১৯ বছরে ৪ বিয়ে, কে এই রানা?

মাত্র ১৯ বছর বয়সে দেড় বছরে ৪টি বিয়ে করে এলাকায় রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন রানা মণ্ডলনামের এক যুবক। তবে তিন স্ত্রীকেই তালাক দিয়েছেন তিনি। এরপর সর্বশেষ ২০ জুলাই স্কুল পড়ুয়া এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন রানা। নিজের বয়স ১৯ বছর হলেও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সনদ জালিয়াতি করে বয়স বাড়িয়ে একের পর এক বিয়ে করছেন রানা। এ নিয়ে বিচার-শালিসও হয়েছে এলাকায়। বয়স পূরণ না হবার পরেও ছেলেকে বারবার বিয়ে দেওয়ায় বাবা রাশেদ মণ্ডলকে আটক করেছে পুলিশ।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের রাশেদুল ইসলামের ছেলে রানা মণ্ডল। রানার গ্রামে তার পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, রানা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। বর্তমানে মেহেরপুরে বসবাস করেন।

স্থানীয়রা জানান, রানা পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। লেখাপড়া বেশি দুর করতে পারেনি। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে সে ভেড়ামারা উপজেলায় প্রথম বিয়ে করেন। বিয়ের কয়েক মাস পর প্রথম সংসার ভেঙ্গে যায়। এরপর মিরপুর উপজেলার কচুবাড়িয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই স্ত্রীও নানা কারণে চলে যায় ৫ মাস পর।

এরপর কয়েকমাস পর ফের কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুণ্ডিতে তৃতীয় বিয়ে করেন তিনি। সে সংসারও টেকেনি রানার। এরপর সর্বশেষ চলতি মাসের ২০ জুলাই ভেড়ামারায় মৌসুমী নামের এক স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে করেন রানা।

এলাকার মাতবর ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আলী আসমত জানান, ‘এর আগে বিয়ে নিয়ে বেশ কয়েকবার বিচার-শালিস হয়েছে। তারপরও এই ধরনের কাজ চলছেই। তারা কাউকে না জানিয়ে একের পর নাবালক ছেলেকে বিয়ে দিচ্ছে।’ জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি করে এ কাজ করছে বলেও অভিযোগ তাদের।

যেভাবে জন্মনিবন্ধন পেলেন রানা: ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন থেকে ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই একটি জন্মনিবন্ধন নেন রানা মণ্ডল। সেই জন্মনিবন্ধনে বয়স দেখানো হয়েছে ২১ বছর। তবে বয়স প্রমাণের জন্য কোন কিছু জমা দেয়া হয়নি ইউনিয়ন পরিষদে।

ইউনিয়নের তৎকালিন চেয়ারম্যন খন্দকার টিপু সুলতান ও সচিবের অনুরোধে ইউনিয়ন পরিষদের ইউসিডি কর্মী এ জন্মনিবন্ধন রানার নামে ইস্যু করেন। এ জন্মনিবন্ধন সব বিয়েতে ব্যবহার করেছেন তিনি।

রানার বাবা কৃষি শ্রমিক রাশেদ মণ্ডল বলেন, ‘ছেলের জন্ম তারিখ আমার মনে নেই। তবে আমার মেয়ের বয়স বর্তমানে ১১ বছর। মেয়ের থেকে ছেলের বয়স ৮ থেকে ৯ বছর বেশি।’ গত দেড় বছরে ছেলে ৪টি বিয়ে করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথম দুই বউ চলে যাওয়ার পর আমি বিয়ে দিতে চাইনি। তার মা জোর করলে আবার বিয়ে দিয়েছি।’ বিয়ের আগে ইউনিয়ন সচিবের মাধ্যমে সনদটি নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

রানা মণ্ডলের মা রেহেনা খাতুন রেনু ছেলের বহু বিয়ে নিয়ে কথা বললে রাগান্বিত হয়ে বলেন, ‘আমার ছেলের বিয়ে আমি দেব তাতে আপনাদের সমস্যা কোথায়। ছেলে বিয়ে করতে চায় বিয়ে দিয়েছি এখানে বাইরের লোকের এত মাথা ব্যাথা কেন।’

রানার সহপাঠি হৃদয় খান জানান, ‘রানা ও আমি একসাথে পড়েছি। আমার এক বছরের বড় সে। আমি মাঝখানে মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ায় আমার এক বছর গ্যাপ রয়েছে। সেই হিসেবে রানা আমার এক বছরের বড় হত পারে। আমার বয়স এখন ১৬ বছর চলছে।’

রানার এলাকার খালাত ভাই আসিফ বলেন, ‘২০০৯ সালে আমরা দুইজন ক্লাস টুতে পড়তাম। এরপর সে লেখাপড়া বাদ দিয়ে কাজে যোগ দেয়। আমি এ বছর এসএসসি পাশ করেছি।’

ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমার সময়ে এ কাজ হয়নি। আগের চেয়ারম্যানের সময় সনদ জালিয়াতি করে কাজটি করেছে রানার পরিবার। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এদিকে বয়স না হওয়ায় ছেলেকে একাধিক বিয়ে দেওয়ায় রানার পিতা রাশেদ মণ্ডলকে পুলিশ আটক করেছে। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে রানা মণ্ডল

মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। দেড় বছরে একটি ছেলে ৪টি বিয়ে করেছে, তার তার বয়স কুড়ির নিচে। গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। সনদ জালিয়াতি করলে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’