ক বছরের মধ্যে তৈরি হবে ক্যানসার শনাক্তকরণ ‘ডিভাইস’। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল ক্যানসার শনাক্তকরণ প্রযুক্তি আবিষ্কারের পর এখন ডিভাইস ও ডাটাবেজ তৈরির ওপর মনোযোগ দিয়েছেন। কাজ এগিয়ে গেছে অনেক দূর। আগামী এক বছরের মধ্যে ডিভাইসটি সহজলভ্য করা হবে। তাদের টার্গেট হচ্ছে প্রথমে দেশের ভেতরেই কমমূল্যে সেটি পৌঁছানো। এ লক্ষ্যে এখন কাজ চলছে। গতকাল সকালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও গবেষক ড. শরীফ মো. শরাফউদ্দিন মানবজমিনের কাছে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘ক্যানসার শনাক্তকরণের গেইটওয়ে খোলা হয়েছে।
এটি কোন স্টেইজে, কোন অবস্থায় রয়েছে এবং সেটির ক্ষতির পরিমাণ কতটুকু- এসব বিষয়ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুঁজে বের করতে গবেষণা চলছে। তবে ডিভাইস ও ডাটাবেজ তৈরিতে এখন মনোযোগ সবচেয়ে বেশি। গবেষণা দলের সব সদস্য এখন ডিভাইস তৈরির দিকে মনোযোগ দিয়েছেন।’
গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য ড. শরীফ জানান, ‘এখন জাতীয় ক্যানসার হাসপাতাল থেকে তাদের ল্যাবে রক্ত পাঠানো হয়। এবং সেটি পরীক্ষা করার পর রিপোর্ট দেয়া হয়। ল্যাবের বাইরে সেই পরীক্ষা করতে হলে ডিভাইস জরুরি। এক ডিভাইসের মধ্যে পরীক্ষার যাবতীয় উপাদান সংযুক্ত করে সেটি পরিপূর্ণ করতে হবে। পাশাপাশি যাতে কমমূল্যে সবাই এর সুফল ভোগ করতে পারে সেটিও দেখা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।’ বায়োকেমিক্যাল নয়, অপটিক্যাল পদ্ধতির মাধ্যমে ক্যানসার শনাক্ত করার প্রক্রিয়া বাংলাদেশের গবেষণার আলোকিত একটি অধ্যায়। আর এই অধ্যায়ের শুভ সূচনা ঘটালেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের গবেষকরা। এই গবেষণার নেতৃত্ব দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. ইয়াসমীন হক। এই গবেষণা দলকে সহযোগিতা করেছেন কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. জাফর ইকবালও। এই গবেষণায় অংশ নিয়ে দুইজন পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
গবেষণার শুরুর গল্পটা ভালো ছিল না। ১৯৯৬ সাল থেকে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে এই গবেষণা নিয়ে পরিকল্পনা শুরু হয়। আর এই পরিকল্পনার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন তখনকার তরুণ শিক্ষক ড. শরীফ মো. সরাফউদ্দিন। প্রফেসর ড. জাফর ইকবাল ও প্রফেসর ড. ইয়াসমিন হকের অনুপ্রেরণায় নিজেরাই গবেষণা শুরু করেন। কিন্তু গবেষণার যন্ত্রপাতি উচ্চ মূল্য থাকায় সেটি ধীরগতিতে এগোয়। পরবর্তীতে ২০১১ সাল থেকে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় গবেষণার কাজ পুরোদমে শুরু হয়। আর ২০১৫ সালের দিকে এসে সেটি প্রজেক্টর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। এবং অত্যাধুনিক ল্যাব তৈরিতে সহযোগিতা করে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংক।
প্রফেসর ড. ইয়াসমীন হক জানিয়েছেন, ‘গবেষণার মূলপর্ব শুরুর পর টার্গেট ধরা হয়েছিল ৫ বছর। কিন্তু সোয়া দুই বছরের মাথায় তারা ক্যানসার শনাক্তকরণের প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন। রক্ত সংগ্রহের পর কোনো বাড়তি কেমিক্যাল না মিশিয়ে অপটিক্যাল লেজারের মাধ্যমে তারা ক্যানসার নির্ণয় করতে পারছেন।’ ৫০০ টাকার বিনিময়ে মাত্র ৫ মিনিটে ক্যানসার শনাক্তকরণের এ প্রক্রিয়া দেশের ইতিহাসে প্রথম। মেথড অ্যান্ড সিস্টেম বেজড ননলিনিয়ার অপটিক্যাল ক্যারেকটারিস্টিক অব বডি ফ্লুয়িড ফর ডায়াগনোসিস অন নিওপ্লাসিয়া’ শিরোনামের এই প্রযুক্তির পেটেন্টের জন্য বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান গবেষকরা।