মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও স্নেহের সঙ্গে অন্য কোনো সম্পর্কের তুলনা হয় না, এমন দৃষ্টান্ত অহরহ। তবে হারানো ছেলেকে ফিরে পেয়ে বছরে এক মাস নয়, বারো মাসই রোজা রাখেন ঝিনাইদহের শহিদুলের মা ভেজিরন নেছা।এভাবে একটানা ৪৪ বছর রোজা পালন করে সৃষ্টি করেছেন ভালোবাসার এক অনন্য নজির। তিনি মৃত্যু পর্যন্ত সন্তানের জন্য রোজা পালন করবেন—এটা তার প্রতিজ্ঞা। কিন্তু বয়সের ভারে দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ভেজিরন নেছা।
জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাজারগোপালপুর গ্রামের মৃত আবুল খায়েরের স্ত্রী ভেজিরন নেছা। ১৯৭৫ সালে বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম ১১ বছর বয়সে হারিয়ে যান। দীর্ঘদিন সন্তানকে খুঁজে না পাওয়ায় মা ভেজিরন নেছা প্রায় পাগলের মতো হয়ে যান।
তিনি মনস্থির করেন ছেলে ফিরে এলে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্য বারো মাস রোজা রাখবেন। ওই সময় গ্রামের মসজিদ ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেন তিনি। দেড় মাস পর হঠাৎ তার হারিয়ে যাওয়া সন্তান নিজ বাড়িতে ফিরে এসে ‘মা’ বলে ডাক দেয়। তারপর থেকেই রোজা রাখা শুরু করেন মমতাময়ী এই মা।
বৃদ্ধা ভেজিরন নেছা বলেন, ‘আল্লাহ ছেলেকে আমার কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে। তারপর থেকে তার সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখি। রোজা রাখতে কোনো কষ্ট হয় না।’
যে ছেলের জন্য ভেজিরন নেছা রোজা রাখেন সেই বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার জন্য মা কষ্ট করে রোজা রাখেন। আমি রোজা রাখতে নিষেধ করলেও তিনি শোনেন না। অসুখ-বিসুখ হলেও তিনি রোজা ভাঙেন না। আমার মায়ের মতো মা পৃথিবীতে আর একটিও নেই। আমি বাড়িতে ফিরে আসার পর থেকেই মা রোজা রাখেন।’
ওই গ্রামের মঞ্জুর ঢালী নামের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘অনেক মা দেখেছি, কিন্তু এমন মা দেখিনি। যিনি সন্তানের কথা চিন্তা করে এভাবে রোজা রাখছেন। অভাব-অনটনে জীবনযাবন করলেও কখনো রোজা রাখা বন্ধ করেননি ভেজিরন নেছা। এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত।’