আজ নয় কাল, এখন নয় তখন বলে আমরা অনেক সময় এমন কিছু কাজ জমিয়ে রাখি যা পরবর্তীতে আমাদেরই করতে হয়।
মানুষের কাজ জমিয়ে রাখার প্রবণতা নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, কোনো কাজে গড়িমসি করবেন কি না তা নির্ভর করে আপনার মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে তার উপর।
২৬৪ জন ব্যক্তির মস্তিষ্ক স্ক্যান করে চালানো হয়েছে এই গবেষণা। তারা বলছেন, কোনো ব্যক্তি একটি কাজ কাজ দ্রুত করবেন না কি পরে সম্পাদন করার জন্য ফেলে রাখবেন, তা মস্তিষ্কের দুইটি জায়গা থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়।
মনোবিজ্ঞান বলে কাজে গড়িমসি করার অভ্যাস বা দীর্ঘসূত্রতার প্রবণতা তৈরি হয় আবেগের কারণে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক উপায়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই প্রবণতা কমতে পারে।
মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ
গত কয়েক দশক ধরে মানুষের দীর্ঘসূত্রতার প্রবণতা নিয়ে গবেষণা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের কার্লেটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টিম পাইকল। তার মতে গড়িমসি করার অভ্যাস সময় নিয়ন্ত্রণে অপারগতার কারণে নয়, মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে তৈরি হয়।
গবেষণার ফলে প্রমাণিত হয়েছে যে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে দীর্ঘসূত্রতা বিষয়ক জটিলতায় ভুগে মানুষ।
তবে মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা পরিবর্তন করা সম্ভব বলে মনে করেন পাইকল। তিনি বলেন, বিশেষ ধরণের মেডিটেশন বা ধ্যান করে যে মস্তিষ্কের কাজ করার পদ্ধতি পরিবর্তন করা যায় তা প্রমাণিত হয়েছে গবেষণায়।
গবেষণার প্রধান রচয়িতা ড. ক্যারোলিন শ্খুলটার বলেন, মস্তিষ্ক খুবই সংবেদনশীল একটি অঙ্গ এবং এটি জীবদ্দশায় যে কোনো সময়েই পরিবর্তিত হতে পারে।
আপনি কি কাজে গড়িমসি করেন?
উৎপাদনশীলতা বিশেষজ্ঞ ময়রা স্কট মনে করেন, নিজেকে উদ্বুদ্ধ করার সময় নিজের ব্যক্তিত্ববোধের বিচারে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, যখন আমরা কাজে গড়িমসি করি তখন নিজেকে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বেশ কয়েকটি কৌশলের আশ্রয় নিতে পারি আমরা।
তার পছন্দের কৌশলগুলো হলো
যদি কাজ শেষ করার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকে, তাহলে নিজেকে ছোট ছোট সময়সীমা বেঁধে দিন। যেমন, টানা ২৫ মিনিটের কয়েকটি শিফট যার প্রতিটির মধ্যে ৫ মিনিটের মত বিরতি থাকবে। প্রতি ৯০ মিনিট পরপর অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ বিরতিও নিতে পারেন।
কাজের একটি তালিকা তৈরি করুন কিন্ত কাজগুলোকে ছোট ছোট কয়েকটি কাজে ভাগ করে রাখুন। এর ফলে কাজগুলো সহজ মনে হবে এবং মেষ করতে অনুপ্রেরণা পাবেন।
কাজের মাঝে আপনাকে বিরক্ত করতে পারে, যেমন আপনার মোবাইল ফোন, এমন জিনিস দূরে সরিয়ে রাখুন। নিশ্চিত করুন যে কাজের সময় কেউ যেন আপনাকে বিরক্ত করার সুযোগ না পায়।
প্রয়োজনীয় কাজ করার চেয়ে ‘ব্যস্ত’ থাকা বেশি সহজ। যতটুকু করা সম্ভব তা না করে আমরা অন্যান্য কাজ করি এবং নিজেদের বোঝাই যে আমাদের আসলে সময় নেই। এই প্রবণতা ত্যাগ করা যেতে পারে।