চামড়ার দাম কেন বাড়ে না?

তৈরি পোশাক শিল্পের পর দেশের অন্যতম সম্ভাবনায় খাত চামড়া। এ খাতে স্থানীয় মূল্য সংযোজন প্রায় শতভাগ। তৈরি পোশাক থেকে আমরা যত রপ্তানি আয় করি তার বেশির ভাগই চলে যায় খাত সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানিতে। কিন্তু চামড়া খাতের জন্য শুধু প্রক্রিয়াজাত করতে কিছু কেমিক্যাল ছাড়া, পুরোটাই স্থানীয়ভাবে মূল্য সংযোজিত। অর্থাত্ রপ্তানি আয় যা হচ্ছে তার প্রায় পুরোটাই দেশে থাকছে। সম্ভাবনাময় এই চামড়া খাতের জন্য সুখবর নেই। গেল অর্থবছরে (২০১৭-১৮) আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৪ কোটি ডলার কমে রপ্তানি আয় হয়েছে ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। যদিও ২০২১ সাল নাগাদ এ খাত থেকে ৫শ কোটি ডলার রপ্তানির আয়ের লক্ষ্য আছে।

রপ্তানিতে মন্দার পাশাপাশি নানা অজুহাতে চামড়ার দাম গেল বছরের চেয়ে কম নির্ধারণ করা হয়েছে। অবস্থা এমন যে গত কয়েক বছরের হিসেব দেখলে মনে হবে, চামড়া দামহীন পণ্য হয়ে পড়েছে। ২০১৩ সালে যেখানে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর মূল্য ছিল সর্বোচ্চ ৯০ টাকা, এবারে তা ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাঁচ বছরে চামড়ার দাম কমেছে গড়ে ৪০ টাকা বা ৫৫ শতাংশ। দেশে যেখানে সব কিছুর দাম বাড়ে সেখানে চামড়ার দাম কেন বাড়ে না? এই প্রশ্নের জবাবে ট্যানারি মালিক ও রপ্তানিকারকদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়ার পাশাপাশি কেমিক্যালের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাইলেও চামড়ার দাম বাড়ানো যাচ্ছে না।

প্রাথমিক পর্যায়ে চামড়া সংরক্ষণ করতে লবণের প্রয়োজন হয়। একটি মাঝারিমানের গরু থেকে গড়ে ২০ বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এই চামড়া সংরক্ষণে পাঁচ থেকে ছয় কেজি লবণ লাগে। ২০১৩ সালে যেখানে প্রতি বস্তা ( ৭৫ কেজি) লবণের দাম ছিল ৬০০ টাকা গেল বছর সেটি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকায়। এছাড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণ পরবর্তী ধাপে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে যেসব কেমিক্যালের প্রয়োজন পড়ে সেগুলোর দামও পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় চামড়ার দাম বাড়ানো যাচ্ছে না বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

তবে স্থানীয়ভাবে চামড়া সংগ্রহ ও মজুদকারী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ট্যানারি মালিকরা একজোট হয়ে চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। বাজার যাচাই না করে সরকারকে তারা বাধ্য করছে নিজেদের পছন্দমত দাম নির্ধারণে। এই অভিযোগের কিছুটা সত্যতা পাওয়া গেছে। চলতি বছরের জন্য ট্যারিফ কমিশন লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৬০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ১০ টাকা কমিয়ে ৫০ টাকা নির্ধারণ করে। গেল বছর আন্তর্জাতিক বাজারে ‘এ’ গ্রেডের প্রতি বর্গফুট ফিনিসড চামড়ার দাম ছিল দুই থেকে তিন ডলার বা ১৬০ থেকে ২৪০ টাকা। চামড়া কেনা থেকে ফিনিসড বা ক্রাস্ট পর্যায়ে প্রতি বর্গফুটে সর্বোচ্চ খরচ পড়ে ১০০ টাকা। তারপরও চামড়ার দাম না বাড়ার পিছনে যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

গরুর চামড়ার দাম কিছুটা পেলেও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ খাসি ও বকরির চামড়ার দামই পাওয়া যায় না। গরুর চামড়ার সাথে অনেকটা বিনা পয়সাতেই খাসি ও বকরির চামড়া দিয়ে দিতে হয়। অন্যদিকে মহিষের চামড়ার দামতো নির্ধারণই হচ্ছে না কয়েক বছর। প্রতি বছর ঈদুল-আজহার সময়ই সিংহভাগ চামড়া সংগ্রহ হয়ে থাকে। দাম নির্ধারণ করে না দেওয়ায় চামড়া সংগ্রহে বড় ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায়, ২০১৩ সাল থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম বেঁধে দিচ্ছে। তবে অভিযোগ আছে মাঠ পর্যায়ে এই দামও মানা হয় না। এক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে চামড়া সংগ্রহকারী, আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা একে অপরকে দোষারোপ করে থাকেন।

চামড়ার ধরন (লবণ যুক্ত) দাম (প্রতি বর্গফুট/টাকা)

২০১৮ ২০১৭ ২০১৬ ২০১৫ ২০১৪ ২০১৩

ঢাকার গরু ৪৫-৫০ ৫০-৫৫ ৫০ ৫০-৫৫ ৭০-৭৫ ৮৫-৯০

ঢাকার বাইরের গরু ৩৫-৪০ ৪০-৪৫ ৪০ ৪০-৪৫ ৬০-৬৫ ৭৫-৮০

খাসি ১৮-২০ ২০-২২ ২০ ২০-২২ ৩০-৩৫ ৫০-৫৫

বকরি ১৩-১৫ ১৫-১৭ ১৫ ১৫-১৭ ২৫-৩০ ৪০-৪৫

মহিষ অনির্ধারিত অনির্ধারিত ২৫ ৩০-৩৫ অনির্ধারিত ৪০-৪৫