আপনি জানেন কি – বাংলাদেশে একজন শ্রমিক মাসে সর্বোচ্চ কত টাকা মজুরি পান?
অবাক হলেও বাস্তবতা এই, ১৬,০০০ টাকা। আর এটি জাহাজ ভাঙ্গা পেশায়। মূল মজুরি ছাড়াও এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত, খাদ্য বা রেশন ভাতাও অন্তর্ভুক্ত।
চলতি বছরেই এই মজুরি নির্ধারণ করে নিম্নতম মজুরি বোর্ড।
এছাড়া, বাকি ৪১টি শ্রমশিল্পের মধ্যে টাইপ ফাউন্ড্রি-এর একজন শ্রমিক-এর মাসিক মজুরি সর্বনিম্ন ৫২১ টাকা। আর পেট্রোল পাম্প-এর একজন শ্রমিক বা কর্মচারীর ন্যূনতম মজুরী ৭৯২ টাকা।
তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি পুনঃনির্ধারণে বিভিন্ন পক্ষকে নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। কিছুদিন আগে বোর্ড গঠনের পর সোমবার তাদের একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে শ্রমিক ও মালিক পক্ষ মজুরী বিষয়ে তাদের প্রস্তাবনা দেয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশে সম্প্রতি গার্মেন্টস ও পোশাক শিল্প কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে অনেক কথাবার্তা, দাবিদাওয়া উঠলেও বাকি পেশার শ্রমিকরা আলোচনায় নেই বললেই চলে।
নিচে দেখে নিন কোন শিল্প শ্রমের শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরী কত।
মজুরী বোর্ডের উপাত্ত অনুযায়ী, ন্যূনতম মজুরির দিকে থেকে এগিয়ে আছে ট্যানারি (১২,৮০০ টাকা), নির্মাণ ও কাঠ (প্রায় ১০,০০০ টাকা), ফার্মাসিউটিক্যাল (৮০৫০ টাকা), ওয়েল মিলস এন্ড ভেজিটেবল প্রোডাক্টস (৭,৪২০ টাকা) এবং স মিলস (৬,৮৫০ টাকা)।
অপরদিকে, টাইপ ফাউন্ড্রি ও পেট্রোল পাম্প ছাড়া, ন্যূনতম মজুরীর দিকে পিছিয়ে থাকা শ্রম খাতগুলো হলো: অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ (১৯৩০ টাকা), টি গার্ডেন (১৯৭৮ টাকা), বেকারি, বিস্কুট ও কনফেকশনারী (২৪৩২ টাকা), সিনেমা হল (২৬১০ টাকা) এবং কৃষি ও গৃহ ছাড়া ব্যক্তিমালিকানাধীন শিল্পকারখানা (৩০০০ টাকা)।
তবে নিম্নতম মজুরি বোর্ডে “গার্মেন্টস”, “গ্লাস এন্ড সিলিকেট”, “অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ”,”বেকারি, বিস্কুট ও কনফেকশনারী”, “এলুমিনিয়াম এন্ড এনামেল” এবং “সিকিউরিটি সার্ভিস” – এ ছয়টি শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকদের জন্য নিম্নতম মজুরী হারের সুপারিশ প্রণয়নের কাজ চলছে বলে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”আমার মূলত যে বিষয়গুলো বিবেচনা করি, তার মধ্যে রয়েছে শ্রমিকদের জীবনযাপনের ব্যয়, জীবনযাপনের মান, প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন খরচ, উৎপাদনশীলতা এবং দ্রব্যের মূল্য, মূল্যস্ফীতি এগুলো দেখা হয়। এর সঙ্গে কাজের ধরণ অর্থাৎ সেই কাজে ঝুঁকি কতটা আছে এবং মালিক পক্ষের কতটা সামর্থ্য আছে, সেগুলোও বিবেচনায় নেয়া হয়।”
সেই সঙ্গে দেশের আর্থিক-সামাজিক অবস্থা এবং অন্যান্য দেশে এ ধরণের পেশা কি ধরণের মজুরী দেয়া হয়, সেগুলোও পর্যালোচনা করে থাকে মজুরী বোর্ড।
পরিসংখ্যান ব্যুরো, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উৎস থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কখনো কখনো মালিকপক্ষ এবং শ্রমিক পক্ষও তাদের বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করে।
ন্যূনতম মজুরী বিষয়ে কোন পৃথক আইন আছে?
বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়। এই আইনে বলা আছে, কিভাবে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন হবে, কিভাবে কাজ করবে, কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় নেবে এবং কতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করবে, সবই সেখানে বলা হয়েছে।
তবে কোন পেশার মজুরির ক্ষেত্রে নিম্নতম মজুরি বোর্ড নিজেরা উদ্যোগ নিতে পারে না। এ বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে তাদের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানোর পর এই মজুরি বোর্ড কাজ শুরু করে এবং তাদের পর্যালোচনা শেষে সুপারিশ প্রদান করে।
সেখানে কোন পেশায় কত মজুরি হতে পারে, সেটি নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। একেক পেশার সঙ্গে আরেক পেশার যে নিম্নতম মজুরির হারের বড় পার্থক্য দেখা যায়, তার কারণ কি?
নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলছেন, ‘পার্থক্যের মূল কারণ ওই খাতে শ্রমিকের চাহিদা কতো, সেটার ওপর নির্ভর করে। যেমন জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে শ্রমিকদের অনেক চাহিদা, সেখানে কাজগুলোও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সে কারণে তাদের নিম্নতম মজুরির হারও বেশি, সেখানে কেউ অল্প টাকায় কাজ করতে চায় না।”
তিনি জানান, স্থানীয়ভাবে বা নিজের বাড়িতে থেকেই যেসব খাত কাজ করা যায়, সেসব খাতে অনেক সময় শ্রমিকদের মজুরি কম হয়ে থাকে।
কত দিন পর পর পুনর্বিবেচনা করা হয়?
বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ বছর পর পর নিম্নতম মজুরি পুনর্বিবেচনা করার বিধান রয়েছে। তবে মজুরী বোর্ড নিজেরা এটি করতে পারে না। শ্রম মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে বোর্ডের কাছে অনুরোধ জানানোর পর নিম্নতম মজুরী বোর্ড কাজ শুরু করে।
ফলে কোন কোন খাতে যেমন পাঁচবছর পরে পুনরায় পর্যালোচনা করা হয়, কোনো কোনো খাতে তিন বছর পরে হয়ে থাকে, আবার কোন কোন খাতে দীর্ঘসময় ধরে কোনো পর্যালোচনা হয় না।