জাতীয় দলের ক্রিকেটার মোহাম্মদ মিঠুন বিয়ে করে তিনি সংসারী হয়েছেন সেই কবেই। বাবাও হয়েছেন।তবে মোহাম্মদ মিঠুনকে তাঁর স্ত্রী নিগার সুলতানা পিতৃত্বের অনন্য স্বাদই উপহার দেননি শুধু, পেশাদার জীবনে সফল হওয়ার পথও খুঁজে দিয়েছেন।অনিয়মে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে থাকা ক্রিকেটারকে দিয়ে গেছেন নিয়মনিষ্ঠ হওয়ার তাড়াও। যে তাড়া না খেলে আজ বিশ্বকাপ দলে থাকতেন কি না, তা নিয়ে তাঁর নিজেরই সন্দেহ!
কালের কণ্ঠের এক সাক্ষাৎকারে এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘ক্রিকেটটাকে আমার সিরিয়াসলি নেওয়ার শুরু আসলে বিয়ের পরেই। এতে আমার স্ত্রীর অনেক অবদান। ওর অনুপ্রেরণা আমার অনেক কাজে দিয়েছে। ওর কিছু কথাই আমার ক্যারিয়ার বদলে দিয়েছে। ওর কথায়ই আমার কাজের গতি বেড়েছে। ঠিকঠাকমতো কাজ করা এবং নিয়মিত কঠোর পরিশ্রম করার অভ্যাসও হয়েছে।’
এর আগে বড্ড আলসেমিতে পার করে আসছিলেন একেকটি দিন। কেমন ছিল সেই দিনগুলো? মিঠুনের নিজের মুখ থেকেই শুনে নেওয়া যাক, ‘তখন আমি কুষ্টিয়ায় থাকতাম। খেলা বা ক্যাম্প থাকলে ঢাকায় আসতাম। খেলতাম, প্র্যাকটিস করতাম এবং চলে যেতাম। কুষ্টিয়ায় গিয়ে বাসায় শুয়ে-বসে থাকতাম। প্রতিদিন আমার একই রুটিন ছিল। খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানো এবং আড্ডা।’
বিয়ের পর সেই দিনগুলোই তীক্ষ পর্যবেক্ষণে রাখতে রাখতে তিতিবিরক্ত নিগার সুলতানা আর চুপ থাকতে পারলেন না। সরব হলেন এবং তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণের কথোপকথনে রীতিমতো কোণঠাসাও হয়ে পড়েন মিঠুন। বাউন্সারের মুখে যেন ‘ডাক’ করার মতো অবস্থাও নেই তাঁর, ‘‘ও একদিন হুট করে এসে বলল, ‘আমি ক্রিকেট খুব একটা ভালো বুঝি না। কিন্তু আমি তো স্টুডেন্ট ছিলাম। পড়ালেখা করেছি। পড়ালেখা করতে হলেও তো প্রতিদিন একটা রুটিন থাকে, নিয়ম করে পড়ার। তুমি নিজেকে পেশাদার ক্রিকেটার বলো। অথচ তোমাকে প্র্যাকটিস করতে দেখি না। প্রতিদিন একই রুটিন। আড্ডা দিচ্ছ, খাচ্ছ-দাচ্ছ, ঘুরছ-ফিরছ আর ঘুমাচ্ছ। তাহলে পেশাদার ক্রিকেটার হলে কী করে?’ এভাবে শোনার জন্য ঠিক প্রস্তুত ছিলাম না।’’
অপ্রস্তুত মিঠুনের তখনকার জীবনাচরণের উপসংহারও টেনে দেন নিগার সুলতানা। যে কথা শুনে হুঁশ ফেরে তাঁর। শপথ নেন নিজেকে বদলে ফেলারও, ‘‘ও আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার স্বপ্ন কী?’ আমি বললাম, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা। তখন সে বলল, ‘এভাবে তুমি কিভাবে খেলবে? ভালো স্টুডেন্ট হতে গেলে তো পড়ালেখা করতে হয়। একটা রুটিন মেনে চলতে হয়। তোমার কোনো রুটিনই নেই। মনে হয় না এভাবে তুমি ভালো ক্রিকেটার হতে পারবে?’ ওই কথাটাই আমার মাথায় লাগে। আসলেই ঠিক কথা। ভালো ক্রিকেটার হতে গেলে প্রতিদিন আমাকে সময় দিতে হবে।’’
নিজেকে বদলে ফেলার সেই শুরু মিঠুনের। নিয়ম করে পরিশ্রম বাড়িয়ে, নিবেদনে আগের নিজেকে ছাড়িয়ে পেয়েছেন হারানো পথের দেখা। পথপ্রদর্শক মিঠুনের সন্তান আরহাম ফারিক আরাশের মা!
সুত্র: কালেরকন্ঠ।