৮ নভেম্বর, জাতির উদ্দেশ্যে সিইসি’র ভাষণ, ঘোষণা করা হলো একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। পরদিন ৯ নভেম্বর। রাজশাহীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভা। বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও সেই জনসভায় লোকসমাগম হলো ব্যাপক।
ঐক্য ফ্রন্টের নেতারা সেখান থেকে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন তাদের ৭ দফা দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলন। জনসভা শেষে রাজশাহীর একটি হোটেলে জাতীয় ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সভা। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ফোন। ঢাকায় ফিরে আসার নির্দেশনা দেয়া হলো নেতাদের। রাতের মধ্যে পাল্টে যায় পুরো পরিস্থিতি।
জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের নেতারা ঢাকায় ফিরলেন রোববার দুপুরে। আর এরমধ্যেই ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বসেন বিকেল ৫টায়। সিদ্ধান্ত নিতে হবে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, না করার বিষয়ে।
ডাকা হলো ২০ দলীয় জোটের শরিকদের। আসলেন জোটের শরিক ২৩ দল। তাদের মধ্যে চারটি বাদে বাকি ১৮টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণে মতামত দেন। এরপর দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে পরিস্থিতি। ২০ দলীয় জোটের বৈঠক শেষে জোটের শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ জানালেন, নির্বাচনে যেতে চান এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে বিএনপিকে জানিয়েছেন তারা।
রাত ৯ টা। গুলশান কার্যালয়ে আসতে থাকেন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের নেতারা। ড. কামাল হোসেন ছাড়া ঐক্যফ্রন্টের অধিকাংশ নেতা এই বৈঠকে যোগ দেন। ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বক্তব্যে বেরিয়ে আসে নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত।
হঠাৎ নেতাদের ইউটার্ন। পাল্টে যায় হিসাব-নিকাশ। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত, যা ছিলো অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত। তবে জানা গেছে, পর্দার অন্তরালে মিলেছে আশ্বাস এবং প্রতিশ্রুতি। বিএনপির দাবি খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তাকে অবাধে নির্বাচনে চলাফেরা সুযোগের সুযোগ সৃষ্টি। সেই আশ্বাস নাকি পেয়েছে বিএনপি। বিএনপির কারো কারো বক্তব্য, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য নির্বাচনের সিদ্ধান্ত।
গভীর রাতে যখন এই বিষয়গুলো নিয়ে পর্দার অন্তরালে আলোচনা চলছে। ১১ নভেম্বর ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বললেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। তার এই বক্তব্যের পর বোঝা যায়, ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। ঐক্যফ্রন্ট যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এ বিষয়ে সংলাপের পিছনেও চলেছিলো আলোচনা। একপর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস মেলে। রোববার বেইলি রোডের নিজ বাসভবনে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ড. কামাল হোসেন। আর সেখানেই সাংবাদিকদেরকে তিনি ইঙ্গিত দেন, ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাচ্ছে।
ঐক্যফ্রন্টের এই সিদ্ধান্তে নড়ে চড়ে বসে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। ঐক্য ফ্রন্ট নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তে স্বস্তিতে এসেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। ঐক্যফ্রন্টের এই সিদ্ধান্তে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে বিএনপির একটি অংশ। তাই মতবিরোধ থেকেই যাচ্ছে বিএনপি শিবিরে।
নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতীক কী হবে জানেন না ড. কামাল হোসেন। পাশ থেকে মির্জা ফখরুল শিখিয়ে দিলেন, পরে জানানো হবে। আরেক পাশ থেকে আ স ম আব্দুর রব শিখিয়ে দিলেন, আন্দোলন চলবে। ড. কামালের লিখিত বক্তব্যও পড়ে শোনালেন মির্জা ফখরুল।
সব মিলিয়ে জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু চরম বিশৃঙ্খলার এই সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামালকে পাপেটের চেয়ে বেশি কিছু মনে হয়নি।