তথ্যপ্রযুক্তিতে আগ্রহী সামির আল মাসুদ (২৩)। উচ্চ মাধ্যমিকের পরই পড়াশোনায় ইস্তফা দেন তিনি। জড়িয়ে পড়েন হ্যাকিং গ্রুপে। জনপ্রিয় মডেল, অভিনেত্রী ও উঠতি তারকাদের ফেসবুক আইডি টার্গেট করে দখলে নিয়ে তাঁদের বার্তা বক্সে হুমকি দিতে শুরু করেন, আপত্তিকর ছবি ও তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার। এ পর্যন্ত সময়ের জনপ্রিয় ২০ জনেরও বেশি অভিনেত্রী ও মডেলের ফেসবুক আইডি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন সামির।
সর্বশেষ সামির আল মাসুদের আক্রমণের শিকার হন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০১৮-এর প্রথম রানারআপ নিশাত নাওয়ার সালওয়া। নিশাতের আইডি নিজের দখলে নেওয়ার পর টাকা দাবি করেন সামির। ১০ হাজার টাকা দেওয়ার পরও ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি তাঁর ফেসবুক আইডি। পরে তিনি বাধ্য হয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনার ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের শরণাপন্ন হন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর রমনা থানায় মামলা করেন।
ঘটনার তদন্তে নেমে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ বুধবার (২৯ মে) বিকেলে সামির আল মাসুদকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর সামির আল মাসুদ চাঞ্চল্যকর সব তথ্য দিয়েছেন বলে সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ জানিয়েছেন।
ইশতিয়াক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, যেসব তারকার আইডি হ্যাক করত টাকার বিনিময়ে তাঁদের অধিকাংশের আইডি ফিরত দিয়েছে বলে জানিয়েছে সামির আল মাসুদ। তবে, টাকা দিলেও অনেক মডেল-অভিনেত্রীকে তাঁদের ফেসবুক আইডি ফেরত দেয়নি সামির। সামির আল মাসুদ অ্যানোনিমাস নামের একটি হ্যাকিং গ্রুপের সদস্য।
তিনি বলেন, এখানে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সতর্ক থাকা খুবই জরুরি। সাইবার দুনিয়ায় ব্যবহারকারী কোন ধরনের ছবি বা ভিডিও রাখবে সেটা তাকে ঠিক করতে হবে। অযাচিত ঝামেলা এড়াতে খুব সাবধানে ব্যবহার করা উচিত ফেসবুক। অপরিচিতদের ফেসবুকে নেওয়াটা ঠিক নয়। কারণ আমাদের আশপাশেই অপরাধীর অভাব নেই। এ ছাড়া এনআইডির নামে ফেসবুক ইউজার নেম থাকলে খুব বেশি ঝামেলায় পড়তে হয় না ব্যবহারকারীকে।
সাইবার ক্রাইম বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পিক্সআর্ট নামে সফটওয়্যারের মাধ্যমে মডেল-অভিনেত্রীদের আইডির নামে নকল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করা হতো। খোলা হতো জিমেইল অ্যাকাউন্টও। নকল এনআইডি তৈরি করার পর সাবমিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট গেট অপশনে গিয়ে প্রকিয়ার মাধ্যমে তারকাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিজের দখলে নিয়ে নিত। এরপর ঢুকে পড়তেন তারকাদের ফেসবুক ইনবক্সে। ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর তথ্য ও ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। ফেসবুক আইডির ফ্যান, ফলোয়ার সংখ্যা ও তারকার জনপ্রিয়তা বুঝে চাওয়া হতো অর্থ।
সাইবার ক্রাইম বিভাগ সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি কলাবাগান থানার আরেকটি মামলায় প্রথমে সাইবার মনিটরিং টিমের হাতে গ্রেপ্তার হন হ্যাকার সামির। প্রায় দেড় মাস কারাগারে থাকার পর গত ২৫ মার্চ জামিনে বের হয়ে আবারও নারী মডেল ও অভিনেত্রীদের টার্গেট করা শুরু করেন সামির।