যখন কোনও মেয়ে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন, তখন সত্যিই তিনিই ধর্ষিতা হয়েছেন কি না তা জানার জন্য চলে তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা।
সেই পরীক্ষার সময়ে যে ধরনের লাঞ্ছনার সম্মুখীন হতে মেয়েটিকে, কখনও কখনও তা হয় তাঁর মূল লাঞ্ছনার ঘটনার চেয়েও বেশি লজ্জাজনক। কীভাবে হয় একজন ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা? সম্প্রতি ডাক্তার কে এস নারায়ণ রেড্ডি, ডাক্তার ও পি মূর্তি তাঁদের ‘দা এসেন্সিয়ালস অফ ফরেনসিক মেডিসিন এন্ড টক্সিকোলজি’ বইতে জানিয়েছেন সেই প্রশ্নের উত্তর।
সেই বই থেকে ধর্ষণোত্তর ডাক্তারি পরীক্ষার যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে তা শিউরে ওঠার মতো। সেই বই থেকে তুলে দেওয়া হল ১০টি তথ্য-
১. ডাক্তারি পরীক্ষার সময়ে একটি একটি করে রোগিনীকে তার সমস্ত পোশাক খুলে নিতে হয় একজন ডাক্তারের উপস্থিতিতে। একটি কাগজের টুকরোর উপরে দাঁড়িয়ে এই কাজ করতে হয়, যাতে পোশাক খোলার সময়ে মেয়েটির শরীর থেকে নীচে খসে পড়া যে কোনও কিছু বা সমস্ত কিছু ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা যায়। শরীরে লেগে থাকা রক্ত, বীর্য, কাদা, কিংবা ঘাম— যা কিছু অপরাধের প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগতে পারে, সংগ্রহ করা হয় মেয়েটির শরীর থেকে।
২. সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় আল্ট্রভায়োলেট আলোর সাহায্যে মেয়েটির শরীর পরীক্ষা করে দেখা হয় তার শরীরের কোনও অংশে বীর্যের কোনও চিহ্ন রয়েছে কি না।
৩. শরীরে তৈরি হওয়া কোনও কাটা, ছড়া বা ছাল উঠে যাওয়ার মতো ক্ষতস্থান— যেগুলি ধস্তাধস্তির ফলে তৈরি হতে পারে, সেগুলিকে খুঁটিয়ে দেখে পরীক্ষা করা হয়।
৪. শরীরের আঘাতপ্রাপ্ত অংশগুলি, বিশেষত যৌন অঙ্গের ক্লোজ আপ ছবি নেওয়া হয়।
৫. মেয়েটির শরীরের কোনও অংশে কতটা চাপ পড়েছে তার উপর নির্ভর করে কী ধরনের ক্ষত তৈরি হবে সেই অংশে। যদি মেয়েটির পিঠে বা কোমরে ছড়ে যাওয়ার দাগ থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, মেয়েটিকে কোনও পাথুরে বা শক্ত জমির উপর ফেলে নির্যাতন চালানো হয়েছে। স্তনবৃন্তে কামড় বা অন্য কোনও আঘাতের চিহ্নও পাওয়া যেতে পারে।
৬. তবে সাধারণত লাঞ্ছিতার ১/৩ অংশের শরীরেই এই ধরনের কোনও ধস্তাধস্তির চিহ্ন দৃশ্যমান হয় না, কারণ ধর্ষণের সময়ে মেয়েরা ভয়ের চোটে সাধারণত আক্রমণকারী খুব একটা বাধা দেয় না। বিশেষত মেয়েটির মাথায় যদি আঘাত করা হয়, কিংবা গলা চেপে ধরা হয়, তাহলে তার বাধা দেওয়ার ক্ষমতা এবং সাহস কমে যায় অনেকটাই। সেসব ক্ষেত্রে তার শরীরের অন্যান্য অংশে তেমন গুরুতর আঘাতের চিহ্ন আর থাকে না।
৭. মেয়েটির যৌন কেশ খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হয়, সেখানে কোনও পুরুষের যৌন কেশ কিংবা ধুলোবালি ইত্যাদি লেগে রয়েছে কি না। ধর্ষিতা জীবিত হোক বা মৃত, তার অন্তত ১৫-২০টি যৌন কেশ সংগ্রহ করা হয় ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য।
৮. মেয়েটির মাথার চুলও সংগ্রহ করা হয় পরীক্ষার জন্য।
৯. ধর্ষিতার যৌন কেশ কিংবা যোনির আশেপাশে বীর্যের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কি না, তা খুঁটিয়ে দেখা হয়। তুলোর সাহায্যে মেয়েটির যোনিরস সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয় ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য। খুঁটিয়ে দেখা হয় মেয়েটির সতীচ্ছদের অবস্থাও।
১০. যদি অপরাধ ঘটে থাকে ৪৮ ঘন্টা কিংবা তারও বেশি সময় আগে, তাহলে একটি কাঁচের রড, তুলো কিংবা স্প্যাটুলার সাহায্যে যোনির ভিতর থেকে সংগ্রহ করা হয় যোনিরস। দেখা হয়, তাতে বীর্য কিংবা রক্তের কোনও নমুনা মিলছে কি না।
যেখানে যত ধর্ষণের ঘটনা পুলিশের খাতায় ওঠে, তার চেয়ে অনেক বেশি কেস পুলিশের গোচরেই আনা হয় না। তার একটা অন্যতম কারণ হল, পুলিশে অভিযোগ জানানোর পরে অকল্পনীয় হেনস্থার শিকার হতে হয় অধিকাংশ মেয়েকে।