বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা রাখা এবং লেনদেন নিরাপদ মনে করলেও হঠাৎ করে দেশের বৃহৎ এ মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানির কাণ্ডজ্ঞানহীন নতুন নিয়মে হতবাক এবং ক্ষুদ্ধ গ্রাহকরা। বিকাশ কর্তৃপক্ষের কোনো প্রকার প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই হঠাৎ নেয়া সিদ্ধান্তে একাধিক আইডি বন্ধ করে দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জয়পুরহাটের অসংখ্য গ্রাহক।
গ্রাহকরা অভিযোগ করে জানান, এক সময় একটি মাত্র জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলা যেত। কিন্ত হঠাৎ করেই বিকাশ কর্তৃপক্ষ শুধু অধিক সচল অ্যাকাউন্টটি রেখে বাকি অ্যাকাউন্টগুলো নোটিশ ছাড়াই টাকা থাকা অবস্থায় বন্ধ করে দিয়েছে। এতে গ্রাহকরা বন্ধ হওয়া অ্যাকাউন্টে থাকা আর টাকা তুলতে পারছেন না।
বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার ২ থেকে ৩ বছর পর হালনাগাদের কথা বলে হঠাৎ করেই গ্রাহকদের এসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইতিপূর্বে বিকাশের অ্যাকাউন্ট থেকে দিনে ২৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা তোলা যেত। বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধাও ছিল। কিন্তু সেই সুযোগ-সুবিধাগুলো বন্ধ করে এখন মাত্র দিনে ১০ হাজার টাকার উপর তোলা যায় না এবং মাসে ১০ বারের উপর টাকা উত্তোলন করা যায় না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এসব বিষয়ে বিকাশের অভিযোগ সেন্টারের ১৬২৪৭ নম্বরে কল করলে স্বাভাবিক মোবাইল অপারেটরের চেয়ে অধিক পরিমাণ টাকা কেটে নেয়ারও অভিযোগ করেছেন অনেক গ্রাহক।
জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার বড় তারা ইউনিয়নের পাঠানপাড়া গ্রামের সালেমা বেগমের বিকাশ অ্যাকাউন্টে ২ হাজার টাকা তার এক আত্মীয় পাঠায়। টাকা আসার পর টাকা তুলতে গেলে পিন নম্বর ভুল দেয়ার কারণে তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উঠবে না বলে স্থানীয় বিকাশ এজেন্ট থেকে জানিয়ে দেয়া হয়।
শহরের প্রফেসরপাড়ার তিতাস মোস্তফার একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে দুটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। হঠাৎ করে তার দুটি একাউন্টই বন্ধ করে দেয়া হয়। এই রকমভাবে অনেকেই বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে জানা যায়।
এদিকে এজেন্ট অ্যাকাউন্ট গ্রাহক সূত্রে জানা যায়, জয়পুরহাট সদর রোডের পৃথিবী কমপ্লেক্সের পাশে একতা বিপনী স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোকাররম হোসেন দেড় বছর আগে মুদি দোকানের পাশাপাশি বিকাশের এজেন্ট নেন। গত ৭ জুন প্রায় ২০ হাজার টাকা অ্যাকাউন্টে থাকা অবস্থায় হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে বিকাশ অফিসে গেলে তারা হালনাগাদ কাগজপত্র দেয়ার কথা বলেন। কাগজপত্র দেয়ার পরও এখনও পর্যন্ত অ্যাকাউন্টটি খুলে দেয়া হয়নি। তারপর আবারও অফিসে যোগাযোগ করা হলে নতুন সিম ও কাগজপত্র দিতে বলে।
জয়পুরহাট সদর থানার সামনে এস ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী শাহীন আলম প্রায় দুই বছর আগে বিকাশ এর এজেন্ট নেন। আড়াই মাস আগে কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা অ্যাকাউন্টে থাকাবস্থায় বন্ধ করে দেয়া হয়। অফিসে যোগাযোগ করা হলে নাম ভুল আছে বলে দুই দফায় তার কাছ থেকে স্মার্ট কার্ড ও ট্রেড লাইসেন্সের কাগজ নেয়া হয়। সর্বশেষ তাকে নতুন সিম ও নতুন করে একই কাগজপত্র দিতে বলা হয়।
সাহেবপাড়া মোড় এলাকার এজেন্ট শারমিন স্টোরের স্বত্বাধিকারী রাজু আহম্মেদ বিকাশের এজেন্ট নেন। সেই সময় তারও জাতীয় পরিচয়পত্র ও ট্রেড লাইসেন্স নেয়া হয়। হঠাৎ করে তিনমাস আগে বিকাশের অফিস থেকে মোবাইল করে তার ট্রেড লাইসেন্সে নাম ভুল আছে বলে তাকে জানানো হয় এবং ওই দিনই তা সংশোধন করে দিতে বলা হয়। দুই-তিন দিন পর সংশোধিত ট্রেড লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার পরও ৭২৮ টাকা অ্যাকাউন্টে রেখে বন্ধ করে দেয়া হয়।
যোগাযোগ করা হলে জয়পুরহাটের বিকাশের আঞ্চলিক অফিসার সুব্রত কুমার দাস এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারবেন না বলে জানান এবং বিকাশের মিডিয়া কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার জন্য নম্বর দিতে চেয়ে আর তিনি তা দেননি।
সূত্র: জাগো নিউজ