ঝালকাঠি জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় এক সময় বেত ঝাড় (বাগান) ছিলো অনেক। বেত দিয়ে বিভিন্ন সৌখিন সামগ্রী তৈরি করা হয়। সেই বেতের চাহিদা মেটাতে বেত ব্যবসায়ীরা গ্রাম-গঞ্জে পদচারণা করতো। নৌকাই ছিলো এদের বাহন। নৌকায় করে প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরে বেত সংগ্রহ করাই ছিলো তাদের কাজ। বেত কিনে বাগানেই বেতের উপরের কাঁটাযুক্ত খোসা ছাড়িয়ে নৌকায় নিয়ে জমা করতো। সুযোগ বুঝে ফাঁকা মাঠে রোদে শুকিয়ে বেতের শৌখিন ফার্নিচার তৈরি ও বেতের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির কারখানায় মণ হিসেবে বিক্রি করতো। কিন্তু এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেই ধরনের বেত না থাকায় গ্রামাঞ্চলে ঘুরে ঘুরে বেত ক্রেতারা অন্য পেশায় গিয়ে জীবিকা অর্জন করছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বেত একপ্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি বাংলাদেশ, ভুটান, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত, জাভা ও সুমাত্রা অঞ্চলের উদ্ভিদ। বেত ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের ভেজা ও জংলা নিচুভূমিতে ভালো জন্মে। এটি বর্তমানে আবাসন সংকটের জন্য বিপন্ন প্রজাতি। বেতগাছ সাধারণত গ্রামের রাস্তার পাশে, বসতবাড়ির পেছনে, পতিত জমিতে ও বনে কিছুটা আর্দ্র জায়গায় জন্মে। কিছুদিনের মধ্যেই বেত ঘন হয়ে ঝাড়েও পরিণত হয়। বেতগাছ জঙ্গলাকীর্ণ কাঁটাঝোপ আকারে দেখা যায়। বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ছাড়াও হাওরের কান্দাতে বেতগাছ জন্মে। চিরসবুজ এই উদ্ভিদটি পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ৪৫ থেকে ৫৫ ফুট এবং কখনো কখনো তার চেয়েও বেশি লম্বা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ছয় প্রজাতির বেতফল পাওয়া যায়। এদের কা- দেখতে চিকন, লম্বা, কাঁটাময় ও খুবই শক্ত এবং শাখাহীন। সরু ও নলাকার কা- প্রস্থে সাধারণত ৫-১৫ মিলিমিটার। প্রতিটি কা-ের আগা থেকে নতুন পাতা বের হয় ও বেড়ে ওঠে। কা- বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর নিচের অংশ পোক্ত হতে থাকে। কোনো ধারককে ধরে রাখার জন্য কাঁটাযুক্ত ধারক লতা বের হয়। বেতে ফুল ধরার আগে গাছ থেকে একধরনের মিষ্টি ঘ্রাণ আসে। তখন মৌমাছি, পিঁপড়া, মাছি এই রস খেতে বেতগাছে ভিড়ও জমায়। বেতগাছের ফলকে বেতফল, বেত্তুন, বেথুন, বেথুল, বেতগুলা, বেত্তুইন ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। এই ফল গোলাকার বা একটু লম্বাটে গোলাকার, ছোট ও কষযুক্ত টকমিষ্টি। এর খোসা শক্ত হলেও ভেতরটা নরম। বীজ শক্ত। কাঁচা ফল সবুজ ও পাকলে সবুজাভ ঘিয়ে বা সাদা রঙের হয়। এটি থোকায় থোকায় ফলে। প্রতি থোকায় ২০০টি পর্যন্ত ফল হয়। বেতগাছে ফুল আসে অক্টোবর মাসে আর ফল পাকে মার্চ-এপ্রিল মাসে। এটি অপ্রচলিত ফল হলেও অনেকের কাছে খুবই প্রিয়। শুকনো বেত দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্প জাতীয় জিনিসপত্র তৈরি করা হয়, যেমন- চেয়ার, টেবিল, মোড়া, ডালা, কুলা, চাঙ্গারি, মুড়া, ঢুষি, হাতপাখা, চালোন, টোকা, গোলা, ডোল, ডুলা, আউডি, চাঁচ, ধামা, পাতি, বই রাখার তাক, সোফা, দোলনা, খাট, ঝুড়ি, টেবিলল্যাম্প, ল্যাম্পশেড ইত্যাদি। এটি গৃহনির্মাণ কাজেও ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে রেস্তোরাঁ, ঘর বা অফিসের শৌখিন পার্টিশন হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়া লম্বা বেত ফালা করে বিভিন্ন জিনিস বাঁধার কাজেও ব্যবহার করা হয়। ফলের জন্য বেতের চাষ করা হয় না; বেতের প্রধান ব্যবহার হস্তশিল্প সামগ্রী তৈরির কাঁচামাল হিসেবে। তবে ফল খেতে সুস্বাদু ও অনেকেরই প্রিয়। ঝালকাঠি সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. জিয়াউল ইসলাম বাকলাই জানান, পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বেত চাষের জন্য বন বিভাগের বরাদ্দ থাকলেও ঝালকাঠির জন্য কোনো বরাদ্দ আসে না। এছাড়া ফলদ, বনজ এবং ঔষধি গাছের চারা পর্যাপ্ত বরাদ্দ আছে। বেত চাষের জন্য বরাদ্দ পেলে বেতকে আরও সম্প্রসারিত করা যেত।
- প্রচ্ছদ
- »
- অর্থ ও বাণিজ্য
- »
- ঝালকাঠিতে বেত বাগান দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে