অনেকেই বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে ওঠেন। এর অংশ হিসেবে সবার আগে মনোযোগ দেন পরিমিত খাবার গ্রহণের অভ্যাসের প্রতি। এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষ অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে শুরু করেন। এই খাদ্য সচেতনতা মানতে গিয়ে অনেককেই খাবারের তালিকা থেকে প্রিয় খাবারগুলো বাদ দিতে বাধ্য হন। তবে চর্বিযুক্ত খাবারে যাদের কড়াকড়ি রয়েছে তাদের জন্য সুখবর নিয়ে এসেছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক জানিয়েছেন, অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করলেও দেহে মেদ জমবে না, এমন ওষুধ তৈরির পথে রয়েছেন তারা।
ঐ গবেষক দলের ভাষ্য, বিশেষ এক ধরনের ওষুধের মাধ্যমে মানবদেহে এই বৈশিষ্ট্য অর্জিত হতে পারে। গবেষণা দলের প্রধান ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান এরিখম্যান জানান, খুব সহজেই এই ধরনের ওষুধ আবিষ্কার করা সম্ভব। এরিখম্যান বলেন, আমার যতটুকু জানতে পারি, চর্বি পাকস্থলীতে জমা হয়। রসবাহী ধমনী (লিম্ফ্যাটিক ভেসেল), যেগুলোকে ল্যাকটিওস বলা হয়, এর মাধ্যমে চর্বি জমা হয় পাকস্থলীতে। চর্বি উপাদানগুলো ছিদ্রের মাধ্যমে সহজেই ল্যাকটিওসের ভেতরে প্রবেশ করে। এই ছিদ্রগুলোকে বলা হয় ‘বাটন’।
ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা কিছু ইঁদুরের ওপর একটি পরীক্ষা চালান গবেষকরা। ইঁদুরগুলোর দেহে অবস্থিত ল্যাকটিওসে ঐ ‘বাটন’ বা ছিদ্রগুলো ছিল না যার ফলে ছিদ্রের মাধ্যমে ইঁদুরের দেহে চর্বি প্রবেশ করার বা জমার কোনো সুযোগ ছিল না। তিনি বলেন, দুইটি জিন পরিবর্তন করে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে এই ইঁদুরগুলোকে। আমাদের তৈরি করা ইঁদুরগুলোর দেহের ল্যাকটিওসে ঐ ছিদ্রগুলো নেই। কাজেই উচ্চমাত্রায় চর্বিযুক্ত খাবার খেলেও ইঁদুরগুলোর ওজন খুব একটা বাড়েনি। গবেষকরা দেখতে চেয়েছিলেন ওষুধের সাহায্যে প্রাণীর দেহে ওজন কমানোর গুণাগুণ অর্জন করা সম্ভব কিনা। এমন একটি ওষুধ যা ল্যাকটিওসের ছিদ্রগুলো বন্ধ করে এবং চর্বি শোষণ থেকে বিরত রাখে। আমাদের ধারণা, এই ধরনের ওষুধ ওজন কমানো এবং মানবদেহে স্থূলতার বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে গ্লুকোমা রোগীদের জন্য এই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জাপান ও চীনেও বিশেষ ক্ষেত্রে ডাক্তাররা এ ধরনের ওষুধের বিধান দিয়ে থাকে। তবে ওজন কমানোর জন্য মানুষের দেহে কার্যকরিভাবে ব্যবহারের আগে কি পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত এবং এর পরিণাম কি হতে পারে সে বিষয়ে সুষ্ঠু যাচাই-বাছাই প্রয়োজন। একইসাথে এর ব্যবহারে কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন।
এরিখম্যান বলেন, নতুন কোনো ওষুধ তৈরি করে বাজারজাত করতে ১২ থেকে ১৫ বছর লেগে যায়। এক্ষেত্রে যেহেতু আগে থেকে ওষুধ রয়েছে সেটিকে মানবদেহে ব্যবহারের জন্য উপযোগী হিসেবে তৈরি করা যায় কিনা সে বিষয়ে কাজ করার কথা ভাবছি আমরা।-বিবিসি।