কম খরচে সুখী হওয়ার নয় উপায়

শরীর ও মনের সুখ-শান্তির জন্য বহু টাকা খরচ করে ইয়োগা ক্লাস, ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট, ব্যয়বহুল স্পা অথবা স্বপ্নের দেশে লম্বা অবকাশ-যাপন- কোনটাই কার্যকর না-ও হতে পারে। আবার নিত্যদিনকার এমন কিছু সাদাসিধে ব্যাপার আছে যা হয়তো একজন মানুষের জীবনকে সুখী, স্বস্তিকর এবং সুন্দর করে তুলতে পারে।

ঘরকে সবুজময় করে তোলা

ঘরের ভেতর গাছপালা স্ট্রেস কমিয়ে দেয় এবং সুখকে বাড়িয়ে দেয়। কিভাবে?

মৌলিক যে বিষয়টি সবাই জানানে যে, গাছ কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন ছাড়ে যা আমাদের বেঁচে থাকার শক্তি। কিছু কিছু গাছ বায়ুকে বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে কারণ তারা বায়ু থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিককে টেনে নেয়।

শরীরের পানির মাত্রা ঠিক রাখা

মানুষের শরীরের প্রধান উপাদান পানি। প্রাপ্তবয়স্ক একজন নারীর শরীরে ৫৫ শতাংশ এবং পুরুষের শরীরে ৬০ শতাংশ কার্যক্ষমতার জন্য পানি প্রয়োজন।

সেকারণে শরীরে পর্যাপ্ত জলীয় থাকলে সুস্বাস্থ্য, শক্তির মাত্রা বাড়া এবং মনোযোগের শক্তি বাড়ে। যদি প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে বিস্বাদ মনে হয় তাহলে তার সাথে লেবু বা শসা কিংবা আদার টুকরো মেশানো যেতে পারে।

এমনকি পানি খাওয়ার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে না পারলে তাদের জন্য ইন্টারনেট অ্যাপসও আছে যার মাধ্যমে পানি পানের জন্য রিমাইন্ডার পাঠানো হবে।

নিজের কক্ষের নতুন সাজ-সজ্জা

আমরা আমাদের ঘর-বাড়ি কিভাবে সাজাই, সেটা আমাদের মেজাজের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে, সেইসাথে কতটা ঘুমাই এবং আমাদের এনার্জি লেভেল কেমন তাতেও প্রভাব ফেলে। যদি আপনি সেখানে নতুন রূপ দিতে চান তাহলে শোবার ঘর থেকে শুরু করুন।

মুক্ত বাতাসের জন্য জানালা খুলে দিন, যতটা সম্ভব দিনের আলো ঘরে ঢোকার ব্যবস্থা রাখুন।পরিষ্কার রাখুন কাপবার্ডের সবকিছু এবং বিছানার তলা পরিচ্ছন্ন রাখুন।

যদি আপনি একে এক ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যেতে চান তাহলে গুরুত্ব দিতে পারেন চীনের প্রাচীন ফেং শুই পদ্ধতিকে। সেজন্য বইপত্র ঘাঁটাঘাঁটিও করতে পারেন।

ফেং শুই দিয়ে বোঝানো হয় বায়ু ও পানি। ফেং শুইতে ‘চি’ নামের সর্বজনীন শক্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

বলা হয়, মানবশরীরের অভ্যন্তর ও বাইরে এই শক্তিই সমস্ত কাজকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে ফেং শুই এর এই সূত্র মানুন বা নাই মানুন এটি অনুসরণ করে অন্তত দারুণ রুম লে-আউট পাওয়া যেতে পারে।

বাড়িতে তুলির আঁচড়

বাড়ির দেয়ালের রং মানুষের মুড বা মন-মেজাজের ওপর দারুণভাবে প্রভাব রাখে। সবুজ রং- প্রকৃতির প্রতিনিধিত্ব করে এই রং ঘরের ভেতর ভারসাম্য, সমন্বয় এবং শিথিলতা এনে দিতে পারে।

নীল রং-একটি নান্দনিক গুণ সম্পন্ন রং। এটি প্রশান্তির এক অনুভূতি তৈরি করে এবং বিশ্রাম এনে দেয়, এ কারণে এই রং শোবার ঘরের জন্য সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ।

তবে লাল রং এড়িয়ে যাওয়া উচিত কারণ তা আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসকে দ্রুত করে যা হার্ট-রেট এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।

পাখিদের গান

শুনলে হয়তো কুউ-কুউ- শোনায়, কিন্তু লন্ডনের বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে, পাখীদের গান বা কিচির-মিচির শব্দ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

স্বেচ্ছাসেবকদের একটি অ্যাপের মাধ্যমে তাদের মুড রেকর্ড করে রাখতে বলা হয়েছিল। এবং দেখা যায়, পাখীর গান, গাছপালা এবং আকাশ তাদের যে মানসিক প্রশান্তি এনে দিয়েছিল কয়েক ঘণ্টা সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তার রেশ ছিল।

যদি আপনার পক্ষে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে পড়া সম্ভব না হয় এবং প্রকৃতির মাঝে ডুব দেয়া সম্ভব না হয় তাহলে উপায়?

বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে সে ব্যবস্থাও অসম্ভব নয়। পাখীর কিছু গান বা শব্দ ডাউন-লোড করে ফোনে সেভ করে নিয়ে হেড-ফোন দিয়ে শুনুন। আর চোখ বন্ধ করে ভাবুন প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

পোষা বিড়াল

গবেষণা বলছে, বিড়াল পোষার ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

চার হাজারের বেশি আমেরিকান নাগরিকের ওপর দশ বছর ধরে চালানো গবেষণায় ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার স্ট্রোক ইন্সটিটিউট ইন মিনেপলিস এর গবেষকরা দেখেছেন যে, বিড়াল পুষেছেন এমন ব্যক্তিদের অন্যদের তুলনায় হার্ট অ্যাটাকে কিংবা স্ট্রোকে মৃত্যুর হার ৩০ শতাংশ কম ছিল।

হাসতে থাকুন

নির্মল হাসি আমাদের পেশীগুলোকে আলগা করে, রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে, নাইট্রিক অক্সাইড বের করে দেয়, যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

হাসি স্ট্রেস হরমোন কমায় এবং শরীরের এন্ডোরফিন শিথিল করে যার ফলে আমাদের শরীর আরাম পায় এবং এটা প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে।

এটা ঠিক যে, হাসি সত্যিকারভাবেই শ্রেষ্ঠ ওষুধ।

যেসব বন্ধুদের সঙ্গ আনন্দ দেয় তাদের সাথে সময় কাটানো, কমেডি দেখা ইত্যাদি হতে পারে সুন্দর সময় কাটানোর উৎস। আর ততটা সামাজিক না হলে ভিডিও দেখা যেতে পারে।

কাজের ক্ষেত্রে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দৃষ্টিভঙ্গি

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ যেমন- সুইডেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে এবং আইসল্যান্ড- বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশগুলোর অন্যতম।

কাজের ক্ষেত্রে সুখী এবং উন্নতির জন্য বেশকিছু কৌশল অনুসরণ করে থাকে সেখানকার মানুষেরা।

সুইডেনে একটি রীতি প্রচলিত আছে যা ফিকা নামে পরিচিত, যার ফলে প্রতিদিন কফি ও কেক খাওয়ার জন্য বিরতি নিতে হয় যখন কলিগরা একত্র হন।

তারা হয়তো কফির পাত্র নিয়ে বসে এবং সাথে থাকে কিছু ঘরে বানানো খাবার। কর্মক্ষেত্রে ফিকা একধরনের অবশ্য পালনীয় রীতি।

পর্যাপ্ত ঘুম

সুস্থতা এবং ভাল থাকার জন্য খাবার এবং ব্যায়ামের মতো মানসিক এবং শারীরিক বিশ্রাম খুব গুরুত্বপূর্ণ। ঘুম কম হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়।

স্ট্রেস হরমোন লেভেল বেড়ে যায়, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা দেখা যায়। আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের শরীরের ভেতর নানা কাজ চলে। ভাল ঘুমের জন্য পরিশ্রম দরকার। শোবার ঘরকে পরিষ্কার এবং নীরব রাখা দরকার, রাতে দেরি করে খাওয়াও বন্ধ করতে হবে।

সেইসাথে সব ধরনের ডিভাইসের আলো যাতে না থাকতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে কারণ ফোন বা ট্যাবলেট দিয়ে বেরনো সামান্য নীল আলোও আপনার ঘুম চোখ থেকে কেড়ে নিতে পারে।

দিনের শেষভাগে ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় বাদ দিতে হবে-এটাই তার সময়।