একজন দক্ষ তদারককারী ছাড়া বৃহত্তর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কঠিন। এ ক্ষেত্রে আপনার সুপারভাইজারের সহযোগিতা নিতে পারেন। প্রতিদিনের ওয়ার্কপ্লানেও একই ব্যাপার থাকে। আপনার কোনো কাজ যদি সহকর্মী বা সুপারভাইজারের কোনো সম্পৃক্ততা থাকে, তাহলে সতর্ক থাকুন
পরিকল্পনার গুরুত্ব সবাই বুঝি; কিন্তু করি না। করলেও হয়তো এক দিনের। তাও নিয়মিত নয়। গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত পরিকল্পনা করে এগোনো উচিত। নইলে হোঁচট খাবেন। আশানুরূপ ফলাফল পাওয়ার জন্য সুন্দর ও বস্তুনিষ্ঠ পরিকল্পনার কোনো বিকল্প নেই। অফিসের কাজ গোছালো ও সমন্বিত করতে প্রতিদিনের ওয়ার্কপ্লান করুন। জেনে নিন দশটি পরামর্শ :
এক.
প্রতিদিনের পরিকল্পনা করার আগে একটি সাপ্তাহিক পরিকল্পনা থাকা চাই। এই সাপ্তাহিক পরিকল্পনাটি একটি মাসিক বা বার্ষিক পরিকল্পনার অংশ হবে। ছোট পরিকল্পনাগুলো বিচ্ছিন্ন না হয়ে বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হবে। তখনই বড় লক্ষ্য অর্জন সক্ষম।
দুই.
অফিসে ঢুকে নিজের ডেস্কে বসেই পরিকল্পনা শুরু করবেন না। পরিকল্পনা একটু নির্ঝঞ্ঝাট সময় দাবি করে। তাই একটু বিশ্রাম নিয়ে ভাবুন। সুপারভাইজারের কাছ থেকে ওই দিনের কাজের দায়িত্বভার বুঝে নিন। এবার চায়ের কাপটি হাতে নিয়ে তারপর দিনের পরিকল্পনা শুরু করুন।
তিন.
কাজগুলোকে ‘কত গুরুত্বপূর্ণ’ এবং ‘কত দ্রুত শেষ করতে হবে’ এ দুটি বিষয়ের ভিত্তিতে মোট চার ভাগে সাজান।
ক. এই ভাগে অতিগুরুত্বপূর্ণ এবং অতি দ্রুত করতে হবে—এমন কাজগুলোকে সাজান।
খ. এই ভাগে অতি গুরুত্বপূর্ণ না কিন্তু অতি দ্রুত শেষ করতে হবে—এমন কাজগুলো রাখুন।
গ. এখানে রাখুন অতি গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু দ্রুত না করলেও চলবে—এমন কাজগুলোকে।
ঘ. এই ভাগে রাখুন অতি গুরুত্বপূর্ণ নয় এবং অতিদ্রুত করতে হবে না—এমন কাজ। এবার ধারাবাহিকভাবে ক্রমান্বয়ে কাজগুলো করতে শুরু করুন।
চার.
প্রত্যেকটি কাজ শেষ করার জন্য সময় নির্ধারণ করুন। পরিকল্পনাটাও সময় নিয়ে করুন। শুরুতে পরিকল্পনা করতে আপনার বেশি সময় লাগতে পারে। মনে হতে পারে, পরিকল্পনা করতে করতেই দিন শেষ হয়ে গেল। কিন্তু ধৈর্য হারাবেন না। যাঁরা জীবনে পরিকল্পনা করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাঁদের অধিকাংশই ব্যর্থ হয়েছেন।
যাঁরা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁরা তিন কারণে ব্যর্থ হয়েছেন—একাগ্রতা, অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতার অভাব। অতএব দৈনিক ওয়ার্কপ্লান করার সময় এ বাধাগুলো মাথায় রাখুন।
পাঁচ.
সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারলে আগ্রহ হারাবেন না। পরবর্তী কাজ থেকে সময় বাঁচিয়ে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করুন। খেয়াল রাখবেন, একটি ব্যর্থ কাজ পরপর অনেকগুলো কাজের ওপর আপনার উত্সাহ ও একাগ্রতাকে নষ্ট করে দেবে।
ছয়.
পরিকল্পনা করা শেষ হলে বাস্তবায়ন শুরু করার আগে আপনার সুপারভাইজারকে একবার দেখিয়ে নিন। পরিস্থিতি সাপেক্ষে সুপারভাইজার না থাকলে উপযুক্ত সহকর্মীকেও দেখিয়ে নিতে পারেন।
সাত.
পরিকল্পনা করা কঠিন কাজ। অনেকের এই ধৈর্য থাকে না। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন না। আর কাজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে না পারলে পরিকল্পনা অর্থহীন।
আট.
একান্তই ব্যক্তিগত গণ্ডি ছাড়া অধিকাংশ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন একার ওপর নির্ভর করে না। আরো অনেক বিষয় ও ব্যক্তি যুক্ত থাকে। একজন দক্ষ তদারককারী ছাড়া বৃহত্তর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কঠিন। এ ক্ষেত্রে আপনার সুপারভাইজারের সহযোগিতা নিতে পারেন। প্রতিদিনের ওয়ার্কপ্লানেও একই ব্যাপার থাকে। আপনার কোনো কাজ যদি সহকর্মী বা সুপারভাইজারের কোনো সম্পৃক্ততা থাকে, তাহলে সতর্ক থাকুন। অন্যদের গাফিলতি বা সমন্বয়হীনতায় আপনার পরিকল্পনা ব্যাহত হতে পারে।
নয়.
পরিকল্পনা করা একটি অভ্যাস। যাঁরা কাজ শুরুর আগে নিয়মিত পরিকল্পনা করতে অভ্যস্ত, তাঁরা অপরিকল্পিত কাজ পছন্দ করেন না। এই অভ্যাস একসময় আরো দ্রুত থেকে দ্রুততর সময়ে পরিকল্পনা শেষ করতে সাহায্য করে। একসময় দেখবেন, পরিকল্পনা করার জন্য সময় লাগছে না, মাথায় তৈরি হয়েই আছে। শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন ছাড়া পরিকল্পনার এই ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়ন কঠিন।
দশ.
পরিকল্পনা করা মানেই কাজ শেষ নয়। প্রতিনিয়ত নজরদারিও করতে হয়। সব ঠিকঠাক সময়মতো হচ্ছে কি না। না হলেই দ্রুত পরিকল্পনা পরিবর্তন করুন। এতে সুফল পাবেন, নয়তো বড় ধাক্কা খাবেন।