সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের সময় ‘উপস্থিত থাকা’ রংপুরের কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবুল মিয়াকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে রংপুর মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ।
বুধবার বিকালে এ দাবিতে পুলিশের রংপুর বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ডিআইজি বছির আহাম্মেদের কাছে স্বারকলিপি দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন।
নেতাদের অভিযোগ, ওসি বাবুল এক এগারের সময় শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাবুল আর আর বর্তমানে তিনি বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগ সভাপতিকে গ্রেপ্তারের সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওসি বাবুল মিয়াকে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ছবিতে। এই ছবি গত কয়েকদিন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে ওঠে। এতে তোলপাড় শুরু হয় বিভিন্ন মহলে। সর্বশেষ বুধবার দুপুরে আন্দোলনে নামে জেলা ও নগর আওয়ামী লীগ।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, ওসি বাবুল মিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের সময় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার বাড়ি রংপুরে। সজীব ওয়াজেদ এর বাড়ি রংপুরে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী রংপুরের। সুতরাং তাকে গ্রেপ্তারের নেতৃত্বদানকারি ওসি রংপুরে থাকতে পারে না।’
‘গত বছরের শেষ সময়ে যোগদানের পর থেকেই নতুন বিতর্কেও জন্ম দিয়েছেন তিনি। জামায়াত শিবিরের সাথে সখ্যতা তুলে ধরেছেন।’
রংপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকের মধ্যে ওসি বাবুল হোসেনকে রংপুর থেকে প্রত্যাহার করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ডিআইজি। আমরা এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই । অন্যথায় কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানান।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত ডিআইজি বছির আহাম্মেদ সাংবাদিকদের জানান, ‘আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বেশ কয়েকটি ছবি তার কাছে প্রদান করেছেন। এ ছাড়াও বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কথা বলেছেন। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় আমরা তদন্ত করে প্রমাণ পেলে আজকেই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’
ওসি বাবুল যা বলছেন
অবশ্য ওসি বাবুল ফেসবুকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তিনি লেখেন, শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের সময় তার উপস্থিতির ছবিটি সত্য হলেও যে ভাষায় স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে তা আদৌ সত্য তথ্যনির্ভর নয়।
ওসি বাবুল লেখেন, তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেহরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৭ সালেও ঢাকা কোর্টে তাঁর নিরাপত্তায় তিনি নিয়োজিত ছিলেন।
২০০১ সালে বাবা, চাচা, ভাইকে জামায়াত নেতার মামলায় আসামি করার বিষয়টিও উল্লেখ করেন বাবুল। লেখেন, ‘আমার বড় ভাই ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং বর্তমানে ছোট ভাই ছাত্রলীগের থানা সেক্রেটারি। ২০১১ সালে এই সরকার আমাকে পদোন্নতি দিয়ে উত্তরা এবং সবুজবাগ থানায় ওসি হিসেবে পদায়ন করে।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জনাব তোফায়েল আহাম্মেদ, উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী,পংকজ দেবনাথ, সাহারা খাতুন, সানজিদা খানম, কামরুল ইসলাম সাবের হোসেন চৌধুরী, শেখ হেলাল উদ্দিন ব্যক্তিগতভাবে চেনেন বলেও জানান ওসি বাবুল। বলেন, ‘বর্তমানে রংপুরে সততা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছি। বর্তমানে রংপুরের আইনশৃঙ্খলা পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে ভালো।’
‘কিছু অসাধু ব্যক্তি গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে মুলাটোলে ডাকাতি করিয়ে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছিল। এ বিষয়ে আমি কর্তৃপক্ষ বরাবর রিপোর্ট দিয়েছি। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে অবিরাম কাজ করছি।’
‘বিভ্রান্তমূলক পোস্টে’ বিভ্রান্ত হয়ে ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ মন্তব্য না করারও অনুরোধ করেন ওসি বাবুল। বলেন, কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে মিথ্যা বানোয়াট, পোস্ট প্রকাশ করলে আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া বিকল্প থাকবে না।
ওসি বাবুলের এই স্ট্যাটাসকে আবার ফেসবুকে ওসি বাবুলকে নিয়ে ছবি শেয়ারকারীরা হুমকি হিসেবে দেখছেন। ওসির এই পোস্টের পর কেউ কেউ তাদের ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট মুছে দিয়েছেন।