নাক থেকে রক্ত পড়া বন্ধের ৯টি জাদুকরি উপায়

আমাদের মুখের নরম অঙ্গ হচ্ছে নাক। আর এই নাক থেকে রক্ত পড়ার দৃশ্য খুব ভয়াবহ একটি বিষয়। এই সমস্যাকে মূলত নোস ব্লিডিং বলা হয়। নোস ব্লিডিং দুই প্রকার-ইন্টেরিয়র ও পোস্টারিয়র ব্লিডিং। সামনের অংশে কোনও রক্ত জালক ছিঁড়ে গেলে সেখানে ইন্টেরিয়র ব্লিডিং হয়। অন্য দিকে, গলার কাছের অংশের রক্ত জালক ছিঁড়ে গেলে পোস্টারিয়র ব্লিডিং হয়। কোনও ক্ষেত্রে এই ব্লিডিং অন্তত ২০মিনিট পর্যন্ত চলতে পারে। ঘরোয়া উপায় ইন্টেরিয়র ব্লিডিং বন্ধ করা গেলেও পোস্টারিয়র ব্লিডিং বন্ধ করবার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন। চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগে অন্তত রক্ত বন্ধ করতে পারেন কিছু ঘরোয়া উপায়ে-

নোস ব্লিডিং কি কারণে হয়
আমাদের নাকের ভিতরের অংশ ক্ষুদ্র রক্ত জালকে পূর্ণ হওয়ার কারণে এটি আমাদের দেহের অন্যতম স্পর্শকাতর অংশ। এই রক্তজালকে কোনও রকম আঁচ লাগলেই নোস ব্লিডিং শুরু হয়ে যায়। নীচে কয়েকটি নোস ব্লিডিং এর কারণ উল্লেখ করা হল-

কারণ : গরম, তপ্ত ইনডোর এয়ার, শুষ্ক, গরম আবহাওয়া, শ্বাসযন্ত্রের ইনফেকশন, জোরে নাক টানা বা নাক ঝাড়া, নাকে বা মুখে আঘাত পাওয়া, এলার্জি রিএকশন, প্রচুর পরিমাণে নাকের স্প্রে ব্যবহার, বাহ্যিক কোনও বস্তু নাকে প্রবেশ করানো, রক্তাল্পতা, রাসায়নিক উত্তেজকের প্রভাব।

যে জাদুকরি ৯টি উপায়ে নোস ব্লিডিং বন্ধ করবেন-

১) কোল্ড কম্প্রেস
নোস ব্লিডিং বন্ধ করার একটি কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে কোল্ড কম্প্রেস। নাকের ওপর কোল্ড কম্প্রেস কিছুক্ষণ চেপে রাখলে নাকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।

২) নাক চেপে রাখা
বুড়ো আঙুল আর অনামিকার সাহায্যে নাকের নরম অংশ দশ মিনিট চেপে ধরলে সেপ্টামের উপর রক্তের চাপ পড়ে। ফলে খুব তাড়াতাড়ি রক্ত বন্ধ হয়ে যায়। তবে সেই সময় অবশ্যই মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া চালু রাখবেন। ধীরে ধীরে চাপ দেওয়া ছাড়বেন আর অন্তত পাঁচ মিনিট শান্ত হয়ে বসবেন। রক্ত পড়া বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এই পদ্ধতি বার বার করবেন।

৩) ভিটামিন কে

ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন কলা, পালং শাক, সর্ষে শাক, ব্রোকলি, বাঁধাকপি শরীরে কলিজেন উৎপন্ন করে যা নাকের ভিতরের অংশকে আদ্র রাখতে সাহায্য করে। দীর্ঘদিনের সুস্থতার জন্য ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাবার খান। সবুজ শাক সবজি রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।

৪) ভিটামিন সি
প্রতিদিন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদগ্রহণের ফলে রক্ত জালকগুলো মজবুত হয় ফলে সহজে ছিঁড়ে যেতে পারে না। ফলে নাক থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।

৫) আপেল সিডার ভিনিগার
রক্ত জালকগুলো মজবুত করতে সক্ষম হওয়ায় এটি একটি অত্যন্ত উৎকৃষ্ট ঘরোয়া উপায়। এর জন্য আপনাকে সামান্য তুলো এই ভিনিগারে ভিজিয়ে নাকের ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় কমপক্ষে দশ মিনিটের জন্য রাখতে হবে। এটি তাৎক্ষণিক কাজ শুরু করে।

৬) স্যালাইন পানি
শীতকালে নাকের ভিতরের শুষ্ক ভাব নোস ব্লিডিং এর অন্যতম প্রধান কারণ। স্যালাইন পানি এই সমস্যা দূর করতে পারে। নাকের ভিতরের অংশের আদ্রতা ফিরিয়ে আনতে, একটা বাটিতে কিছুটা স্যালাইন জল ভালো করে মিশিয়ে নাকের মধ্যে কয়েক ফোঁটা রাখুন।

৭) গোলমরিচ গুঁড়ো
এটি উদ্দীপকে কাজ করায় রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম, ফলে আহত স্থানের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতে পারে। নোস ব্লিডিং শুরু হলেই এক চা চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো জলে মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারলে অতি দ্রুত রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।

৮) বিছুটি পাতা
বিছুটি পাতা একটি প্রাকৃতিক হাইমোস্তাটিক উপাদান। বিছুটির রস নাকের রক্ত পড়া বন্ধ করতে সক্ষম। বিছুটি পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে, তার মধ্যে তুলো ভিজিয়ে নাকে দশ মিনিট লাগালে নোস ব্লিডিং বন্ধ হয়ে যায়।

৯) পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি
পানির ঘাটতির জন্য নাকের ভিতরের মিউকাস পর্দা শুকিয়ে যায়, যার ফলে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু হয়। তাই সারাদিন প্রচুর পান পান করা প্রয়োজন।