টানা তৃতীয়বারসহ চতুর্থবারের মতো স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এই দেশেই নয়, উপমহাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ইতিহাস গড়লেন।
একাদশসংসদ নির্বাচনে সরকারবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপিকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে বিশাল বিজয় অর্জন করে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করলেন।
সোমবার বঙ্গভবনে ৩০ মিনিটের গোছানো অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাঁর মন্ত্রিসভার ৪৭ জন সদস্য শপথ নিলেন। ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী নিয়ে শেখ হাসিনা তাঁর মন্ত্রিসভা গঠনে যে চমক সৃষ্টি করেছেন; সেটি এক ঝলক বিশ্লেষণ করলে যে চিত্র উঠে আসে তা হলো, এক. মন্ত্রিসভায় প্রবীণ অভিজ্ঞ দক্ষ ও সফল অনেক মন্ত্রীকে এবার রাখা হয়নি। দুই. যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও নিকটাত্মীয় কাউকেই মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেননি।
তিন. মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেও ১৪ দলের কাউকেও তাঁর মন্ত্রিসভায় রাখেননি। প্রধানমন্ত্রী কঠিন চ্যালেঞ্জই নিয়েছেন।
মন্ত্রিসভায় যাঁরা ঠাঁই পেয়েছেন, তাঁদের দু-এক জন ছাড়া সবাই ক্লিন ইমেজের। এদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অভিজ্ঞতায় নবীন হলেও রাজনীতি ও বয়সে নবীন নন। শেখ হাসিনার অঙ্গীকার সততার সঙ্গে সেবকের ভূমিকায় বাস্তবায়নে দক্ষতার পরিচয় দিলে সাফল্যের মুকুট মাথায় তুলতে পারবেন। এ দায়িত্ব তাদের নিজের এবং শেখ হাসিনার ইজ্জত রক্ষার চ্যালেঞ্জ।
মন্ত্রিসভায় এবার প্রবীণ রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী ও ১৪ দলের রাশেদ খান মেনন এবং হাসানুল হক ইনুরা নেই। নেই এরশাদ ও শেখ হাসিনা সরকারের গুড মিনিস্টার আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও। যিনি এ দেশে সবচেয়ে বেশি সময় কৃতিত্বের সঙ্গে মন্ত্রিত্ব করেছেন। ঘটনাবহুল বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাধীনতা সংগ্রাম, সুমহান মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এরা একেকজন জীবন্ত ইতিহাস ও কিংবদন্তি।
তোফায়েল আহমেদ একজন তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ানই নন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের নায়কই নন, রাজনীতিতে বিচরণ করা মুজিববাহিনীর চার প্রধানের একজনই নন, স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় দায়িত্ব পালন করেছেন। শেখ হাসিনার ’৯৬ শাসনামলে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৮ সালের শেষ দিকে মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেননি। বিগত পাঁচ বছর বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে ছিলেন সফল।
আমির হোসেন আমু মন্ত্রীর চেয়ে বড় রাজনীতিবিদ হলেও ’৯৬ সালে খাদ্যমন্ত্রী ও বিগত পাঁচ বছর শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ’৯৬ সালে প্রথম কৃষিমন্ত্রী হন। বিগত দুই টার্ম মিলিয়ে তিনবার ছিলেন একজন সৎ ও সফল কৃষিমন্ত্রী। এদের মন্ত্রিত্ব ছিল দক্ষতার, কৃতিত্বের ও সাফল্যের। মন্ত্রিসভায় না থাকলেও এবার তাঁরা সংসদে ভূমিকা রাখতে পারবেন। সংসদীয় কমিটিগুলোর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারেন। সংসদকে বিতর্কে প্রাণবন্ত রাখতে পারেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিগত পাঁচ বছর দক্ষতার সঙ্গে জনপ্রিয়তা নিয়ে সংসদ চালিয়েছেন। অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ানদের দিয়ে বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করে নবীন সংসদ সদস্যদের দক্ষ এমপি হিসেবে গড়ে তুলতে অভিজ্ঞ প্রবীণদের কাজে লাগাতে পারবেন। ’
৭৯ সাল থেকে টানা আটবারের মতো এমপি হয়েছেন আরেক পার্লামেন্টারিয়ান শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম। শেখ সেলিম ’৯৬ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে সফলতা দেখালেও আর কখনো মন্ত্রী হননি। কিন্তু সংসদে বরাবর ভূমিকা রেখে এসেছেন। সংসদে এবারও তিনি জাতীয় ইস্যুতে জ্বলে উঠবেন।
বিগত ১০ বছরে শেখ হাসিনা দলের অভিজ্ঞ ও দক্ষ নেতাদেরই মন্ত্রী করেননি, তৃণমূলের নিবেদিতপ্রাণ প্রায় সব নেতাকেই একবার করে হলেও মন্ত্রী করেছেন।
বর্তমান মন্ত্রিসভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আবারও হয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দেশের যোগাযোগব্যবস্থার বিশাল কর্মযজ্ঞ তাঁর হাত দিয়ে যেভাবে প্রসারিত হয়েছিল, তার শুভ সমাপ্তি ঘটাতে এবং নতুন পরিকল্পনা নিয়ে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে আরও কর্মযজ্ঞ হাতে নিতেই দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী হিসেবে কর্মঠ, পরিশ্রমী এই মানুষটিকে হয় তো আবার বেছে নিয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী দ্বিতীয়বারের মতো হলেন আ ক ম মোজাম্মেল হক। গণমুখী চরিত্রের তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই রাজনীতিবিদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব শুরু করেছিলেন। পর্যায়ক্রমে পৌরসভার চেয়ারম্যান, এমপি ও মন্ত্রী হয়ে সফলতা ও সুনাম অর্জন করেছেন।
আ হ ম মুস্তফা কামাল, যাকে ‘লোটাস কামাল’ বলেই সবাই চেনেন বিগত মন্ত্রিসভায় পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে সফল ছিলেন। এবার তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হয়েছেন। এ দেশের সফল অর্থমন্ত্রী মরহুম সাইফুর রহমানের মতো তাঁর ব্যাকগ্রাউন্ডও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। একজন মেধাবী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে, অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাঁর পূর্বসূরিদের ভারী ইমেজকে অতিক্রম করে সাফল্য স্পর্শ করা যেমন তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, তেমনি ব্যাংকিং খাত ও শেয়ারবাজার মিলিয়ে দেশের আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা আরেক চ্যালেঞ্জ। সাইফুর, কিবরিয়া ও মুহিতের ভারী ইমেজ তাকে ভাঙতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী হয়েছেন ব্যবসায়ী টিপু মুনশি। তার সামনেও রেখে যাওয়া তোফায়েল আহমেদের মতোন সফল জনপ্রিয় বাণিজ্যমন্ত্রীর ইমেজকে অতিক্রম করতে হবে। আনতে হবে সাফল্য।
২০০৮ সালে খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে সফল হয়েছিলেন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ড. আবদুর রাজ্জাক। মেধাবী, উচ্চশিক্ষিত, গবেষক ও কৃষিবিদ ড. রাজ্জাক এবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। কৃষিতে শেখ হাসিনা যে বিপ্লব ঘটিয়েছেন, ড. রাজ্জাক তাঁর সততা, দক্ষতা ও মেধায় তা অব্যাহত রাখতে পারবেন। এটা আমাদের ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ। মো. শাহাবউদ্দিন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হয়েছেন। নিরহংকারী, নির্লোভ এই রাজনীতিবিদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে বার বার এমপি হয়েছেন। সংসদের হুইপ ছিলেন। রাজনীতির পরতে পরতে যে সুনাম ও দক্ষতা অর্জন করেছেন এই চ্যালেঞ্জ তিনিও নিতে পারবেন। কুমিল্লার লাকসাম থেকে বার বার বিজয়ী তাজুল ইসলামও ক্লিন ইমেজের একজন দক্ষ ও মেধাবী সজ্জন রাজনীতিবিদ। উন্নয়নবান্ধব বিশাল মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার তাঁর ওপর অর্পিত হয়েছে। এটি তাঁর জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। পরিশ্রম, সততা, মেধা ও দক্ষতায় এ চ্যালেঞ্জে তাঁকে উত্তীর্ণ হতে হবে।
অতিকথনে নয়, কাজেই সফলতা আনতে হয়- এ নীতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সবার সম্মান অর্জন করেছিলেন। এবারও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করাই তাঁর চ্যালেঞ্জ।
মুক্তিযুদ্ধের অনন্যসাধারণ সংগঠক একসময়ের যুবলীগ চেয়ারম্যান নিরাভরণ সাদামাটা জীবনের সৎ, বিনয়ী রাজনীতিবিদ নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন শিল্পমন্ত্রী হয়েছেন।
একজন গণমুখী আমলা হিসেবে সুনামগঞ্জের এম এ মান্নান সফলতা অর্জন করে রাজনীতিতে এসে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। বিগত টার্মে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। আপাদমস্তক সৎ, ভদ্র, বিনয়ী এম এ মান্নান এবার পরিকল্পনামন্ত্রী হয়ে আরও ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবেন।
সততা, দক্ষতা, পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সাজিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। উদ্যমী এই প্রতিমন্ত্রী সাফল্য হাতের মুঠোয় নিয়ে দেশের বিদ্যুৎ খাতকে অন্ধকার থেকে আলোর জগতে নিয়ে এসেছিলেন। এবার পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। তাঁর কর্মদক্ষতা দিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে দেশকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে পারবেন। ভূমি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আখতারুজ্জামান বাবুর সন্তান সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিগত টার্মে সফলতা দেখিয়েছেন। একজন সৎ, দক্ষ ব্যক্তিত্ববান নেতা হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাফল্য তিনিই এনেছিলেন। এবার পূর্ণমন্ত্রী হয়ে সেই সুনাম আরও বাড়িয়ে নেবেন- এটা মানুষ প্রত্যাশা করতেই পারে।
ছাত্রলীগের রাজনীতিতে উঠে আশা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম এবারই প্রথম দলে, সংসদে ও মন্ত্রিসভায় এসেছেন। ভাগ্য তাঁর সহায় হয়েছে অনেক। একজন সৎ, সজ্জন মানুষ হিসেবে তাঁকেও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মতোন মন্ত্রীর দক্ষতা, সফলতার ইমেজ ভেঙে সফলতা আনতে হবে। দেশের আবাসন সমস্যা ও মানুষের নানা চাহিদা পূরণ করতে হবে।
পঞ্চগড়ের মরহুম অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম জনপ্রিয় রাজনীতিবিদই নন, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। বার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর ছোটভাই অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। দুঃসময়ে ডাকসুর সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী দলের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে ২০০৮ সাল থেকে এমপি হয়ে এসেছেন। এবার রেলমন্ত্রী হয়েছেন। সততা, দক্ষতা ও সাহস দিয়ে রেল যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন ও সংস্কারের চ্যালেঞ্জে তিনি জয়ী হতে পারবেন। ড. এম এ মোমেন জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন। ভদ্র, সৎ, সজ্জন, সফল এই কূটনীতিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সাফল্যের চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়েছেন।
দেশসেরা অন্যতম আইনজীবী মরহুম সিরাজুল হকের পুত্র প্রথিতযশা আইনজীবী আনিসুল হক এবার দ্বিতীয়বারের মতো আইনমন্ত্রী হলেন। একজন ভদ্র, দক্ষ আইনজীবী হিসেবে তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে পালন করবেন। ডা. দীপু মনি ২০০৮ সালে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর বিদেশ সফর নিয়ে আমরা সমালোচনা করলেও এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, তিনি উচ্চশিক্ষিত বিদুষী নারী আপাদমস্তক সৎ, পরিশ্রমী ও কর্মঠ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অতীতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় বিতর্কিত হয়েছে। এবার শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ডা. দীপু মনি সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষার মান যেমন উন্নত করবেন, তেমনি স্কুল-কলেজে লেখাপড়ার পরিবেশ, শিক্ষক সংকট, আবাসনসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করবেন।
ড. হাছান মাহমুদ আগে ছিলেন বন ও পরিবেশমন্ত্রী। এবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। বাগ্মিতায় সরস রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বাগ্যুদ্ধে ঘায়েলে পারদর্শী এই নেতা গণমাধ্যমবান্ধব চরিত্র নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কালো থাবা থেকে সাংবাদিকদের রক্ষা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত রাখতে ভূমিকা রাখবেন।
লালমনিরহাট থেকে নির্বাচিত নুরুজ্জামান আগের টার্মে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবার পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। সৎ, বিনয়ী, নিরাভরণ জীবনের অধিকারী এই রাজনীতিবিদও ইউপি চেয়ারম্যান থেকে সংসদ সদস্য হয়ে এবার পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। দুস্থ, দরিদ্র, প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য হৃদয়-মন দিয়ে কাজ করবেন- এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর মতো ভদ্র, বিনয়ী ও সৎ নেতারা এবার প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এ কে এম এনামুল হক শামীম কর্মীবান্ধব গণমুখী চরিত্রের একজন সৎ, দক্ষ, পরিশ্রমী রাজনীতিবিদ হিসেবে এবার উপমন্ত্রী হয়েছেন। মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের মতো শিক্ষিত, ভদ্র রাজনৈতিক পরিবারের সন্তানও উপমন্ত্রী হয়েছেন। জাহিদ আহসান রাসেলের মতো জনপ্রিয় গণমুখী রাজনৈতিক কর্মী প্রতিমন্ত্রী হলেন। ইমরান আহমেদের মতো ভদ্র, উচ্চশিক্ষিত বার বার সংসদে বিজয়ী এমপিও এবার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। জাহিদ মালেকের মতো জনপ্রিয় মানুষ স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েছেন। জুনাইদ আহমেদ পলকের মতো মেধাবী তরুণ আবার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। মোস্তাফা জব্বারের মতো ব্যক্তিত্ব আবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী হয়েছেন টেকনোক্র্যাট কোটায়।
শেখ হাসিনার নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের চ্যালেঞ্জ এখন এই মন্ত্রীদের হাতে। বঙ্গবন্ধুকন্যা অঙ্গীকার করেছেন, গ্রাম হবে শহর। তিনি ইতিমধ্যে টানা দুবারের শাসনামলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সফলই হননি; দেশ-বিদেশে খ্যাতি ও সুনাম অর্জন করেছেন। এবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে হবে যুদ্ধ। একদিকে গ্রামীণ জনপদ থেকে সারা দেশে উন্নয়নের মহাকর্মযজ্ঞ, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও বেগবান করে লক্ষ্য অর্জন; অন্যদিকে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ক্যান্সারের মতো দুর্নীতি যেভাবে বাসা বেঁধেছে তার মূলোৎপাটনের সংগ্রাম হবে শেখ হাসিনার। স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থার মধ্য দিয়ে অতীতের দুর্নাম কাটিয়ে সুশাসন নিশ্চিত করা হবে বড় কাজ। সেখানে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্য এবারের দায়িত্ব গ্রহণ হবে বড় চ্যালেঞ্জ।
এবারের মন্ত্রিসভায় অনেক হেভিওয়েট জায়গা পাননি। তার মানে এই নয়, তাঁরা সবাই ব্যর্থ ছিলেন। এদের অনেকেই ছিলেন সফল, দক্ষ ও সৎ। তেমনি কেউ কেউ ছিলেন বিতর্কিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত। সততা, দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাঁরা সুনাম অর্জন করেছেন, তাঁরা এবার মন্ত্রিসভায় না আসায় মানুষ আফসোস করছেন। এটাই হলো মানুষের পাওয়া নির্মল ভালোবাসা। আর যাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, বিতর্কিত হয়েছিলেন এবং দুর্নাম কুড়িয়েছিলেন, তাঁদের চেহারাও ছিল মানুষের কাছে উন্মোচিত। এঁরা মন্ত্রিসভায় না আসায় মানুষ খুশি হয়েছে।
শেখ হাসিনা যাঁদের গভীর আস্থা ও বিশ্বাস থেকে মন্ত্রিত্বের পবিত্র ও কঠিন দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, সেসব মন্ত্রীকে মনে রাখতে হবে, এটি তাঁদের জন্য গুরুদায়িত্বই নয়, মাথার ওপর তুলে দেওয়া কঠিন চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জে সফল হলে রাজনীতি ও মানুষের হৃদয়ে নায়কের আসনে বসবেন। আর বিতর্কিত ও ব্যর্থ হলে খলনায়ক হিসেবে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। মন্ত্রীদের জন্য পাঁচ বছর কঠিন চ্যালেঞ্জের। এটি মাথায় নিয়েই দেশের উন্নয়নে গণমুখী চরিত্র নিয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে, সততার সঙ্গে ইবাদতের মতো দায়িত্ব পালন করতে হবে। সব লোভ-মোহের ঊর্ধ্বে থেকে মন্ত্রণালয় চালাতে হবে। ডানে-বাঁয়ে বিতর্কিতদের যেমন আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না, তেমনি তাদের ঘিরে কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত, বিতর্কিত সিন্ডিকেট গড়ে না ওঠে, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। পাঁচ বছর পর বুঝবেন তালি পাচ্ছেন, নাকি গালি খাচ্ছেন।
এবারের মন্ত্রিসভায় অনেক হেভিওয়েট জায়গা পাননি। তার মানে এই নয়, তাঁরা সবাই ব্যর্থ ছিলেন। এদের অনেকেই ছিলেন সফল, দক্ষ ও সৎ। তেমনি কেউ কেউ ছিলেন বিতর্কিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত। সততা, দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাঁরা সুনাম অর্জন করেছেন, তাঁরা এবার মন্ত্রিসভায় না আসায় মানুষ আফসোস করছেন। এটাই হলো মানুষের পাওয়া নির্মল ভালোবাসা। আর যাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, বিতর্কিত হয়েছিলেন এবং দুর্নাম কুড়িয়েছিলেন, তাঁদের চেহারাও ছিল মানুষের কাছে উন্মোচিত। এঁরা মন্ত্রিসভায় না আসায় মানুষ খুশি হয়েছে।
শেখ হাসিনা যাঁদের গভীর আস্থা ও বিশ্বাস থেকে মন্ত্রিত্বের পবিত্র ও কঠিন দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, সেসব মন্ত্রীকে মনে রাখতে হবে, এটি তাঁদের জন্য গুরুদায়িত্বই নয়, মাথার ওপর তুলে দেওয়া কঠিন চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জে সফল হলে রাজনীতি ও মানুষের হৃদয়ে নায়কের আসনে বসবেন। আর বিতর্কিত ও ব্যর্থ হলে খলনায়ক হিসেবে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। মন্ত্রীদের জন্য পাঁচ বছর কঠিন চ্যালেঞ্জের। এটি মাথায় নিয়েই দেশের উন্নয়নে গণমুখী চরিত্র নিয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে, সততার সঙ্গে ইবাদতের মতো দায়িত্ব পালন করতে হবে। সব লোভ-মোহের ঊর্ধ্বে থেকে মন্ত্রণালয় চালাতে হবে। ডানে-বাঁয়ে বিতর্কিতদের যেমন আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না, তেমনি তাদের ঘিরে কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত, বিতর্কিত সিন্ডিকেট গড়ে না ওঠে, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। পাঁচ বছর পর বুঝবেন তালি পাচ্ছেন, নাকি গালি খাচ্ছেন।
গণমাধ্যমের যে কোনো খবর ব্যক্তিগত জেদ থেকে না নিয়ে কোথাও ভুল হচ্ছে কিনা এই বিবেচনা নোটিসে নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে। দেশের ১৭ কোটি মানুষের ভাগ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। ইজ্জত রক্ষার চ্যালেঞ্জ আপনাদেরই নিতে হবে। এই মন্ত্রিসভার সামনে কার্যত মানুষের প্রত্যাশা পূরণ, শেখ হাসিনা ও মন্ত্রীদের নিজেদেরও ইজ্জত-সম্মান রক্ষার চ্যালেঞ্জ।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন
সুত্র- বাংলাদেশ প্রতিদিন