বিএনপি কখনও ছাড়তে পারব না: নাজমুল হুদা

বিএনপির প্রতি আজীবন অনুগত থাকার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া দলটির সাবেক নেতা ও বর্তমানে তৃণমূল বিএনপি নামে গড়ে তোলা দলের প্রধান নাজমুল হুদা।

বলেছেন, ‘আমি এখনও বিএনপি ছাড়তে পারিনি, পারব না।’ এমনও বলেছেন, ‘আমার সম্ভব না এখন আওয়ামী লীগে যোগদান করা।’
বৃহস্পতিবার বেসরকারি চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের মুক্তবাক ‘ভোট ও জোট’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন সাবেক বিএনপি নেতা।

নাজমুল হুদা তার বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের তথ্যমন্ত্রী, ২০০১ সালের যোগাযোগমন্ত্রী। এক সময় আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচক। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বহু বেফাঁস কথার হোতা।

বেঁফাস কথা নাজমুল হুদা বলেছেন বিএনপি এবং তার দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়েও। আর এর কারণেই বহিষ্কার, দলে ফিরিয়ে নেয়া, আবার বহিষ্কার, নতুন দল গঠন, নিজ দল থেকে বহিষ্কার আর আবার নতুন দল গঠন তার। সেই দলের নামেও আবার বিএনপি আছে। সঙ্গে যোগ করেছেন তৃণমূল শব্দটি।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বুধবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নাজমুল হুদা। লক্ষ্য, ক্ষমতাসীন জোট ১৪ দলের অংশীদার হবেন। সঙ্গে নিয়ে এসছিলেন নামসর্বস্ব নয়টি দল।

আলোচনায় প্রশ্ন উঠে, বিএনপি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন, ছিলেন, প্রভাবশালী নেতা। এখন কেন কট্টর সমালোচক।

জবাব আসে, ‘আমি মনে করি বিএনপির এখন ভুল পথে চলছে। আমাদের স্বপ্ন ছিল বিএনপি একটি নির্বাচিত নেতৃত্বের অধীনে জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। সেই শক্তির ভিত্তি হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িকতার।’

‘সেখানে আমি নিজে হ্যাপি না। সেখান থেকে অনেক মত বিরোধ তৈরি হয়েছে। তাই ওই নেতৃত্বের অধীনে আমার পক্ষে বিএনপি করা দুরূহ ছিল।’

বিএনপির প্রতি আনুগত্যে কখনও ঘাটতি হবে না, জানিয়ে নাজমুল হুদা বলেন, ‘বিএনপির কমিটমেন্টের মধ্যে দিয়ে আমি আছি সেটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আমি দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে এবং দলের স্থায়ী কমিটি, ওই দল থেকে এমপি হওয়া, মন্ত্রী হওয়া সব বিএনপি থেকে হয়েছে। বিএনপির প্রতি আমার প্রতি আমার কমিটমেন্ট খুবই দৃঢ় এবং অতি গভীর; এর থেকে বেরিয়ে আসার আমার কোন ইচ্ছেও নেই আসতেও চাই না। সেই প্রত্যয় নিয়ে আমি রাজনীতিতে আসিনি।’

‘তবে আওয়ামী লীগ আমার অপছন্দের দল তা কিন্তু না। আওয়ামী লীগ অত্যান্ত শক্তিশালী ও প্রাচীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের যে ভিত্তি তা গণতন্ত্র সুসংগঠিত করার জন্য বিরাট বড় শক্তি। তার ভেতরে আরও একটা বিরাট শক্তি থাকা উচিত যা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেবে। এভাবে আমি বিএনপিকে দেখার চেষ্টার করেছি।’

নাজমুল হুদা বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া, কেন্দ্র কমিটির পদ নিয়ে বাণিজ্য করা, রাজনৈতিক বিরোধ তৈরি, বিভিন্ন সময় ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা- এগুলো আমি কখনও স্বপ্নে ভাবিনি।’

কোনগুলো বিএনপির আপনি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল?- উপস্থাপকের এমন প্রশ্নে জবাব আসে, ‘নির্বাচনে না আসা (২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন)। আপনি একটি রাজনৈতিক দল যে সংগঠিত হয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ক্ষমতাগ্রহণ যাওয়ার প্রক্রিয়ায় আপনি যুক্ত থাকবেন। হারজিত সেটা জনগনের ইচ্ছা। নির্বাচনে কারচুপি থাকতে পারে তার মানে তো নির্বাচন বর্জন করা না। এসব কারণে আমি ওই দল ছেড়েছি।’

ভোলা থেকে একজন দর্শক নামজুল হুদাকে প্রশ্ন করেন, ১৪ দলে যোগ দেয়াব বাসনা মন্ত্রিত্ব পাওয়ার লোভে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিত্বের লোভ তো আমার নেই। এমপি হয়ে ২০টি বছর, মন্ত্রী হয়ে কাটিয়েছি ১০টি বছর। যতবার মন্ত্রী, এমপি হয়েছি দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছি এবং কাজ করেছি। ভবিষ্যতে যদি মন্ত্রী হবার কোন সুযোগ থাকে হব, সেটা কাজ করার জন্যই।’

‘লোভ লালসার জন্য আমি কোন দল গঠন করি নাই। দেশে স্থিতিশীল রাজনীতিকে স্থায়ী করার জন্য দল করেছি। দেশের মানুষ শান্তি চাই। হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও এই প্রজন্মের মানুষ চাই না। এসব বন্ধে যদি ১৪ দলের গিয়ে বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে সাহায্য করতে পারি সেই উদ্দেশ্যে আছে আমাদের।’

‘জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে’

আরেকজন দর্শক বলেন করেন, ‘বিএনপিতে থাকাকালে আপনি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলতেন, এখন বঙ্গবন্ধুকে বলছেন।

জবাবে নাজমুল হুদা বলেন, ‘তিনি (জিয়াউর রহমান) যদি স্বাধীনতার কথা বলেই থাকেন, একটা অনিবার্য রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে দিয়ে তাকে সেই দায়িত্ব করেছেন। তিনি কোন দিন জাতির জনক হবেন বা জাতির অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করবেন সে উদ্দেশ্যে নিয়ে তিনি সেই ঘোষণা দেননি।’

‘তিনি (জিয়া) বঙ্গবন্ধুর পক্ষে এই স্বাধীনতার ডাকটা দিয়েছিলেন। তাই ষোষণটা আমার মনে হয় জিয়াউর রহমান সাহেবই দিয়েছিলেন তার পক্ষে, সেটার মধ্যে কোন… প্রশ্ন আছে কি না আমি মনে করি না। এখন যে যার মতো নেবে এটা স্বাভাবিক।’

‘আমি মনে করি ৭ মার্চের যে ভাষণ সেই ভাষণ শুধু চেতনাই ছিল না, সব মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্ধুদ্ধ করেছিল। আর এই ভাষণ কাজ করেছ স্বাধীনতার চেতনা হিসেবে। যথার্থভাবেই আমরা তাকে জাতির পিতা হিসেবে গ্রহণ করেছি।’

‘১৪ দলের সঙ্গে আলোচনা নির্বাচনী সমঝোতায়’

ক্ষমতাসীন জোটে যোগ দিনে আগ্রহ প্রকাশ করে আলোচনা চালিয়ে গেলেও এই অনুষ্ঠানে নাজমুল হুদা এক পর্যায়ে দাবি করেন, জোটে যোগ দিতে চান না তিনি। চান আসনভিত্তিক সমঝোতা।

‘আমরা আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলে যোগ দিচ্ছি সেটা ঠিক না। আমরা সেপারেট নির্বাচনী জোট গঠন করতে চাই, সেই জোট সরকারের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আসন বন্টনে তাদের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা রাখি। সেই আসনের ভিত্তিতে সংসদের যাওয়ার আশা রাখি।’

‘সেখানে আমাদের যারা যোগ্য প্রার্থী আছে তাদেরকে আওয়ামী লীগের যেখানে যোগ্য প্রার্থী নেই বা বিএনপি অধ্যষিত এলাকা সেখানে আমরা আমাদের সুযোগ্য প্রার্থী দেব।’