সামিরা রহমান একজন চাকুরিজীবি নারী। তার মেয়ে মুনিরা ৪ বছরের শিশু। সামিরা তার মেয়েকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। ফলে মুনিরা নিজেকে একা মনে করে।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে তার মা অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে। তখন তার মন খারাপ হয়ে যায়। সে চায় তার মা সারাক্ষণ তার কাছে থাকুক। মায়ের অনুপস্থিতি তাকে বিষণ্ণ করে তোলে। মা না থাকলে তার কিছুই ভাল লাগে না। সে যদিও তার দাদীর কাছে থাকে। তারপরও মায়ের জন্য তার মন খারাপ লাগে। দিন শেষে যখন মা ঘরে ফিরে তখন মুনিরা অনেক খুশি হয়। তার ভিতর এক ধরনের আবেগ কাজ করে। সে তার মায়ের সংস্পর্শ পেয়ে আনন্দে আটখানা হয়ে যায়। উপরের গল্পটি থেকে বুঝা যায় যে, শিশু মাকে তার আনন্দের উত্স বলে মনে করে। মায়ের উপস্থিতি শিশুকে নিরাপত্তা বোধ দেয়। মনোবিজ্ঞানে একে মায়ের প্রতি শিশুর আসক্তি বলা হয়েছে।
মনোবিজ্ঞানী এরিক্সন এর মতে, অতি শৈশবকালে মায়ের স্নেহ, মমতা, যত্ন শিশুর মধ্যে মৌলিক আস্থা স্থাপন করে। মা ও শিশুর মধ্যে অন্তঃরঙ্গ সম্পর্কবিনিময় এর কারণে শিশু মায়ের প্রতি আসক্ত হয়। এ সময় মায়ের অনুপস্থিতি বা অবহেলা শিশুকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ঐসব শিশুর মধ্যে পরবর্তীকালে অনেক ধরনের ধনহড়ত্সধষরঃরবং দেখা দেয়। তারা আশেপাশের মানুষদের অবিশ্বাস করতে শুরম্ন করে এবং তাদের কোনো রকম শারীরিক রোগ দেখা না দিলেও তাদের দৈহিক বৃদ্ধি ও উত্সাহ, উদ্দীপনার অভাব দেখা যায় যাকে “Failure to Thrive Syndrome ” বলে। এ ধরনের সমস্যার কারণে বেশিরভাগ শিশুদের মধ্যে অনাস্থা, ক্ষুধামান্দ্য ও অনিদ্রা দেখা যায়। ফলে তাদের দেহে growth hormone এর activity কমে যায়। মায়ের সাথে শিশুর অন্তঃরঙ্গ সম্পর্ক ও নিবিড় সান্নিধ্য লাভের মধ্য দিয়ে শিশুর আত্মবোধ বিকাশের সূচনা হয়। মা যখন শিশুকে কোলে নেয়, কথা বলে, আদর করে, তখন শিশু প্রতিক্রিয়াশীল হয় এবং মাকে দেখে খুশি হয়, মায়ের সান্নিধ্য কামনা করে।
মূলতঃ মায়ের প্রতি শিশুর এক ভিন্নধর্মী টান থাকে। মায়ের ভালোবাসার অভাবে, তার যত্নের অভাবে অনেক শিশুই বিপথে পা বাড়ায় পরিণত বয়সে। তাই একটি শিশু মায়ের গর্ভে থাকার সময় থেকেই মায়ের মানসিক দিকের প্রতি যত্ন নিতে হবে। তাই প্রত্যেক মায়ের উচিত তার সন্তানকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় দেয়া, তাকে শিষ্টাচার, ভালো -মন্দ, ধর্মীয় রীতি ইত্যাদি সুষ্ঠুভাবে শেখানো। এ কাজগুলো ছোট অবস্থা থেকেই তাকে আদর ও স্নেহের মাধ্যমে শেখাতে হবে। মায়ের কোমল স্নেহ, ছোট্ট শিশুর মনে অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। তাই বাচ্চাদের সঠিক ও পরিপূর্ণ মেধা বিকাশে মায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
মায়ের ভালোবাসা ই পারে সকল শিশুর জীবনকে আলোকিত করতে। মা হচ্ছে চিরন্তন সত্যের মতো। মায়ের সচেতনতা আর অকৃত্রিম ভালোবাসাই পারে একটি শিশুকে একজন পরিপূর্ণ নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। পরিশেষে এটাই বলা যায়, মায়ের স্নেহ ও ভালোবাসা শিশুর বিকাশে অকল্পনীয় ভূমিকা পালন করে।