লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের শহরাঞ্চলে কাঁকড়া-বিছার প্রকোপ হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। এদের দংশনে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা । গত চার বছরে আগের চেয়ে মৃত্যু হয়েছে দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষের।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় শহরের পরিবেশে নিজেদের অভিযোজিত করে নিয়েছে সেখানকার কাঁকড়াবিছা। আর শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় বিপুল পরিমাণ তেলাপোকা থাকায় তাদের খাদ্য সরবরাহেও কোনও সমস্যা হচ্ছে না। লোকালয়ে কাঁকড়াবিছার এমন বিস্তারে বাড়ছে তাদের দংশনে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা।
কাঁকড়াবিছার দংশনে প্রাণ হারানোদের বেশিরভাগই শিশু। বিষক্রিয়ার চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্রাজিলে সব শহরে নেই।
২০১৩ সালে ৭০ জনের মৃত্যু হলেও ২০১৭ সালে এসে তা ১৮৪ জনে উন্নীত হয়েছে। কাঁকড়াবিছার দংশনের শিকার হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের সংখ্যা ২০০৭ সালে ছিল ৩৭ হাজার জন। ২০১৭ সালে এসে এ সংখ্যা এক লাখ ২৬ হাজার জনে উন্নীত হয়েছে।
গত সপ্তাহে ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে চার বছরের একটি শিশু কাঁকড়াবিছার দংশনের শিকার হয়। তার নাম ইয়াসমিন ডি কাম্পোস। দংশনের শিকার হওয়ার পর তাকে ১০ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও সেখানে বিষের কোনও ওষুধ ছিলনা।
দংশনের শিকার হওয়ার ৩ ঘণ্টা পরে অন্য একটি হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। কাঁকড়াবিছার দংশনের শিকার ইয়াসমিন মৃত্যু কোলে ঢলে পড়ে।
ওই ঘটনার পর ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষক্রিয়ার চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ওষুধ হাসপাতালগুলোতে সরবরাহের জন্য উদ্যোগী হয়েছে।
ব্রাজিলে চার প্রজাতির বিপদজনক কাঁকড়াবিছার দেখা পাওয়া যায়। এদের মধ্যে হলুদ রঙের যেগুলো, তারাই বেশি প্রাণঘাতী হিসেবে চিহ্নিত। এদের আদি আবাসস্থল সাভানাতে। কিন্তু নগরায়নের প্রভাবে এখন শহরের নালা ও ময়লা ফেলার স্থানে এদের বাস গড়ে উঠেছে।
বেরতানি জানিয়েছেন, ‘এরা দীর্ঘদিন না খেয়ে থাকতে পারে।’প্রাদেশিক সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বুতানতান ইন্সটিটিউটের গবেষক ও কাঁকড়াবিছা বিশেষজ্ঞ রোজারিও বেরতানি জানিয়েছেন, ‘বনাঞ্চল ধ্বংস করে শহর গড়ে তোলায় আবাসস্থল হারিয়েছে কাঁকড়াবিছারা।’ আর সেকারণেই শহরে গড়ে উঠছে তাদের নতুন উপনিবেশ।