক্তের প্রতীক। ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার এ নকশা সরকারিভাবে অনুমোদিত হয়।
যুক্তরাজ্য : ইউনিয়ন জ্যাক নামে পরিচিত বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এ পতাকায় মূলত তিনটি ক্রস চিহ্ন রয়েছে। এগুলো তিনটি দেশের ধর্মযাজকদের প্রতিনিধিত্ব করে। মোটা লাল দাগ ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের সেন্ট জর্জের ক্রস, সাদা রংয়ে স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রু ক্রস ও আড়াআড়ি লাল দাগ উত্তরাঞ্চলীয় আয়ারল্যান্ডের সেন্ট প্যাট্রিক ক্রস নির্দেশ করে। ১৮০১ সালে এ নকশার পতাকা গ্রহণ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র : যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পতাকার আরেক নাম ‘দ্য স্টারস অ্যান্ড স্ট্রাইপ’। বহুবার পরিবর্তিত হয়ে ১৭৭৫ সালে বর্তমান চেহারা পায় পতাকাটি। এর ১৩টি আনুভূমিক লাল দাগ প্রথম ১৩টি রাজ্যকে নির্দেশ করে। পতাকার ৫০টি তারকা চিহ্ন ৫০টি প্রদেশের প্রতীক। লাল রং দৃঢ়তা ও বীরত্বের প্রতীক, আর নীল রং সতর্কতা ও ন্যায়বিচারের প্রতীক।
ফ্রান্স : ১৭৯৪ সালে নীল-সাদা-লাল রংয়ের পতাকা গ্রহণ করে ফ্রান্স। এর তিনটি রং ফরাসী বিপ্লবের আদর্শ স্বরূপ স্বাধীনতা, সমতা ও ভ্রাতৃত্বের প্রতীক। নীল ও লাল রং প্যারিসের প্রতীক। আর সাদা রং ফরাসী বিপ্লবের আগ পর্যন্ত ফ্রান্স শাসন করা বার্বন রাজবংশের সম্মানার্থে রাখা হয়েছে।
কানাডা : ম্যাপল পাতার নকশায় কানাডার বিখ্যাত পতাকা সরকারি স্বীকৃতি পায় ১৯৬৫ সালে। বিখ্যাত ১১ কোণা বিশিষ্ট পাতাটি কানাডার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতীক। এছাড়া পতাকার লাল-সাদা রং আশা, উন্নতি, শান্তি ও নিরপেক্ষতার প্রতীক।
অস্ট্রেলিয়া : নীল রংয়ের পতাকাটিতে তিন ধরনের প্রতীক দেখা যায়। বাম পাশে উপরে ব্রিটেনের পতাকা, এর নিচে সাত কোণা বিশিষ্ট সাদা তারা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রতীক। এটিসহ মোট ছয়টি তারা ছয়টি রাজ্যের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকা : নেলসন ম্যান্ডেলার কারামুক্তি উপলক্ষে ১৯৯৪ সালে নতুন পতাকা ধারণ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। পতাকার কালো, সবুজ ও লাল রং নেওয়া হয়েছে ম্যান্ডেলার দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের রংয়ের সঙ্গে মিলিয়ে। লাল, সাদা ও নীল নেওয়া হয়েছে ট্রান্সভাল রাজ্যের পুরনো পতাকা থেকে। ইংরেজী ওয়াই বর্ণের আকৃতি দেশটির সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের পরিচায়ক।
ব্রাজিল : ব্রাজিলের পতাকার সবুজ অংশ দেশটির বিশাল বনভূমি ও শস্যক্ষেত্রের প্রতিনিধিত্ব করে। হলুদ ডায়মন্ড আকৃতির চিহ্ন দেশটির স্বর্ণখনির প্রতীক। মাঝের বড় নীল পৃথিবী ও এর ওপর ২৭টি তারকা ২৭টি রাজ্যের প্রতীক। পৃথিবীর ওপর লেখা ‘অরডেম ই প্রগ্রেসো’, যার অর্থ শৃঙ্খলা ও উন্নতি।
নেপাল : কিছুটা ভিন্ন আকৃতির পতাকাটি হিমালয়ের পর্বতচূড়া নির্দেশ করে। পতাকার নীল প্রান্ত শান্তির প্রতীক। লালচে রং দেশটির জাতীয় ফুল রোডোডেনড্রনের প্রতীক। আর আংশিক চাঁদ রাজ পরিবার ও সূর্য রানা পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করে।
মালয়েশিয়া : পতাকার লাল, সাদা ও নীল রং বোঝায়, এ দেশ জনগণের। হলুদ রংয়ের আংশিক চাঁদ ও তারা দেশটির রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলামের পরিচায়ক। হলুদ রং মনে করিয়ে দিচ্ছে, মালয় শাসকরা অন্য দেশের হাতে পরাধীন নয়। লাল-সাদা রংয়ের ১৩টি দাগ ১৩টি রাজ্যের প্রতীক। ১৪তম দাগ রাষ্ট্রীয় ঐক্যের প্রতীক।